স্বদেশ ডেস্ক : রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) পদে পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়ার পর সুপারিশমালা তৈরি করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামালের কাছে তা পাঠানো হবে।
এর পর চূড়ান্ত করা হবে নীতিমালাটি। আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দিয়ে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হতো। এবারই প্রথম পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ডিএমডি পদে পদোন্নতির জন্য সাক্ষাৎকার নিতে তালিকাভুক্তদের গত ২৫ এপ্রিল একটি চিঠিও দিয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল আওয়াল।
চিঠিতে বলা হয়-রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতির জন্য তালিকাভুক্তদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা ছিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের। পরবর্তী সময়ে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ জন্য চিঠি ইস্যু করেও সাক্ষাৎকার গ্রহণ থেকে বিরত থাকে বাছাই কমিটি। পরবর্তীকালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শুধু জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই ডিএমডি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে না। দেখা হবে ব্যাংকিং বিষয়ে উদ্ভাবনী ক্ষমতা, যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্বের গুণাবলি, পেশাগত প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান, সততা ও গ্র্রহণযোগ্যতা।
এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ দেওয়া হবে ডিএমডি পদে। এ জন্য মহাব্যবস্থাপকদের এসিআর (গোপনীয় অনুবেদন) ও বিভিন্নভাবে খোঁজখবর নিয়ে সার্বিক যোগ্যতার ওপর একটি নম্বর দেওয়া হবে। বিভিন্ন যোগ্যতার মোট নম্বর হবে ১০০। তবে নীতিমালা প্রকাশের আগেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এমন সিদ্ধান্তে ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা মাহাব্যবস্থাপকরা (জিএম)। তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক নিয়োগে কোনো পরীক্ষা নেওয়া হয় না। অথচ আমাদের শেষ বয়সে এসে এ ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক আমাদের সময়কে বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই পদোন্নতি দেওয়া হবে। এতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ব্যাংকিং খাতে ডিজিটালাইজেশন হয়েছে। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনও বাড়ছে। সে বিষয়ে ব্যাংকের ডিএমডিদের ধারণা থাকতে হবে। তবে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়নি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়ার পরই তা চূড়ান্ত করা হবে।’ বর্তমানে ব্যাংক খাতে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা ছয়টি। সর্বশেষ প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। এর বাইরেও বিশেষায়িত ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক পদ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদই পদোন্নতি দেয়। যদিও ডিএমডি পদে পদোন্নতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো শুধু সুপারিশ করে থাকে। জানা গেছে, আট পদে ডিএমডি নিয়োগ দিতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে পদোন্নতিযোগ্য মহাব্যবস্থাপকদের তালিকা চায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। পরে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের আলোকে ৩০ মহাব্যবস্থাপকের প্রাথমিক তালিকা করা হয়। অতীতে এ পদে নিয়োগের বেলায় কর্মকর্তাদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও জ্যেষ্ঠতা দেখা হতো।
পাশাপাশি কর্মদক্ষতাকে বিবেচনা করা হতো। এবার ডিএমডি পদে নিয়োগ দিতে তৈরি করা বাছাই কমিটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাছাই কমিটিতে অর্থমন্ত্রী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর রয়েছেন। তবে অতীতে সাক্ষাৎকার নেওয়ার কোনো নজির না থাকায় তা নিয়ে সমালোচনা ওঠে।