মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ১২:০১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
কাল ঢাকায় আসছেন ডোনাল্ড লু, যা বলছে প্রধান দুই দল ঢাকা মহানগর পুলিশের এক সহকারী কমিশনার বদলি বিএসএফের পোশাকে সীমান্তে মাদকের কারবার করতেন রেন্টু কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে এমভি আবদুল্লাহ ভারতে চতুর্থ দফা লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ ও কাশ্মিরে কেমন ভোট হলো বিভাজন থেকে বেরিয়ে এসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করা উচিত : মির্জা ফখরুল মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা বেআইনি : হাইকোর্ট আমার পুরো ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছিল : মনোজ মানবদেহে প্রথম ব্রেইনচিপ ইমপ্লান্টে ধাক্কা খেলো নিউরালিংক ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ অধ্যাপক গ্রেপ্তার
সালাম হৃদ্যতার সেতুবন্ধন

সালাম হৃদ্যতার সেতুবন্ধন

মাওলানা দৌলত আলী খান:
ইসলামি বিধানে মুসলমানরা পরস্পর সাক্ষাৎকালে সালাম দেওয়ার কথা রয়েছে। এটা মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নত। আর এ সালামের মাধ্যমে মুসলমানদের মাঝে পারস্পরিক শান্তি, রহমত ও বরকত কামনা করা হয়। সাধারণত প্রত্যেক ধর্মের অভিবাদনবাক্য ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমনÑ হিন্দু সম্প্রদায় নমস্কার, ইউরোপ-আমেরিকাসহ ইংরেজ জাতি গুড মর্নিং, গুড আফটার নুন ও গুড নাইট ইত্যাদি ব্যবহার করে। আর মুসলিম জাতিরও সুনির্দিষ্ট একটি অভিবাদনবাক্য রয়েছে। তা হলো ইসলামি সালামÑ ‘আসসালামুআলাইকুম’। আবার এর সঙ্গে ‘ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’ও যোগ করা যেতে পারে। এ সালামের ফজিলত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসের অসংখ্য বাণী রয়েছে। সালামের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট হয়। দুঃখী ও চিন্তিত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। সালাম প্রদানে দাম্ভিকতা বিদূরিত হয়। আর এর ফলে বান্দার অন্তরে বিনয় সৃষ্টি হয়। ইসলামি অভিবাদনÑ সালাম হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি পবিত্র সোপান। তাই পরিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থানসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সালামের আদান-প্রদান চালু রাখা উচিত।
কোরআনে সালামের নির্দেশ : ইসলাম হলো ভালোবাসা ও হৃদ্যতার ধর্ম। সেই ভালোবাসা ও হৃদ্যতার সেতুবন্ধনে ইসলামি শরিয়তের বিধানাবলির মধ্যে সালাম হলো অন্যতম। সালাম প্রদানে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ, সৌম্য ও মৈত্রী সৃষ্টি হয়। পবিত্র কোরআনে সালাম প্রদান ও সালামের উত্তর উভয়টিকে বরকতময় বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, তোমাদের যখন সালাম বা অভিবাদন করা হয় তখন তোমরা তার জবাব আরও উত্তম ভাষায় দাও। নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নিসা : ৮৬)
সালাম মোমিনদের পবিত্র অধিকার : মুসলমানদের মাঝে পারস্পরিক বহু অধিকার রয়েছে। এ অধিকারগুলোর বাস্তবায়নে মোমিনদের পারস্পরিক আন্তরিকতা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। একে-অপরের নৈকট্য সহজে লাভ হয়। হাদিসের মধ্যে মুসলমানদের পারস্পরিক ছয়টি হক বা অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এ অধিকারগুলোর মধ্যে সালাম অন্যতম। তাই মুসলমানদের উচিত সাক্ষাৎকালে সালাম বিনিময় করা। সালামের মাধ্যমে পরস্পরের শান্তি ও রহমত কামনা করা। শান্তির সমাজ বিনির্মাণে ইসলামি সালামের বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, এক মোমিনের অপর মোমিনের ওপর ছয়টি হক রয়েছে, ১. যখন সে অসুস্থ হয় তার সেবা করা। ২. যখন মৃত্যুবরণ করে তার জানাজা ও দাফন-কাফনে উপস্থিত থাকা। ৩. যখন সে দাওয়াত দেয় তার দাওয়াত কবুল করা। ৪. যখন দেখা হয় সালাম করা। ৫. যখন হাঁচি দেয় তার উত্তর দেওয়া। ৬. উপস্থিত-অনুপস্থিত সব মোমিনের মঙ্গল কামনা করা। (নাসাঈ : ১৯৫০)।
গৃহবাসীদের সালাম করা সুন্নত : আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে গৃহে বসবাস করি। এ বসবাস সুখময় ও শান্তিময় হওয়ার জন্য পরিবারের মাঝে সালাম প্রচলন করা সুন্নত। সালামের মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধন অটুট হয়। মানবগৃহ চির শান্তির আবাসস্থলে পরিণত হয়। এছাড়াও গৃহে আল্লাহর রহমত ও বরকত নাজিল হয়। তাই মুসলিম উম্মাহর উচিত যেকোনো গৃহে প্রবেশকালে বা বের হওয়ার সময় গৃহবাসীদের সালাম করা। এতে গৃহে অবস্থানরত জিন ও ফেরেশতাও সালাম পেতে পারে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, যখন তোমরা কোনো গৃহে প্রবেশ করবে, গৃহবাসীকে সালাম করবে। আর যখন গৃহ থেকে বের হবে, তখন গৃহবাসীকে সালাম দিয়ে বিদায় গ্রহণ করবে। (বায়হাকি)।
আরও বলেন, হে প্রিয় বৎস! যখন তুমি আপন পরিবার-পরিজনের কাছে যাবে তখন সালাম করবে। এ সালাম তোমার ও তোমার গৃহবাসীদের জন্য বরকতের উপায় হবে। (তিরমিজি : ২৯১৫)।
আগে সালাম পরে কথা : ইসলামি বিধান মতে সাক্ষাৎকালে মুসলিম উম্মাহর জন্য পরস্পরকে সালাম করা সুন্নত। তবে এ সালাম কথা বলার আগেই দেওয়া উচিত। কারণ, সালামের আগে কথা শুরু করা ঠিক নয়। তাই সাক্ষাৎকালে আগে সালাম করবে, অতঃপর কথা বলবে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, সালাম করতে হবে কথাবার্তা বলার আগেই। (তিরমিজি : ২৯১৬)।
সালাম হলো রাস্তার হক : ইসলামে প্রত্যেক জিনিসের পৃথক পৃথক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। ইসলামি সালামও মুসলিম উম্মাহর জন্য পথচলার একটি পবিত্র অধিকার। পথে বা রাস্তায় চলার সময় ছোট-বড় সবাইকে সালাম করা। যদি মুসলমানরা এ অধিকার বাস্তবায়নে সচেতন হন তাহলে সভ্য ও আদর্শ সমাজ গঠন হবে। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা ও আন্তরিকতা সৃষ্টি হবে। চলার পথে হৃদ্যতা সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সালাম। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা রাস্তার ওপর বসা থেকে বিরত থাক। অতঃপর সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের তো রাস্তার ওপর বসা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। কেননা, আমরা তথায় বসে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সমাধা করি। তখন রাসুল (সা.) বলেন, যদি তোমরা বসতে বাধ্য হও, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। সাহাবারা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! রাস্তার হক কি! রাসুল (সা.) বললেন, ১. চক্ষু অবনত রাখা (নিষিদ্ধ বস্তুর দিকে না তাকানো)। ২. কাউকে কষ্ট না দেওয়া। ৩. সালামের উত্তর দেওয়া। ৪. উত্তম কাজের আদেশ করা। ৫. অশ্লীল কাজ থেকে নিষেধ করা। (বোখারি : ৬৩০১; মুসলিম : ৫৬৮৫)।
সালাম করার নিয়ম : ইসলামি বিধানাবলি আমলের ক্ষেত্রে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের সঙ্গে পার্থক্য বজায় রেখে আমল করতে হবে। কারণ, ইসলামের অনেক বিষয়ে রাসুল (সা.) সরাসরি কাফেরদের বিরোধিতা করেছেন। যেমনÑ ইহুদিরা আশুরার রোজা একটি রাখে কিন্তু মুসলমানদের দুটি রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। একইভাবে সালামের ক্ষেত্রেও ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের সাদৃৃশ্য অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তারা হাত ও আঙুলের ইশারায় সালাম করে। এছাড়াও অনেককে হাত জোড় করে, কোমর বা মাথা ঝুঁকিয়ে সালাম করতে দেখা যায়। সালামের এসব পদ্ধতি ইসলামি শরিয়তের পরিপন্থি। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ সালাম করার সময় হাত ও আঙুল ওঠানোসহ উল্লেখিত পন্থাগুলোর কোনো একটি অবলম্বন করবে না, বরং হাত না তুলে সালাম করবে। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তোমাদের ছাড়া অন্য জাতির সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে সে আমাদের দলের নয়। তোমরা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের সঙ্গে সাদৃশ্য কর না। কেননা, ইহুদিরা আঙুলের ইশারায় সালাম করে আর খ্রিষ্টানরা হাতের তালুর দিয়ে সালাম করে। (তিরমিজি : ২৯১১)।
সালাম পারস্পরিক হৃদ্যতা বৃদ্ধির অনন্য উপায় : সালামের মাধ্যমে মোমিনদের পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। সালাম মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে। উদ্বিগ্ন মনকে পুলকিত করতে পারে। সালাম মানবজাতির হৃদ্যতার প্রতীক। তাই মুসলিম উম্মাহর উচিত সালামের প্রচলন বেশি পরিমাণে করা। সাক্ষাতে একে অপরকে সালাম করা। ইসলামি অভিবাদন সালামই হচ্ছে পারস্পরিক ভালোবাসা ও হৃদ্যতা বৃদ্ধির অনন্য উপায়। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা ঈমান গ্রহণ করবে। আর ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমান গ্রহণ হবে না, যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন কথা বলে দিব, যার ওপর আমল করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে? তোমরা সালামের খুব প্রচলন কর। (মুসলিম : ২০৩)।
আরও বলেন, যখন তোমাদের কেউ তার মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তখন তার কর্তব্য হলোÑ তাকে সালাম করা। আর যদি তাদের উভয়ের মধ্যখানে বৃক্ষ, দেয়াল বা কোনো পাথরের আড়াল পড়ে যায় অতঃপর পুনরায় সাক্ষাৎ হয় তবে আবার যেন সালাম করে। (আবু দাউদ : ৫২০২)।
প্রথমে সালাম প্রদানকারী ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয় : ইসলামের প্রতিটি আমলের পৃথক পৃথক বিশেষায়িত রয়েছে। সালামেরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আর তা হলো পরস্পরে সাক্ষাৎকালে প্রথমে সালাম প্রদানকারী আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়। কিন্তু আমাদের সমাজে অনেককে দেখা যায়Ñ অপরের সালামের অপেক্ষায় মুখের দিখে তাকিয়ে থাকে। তারা মনে করে আগে সালাম প্রদানে মানহানি হয়। অথচ নবীজি (সা.) সাহাবাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে নিজেই প্রথমে সালাম দিতেন। প্রথমে সালাম করার মধ্যে বিনয়ী ও ভদ্রতা নিহিত রয়েছে। এছাড়াও আগে সালাম করার মাধ্যমে স্বীয় আত্ম অহংকার লোপ পায়। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, আগে সালাম প্রদানকারী অহংকার থেকে মুক্ত। (বায়হাকি)।
রাসুল আরও বলেন, সেই ব্যক্তিই আল্লাহ তায়ালার অধিক নিকটবর্তী যে প্রথমে সালাম করে। (আবু দাউদ : ৫১৯৯)।
সালামে কার্পণ্যকারী ব্যক্তি অধিক কৃপণ : সালামের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ পরস্পরের শান্তি, বরকত ও রহমত কামনা করে। এটা হলো পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ প্রকাশের ইসলামি তরিকা। সালাম প্রদানে কোনো রকম কার্পণ্য করা যাবে না। এ কার্পণ্যতা সঙ্কীর্ণ মনের পরিচায়ক। কেননা, হাদিসের ভাষায় সালামে কার্পণ্যকারীকে অধিক কৃপণ বলা হয়েছে। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, সেই ব্যক্তিই অধিক কৃপণ যে সালাম দিতে কার্পণ্য করে। (আহমদ; বায়হাকি)।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877