সাধারণ প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কোন বিরল ঘটনা। আর বিলুপ্ত হয়ে যাবার কথা মনে হলেই চোখের সামনে ডাইনোসরের চেহারা ভেসে ওঠে। কিন্তু আমাদের অজান্তেই আমাদের চারপাশের অনেক প্রাণী হারিয়ে যাচ্ছে। প্রাণীবৈচিত্র রক্ষায় কাজ করা বেসরকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের এক হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ডব্লিউডব্লিউএফএন অবশ্য বলছে প্রকৃতিতে এখন কত প্রজাতির প্রাণী বেঁচে আছে এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই মানুষের। যেকারণে ঠিক কত প্রানী বিলুপ্ত হচ্ছে সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট হিসাবে দেয়া কঠিন।
আসছে ৩০শে নভেম্বর বিশ্বব্যাপী হারিয়ে যাওয়া বা বিলুপ্ত প্রাণীদের স্মরণ করা হবে। তার আগে চলুন পরিচিত হই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া যেসব প্রাণী আবার ফিরে এসেছে তাদের কয়েক প্রজাতির সঙ্গে:
মিস ওয়াল্ড্রন’স রেড কোলোবাস (ঘানা ও আইভরি কোস্ট): এই লাল মাথা ওয়ালা বানর বিলুপ্ত হয়েছে ২০০০ সালের দিকে। ঘানা আর আইভরি কোস্ট সীমান্তে এদের বাস। মিস ওয়াল্ড্রন’স রেড কোলোবাসের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর কোন বুড়ো আঙুল নেই। সাধারণত: ঘন জঙ্গলে দল বেধে বাস করতো এই প্রাণী, যে কারণে জঙ্গলের আকার কমে আসার সাথে সাথে এদের সংখ্যাও কমে যেতে শুরু করেছিল। আর সেই সঙ্গে তাদের প্রজনন ক্ষমতা ও বংশবৃদ্ধির সাধারণ প্যাটার্ন অন্যদের চাইতে ধীর হবার কারণে তারা এক সময় বিলীন হয়ে গিয়েছিল।
ইয়াংজি রিভার ডলফিন (চীন): ২০০৬ সালে এই ডলফিনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ইয়াংজি নদীর এই ডলফিন দেখতে ফ্যাকাসে ও ছাইরঙা, অন্য ডলফিনদের তুলনায় দেখতে তেমন আকর্ষণীয় নয়। জলজ প্রাণীর অবস্থান সম্পর্কে নিখুঁত ধারণা দিতে পারত এই ডলফিন। চীনের নদীতে মৎসজীবী এবং অন্য ব্যবসায়ীদের নৌকার শব্দ, দূষণ আর খাবারের অভাব বেড়ে যাওয়ায় এদের শান্ত নিরিবিলি জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। এই প্রজাতির ফিরে আসার সম্ভাবনা খুবই কম।
ক্যারিবিয়ান সন্ন্যাসী সীল (জ্যামাইকা ও নিকারাগুয়ার সেরানিলা তীর): ক্যারিবিয়ান অঞ্চলেই বাস করতো এই প্রজাতির সীল। মেক্সিকো উপসাগর, সেন্ট্রাল অ্যামেরিকার পূর্ব উপকূল এবং দক্ষিণ অ্যামেরিকার উত্তর উপকূলে পাওয়া যেতো এই প্রাণী। কিন্তু তাদের শরীরের চর্বি গলিয়ে তেল বানানোর জন্য ক্রমে তারা শিকারিদের হাতে মারা পড়তে শুরু করলো। আর সেই সঙ্গে তাদের খাবারের উৎস যে সামুদ্রিক মাছ তার সংখ্যাও কমে যেতে থাকলো। ১৯৫২ সালে জ্যামাইকা এবং নিকারাগুয়ার সেরানিলা তীরে তাদের সর্বশেষ দেখা গেছে।
অ্যালাবামা পিগটো (যুক্তরাষ্ট্র): ২০০৬ সালের আগে পর্যন্ত এই জাতের ঝিনুক যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামার নদীতে পাওয়া যেত। এর নামকরণের কারণ এটি দেখতে অনেকটাই শূকরের পায়ের মত, সাধারণত নদীর দূষণ ঠেকাতে কার্যকর এই ঝিনুক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দূষণের কারণেই বিলীন হয়ে গেছে তারা। এতে বোঝা যায় সেখানকার পানিতে কতটা বিপজ্জনক মাত্রার রাসায়নিক রয়েছে।
ডোডো (মরিশাস): বিলীন হওয়া পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে নামী পাখি ডোডো।
ডাইনোসরের মতোই বহু আগে এই পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মরিশাসে যখন মানব বসতি ছিল, তখন খাবারের চাহিদা মেটাতে গিয়েই বিলীন হয়েছে উড়তে না পারা এই পাখি। ১৭০০ সালের শেষের দিকে সর্বশেষ এই পাখি দেখা গেছে।
স্টেলারস সি কাউ (আলাস্কা এবং রাশিয়ার মধ্যবর্তী সামুদ্রিক অঞ্চল): এই জাতের সীল আকারে বিশাল ছিল, প্রাপ্তবয়স্ক স্টেলারস সি কাউ নয় মিটার পর্যন্ত লম্বা হত। এর আকৃতি এবং শরীরে চর্বির পরিমানের জন্য শিকারীদের নজর সব সময়ই এদের ওপর ছিল। ১৭ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এদের দেখা গেছে।
কোয়াগা (দক্ষিণ আফ্রিকা): আমস্টারডাম কোয়াগা নিজের সৌন্দর্যের কারণেই বিলীন হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আফ্রিকান এই প্রাণীটির শরীরের প্রথম অংশ জেব্রার মত, কিন্তু এর শরীরের ডোরাকাটা দাগগুলো শরীরের পেছনের অংশে অনেকটাই হালকা হয়ে ঘোড়ার মত হয়ে গেছে। সর্বশেষ আমস্টারডাম কোয়াগাটি ১৮৮৩ সালে এক চিড়িয়াখানায় মারা যায়।
আইরিশ এলক: আইরিশ এলক বা আইরিশ হরিণ সাধারণ এলকের মতই দেখতে ছিল, কিন্তু আকারে ছিল অনেক বড়। উচ্চতায় দুই মিটার লম্বা এবং সাড়ে তিন মিটারের বেশি হত এর শরীরের দৈর্ঘ্য। প্রায় ৭,৭০০ বছর আগে এটি সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল।
সাদা লেজওয়ালা ঈগল (যুক্তরাজ্য): শেষ করা যাক একটি ভালো খবর দিয়ে, যুক্তরাজ্যে বিংশ শতকের শুরুতে প্রায় বিলীন হয়ে যায় সাদা লেজওয়ালা ঈগল। কিন্তু এই দারুণ দেখতে পাখিটি যার ডানার বিস্তৃতি দুই মিটার পর্যন্ত হয়। ব্রিটেনে এটি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও, এখন ইউরোপের অন্য দেশে দেখা যাচ্ছে এই পাখি। কিন্তু এই পাখির মত ভাগ্যবান নয় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অন্য প্রাণীগুলো।