স্বদেশ ডেস্ক:
চলছে রজব মাস। পরম পুণ্যের মাস রমজান নিকটবর্তী হচ্ছে তারই অগ্রিম আগমনী বার্তা দিচ্ছে। হিজরি ক্যালেন্ডারের সপ্তম মাস রজব, তারপর শাবান, এরপরই রমজান। মাঝে শুধু একটি মাস শাবান।
রহমত, বরকতের মাস হলো রমজান। এই মাস শুরু হলেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। মুসলিম মা-বোনরা যারা রেগুলার হিজাব পরে না, তারা হিজাব পরে; যারা নামাজ পড়ে না, তারাও নামাজ পড়া শুরু করে। অর্থাৎ বেশির ভাগ মুসলমান প্র্যাকটিসিং মুসলিম হয়ে যায়। কিন্তু রমজান ছাড়া বাকি মাসগুলোতে অনেকেই উদাসীন!
রমজান থেকে আমরা তো অল্পই দূরে আছি। আমরা কি পারি না প্রস্তুতিটুকু এখন থেকেই শুরু করতে?
আমাদের দেশে বেশির ভাগ মুসলিম হলেও কোরআন পড়তে জানে না এমন হার অনেক বেশি। রমজান আসার জন্য অনেকেই বসে থাকে রমজানে কোরআন শিখবে, কিন্তু এই প্রস্তুতি তো রমজান আসার আগেই গ্রহণ করতে পারি। আর যারা কোরআন পড়তে জানি তারা অল্প অল্প করে হলেও রেগুলার প্র্যাকটিস করতে পারি।
আর আমাদের মুসলিম বোনেরা যারা হিজাব পরে না—এখন শীতকাল, এখন থেকেই রেগুলার হিজাব প্র্যাকটিস করতে পারি। হিজাব মূলত মুসলিম এবং অন্য ধর্মের মানুষদের পৃথক করার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
রজব মাসের তাৎপর্য
হিজরি বর্ষের অন্যান্য মাসের মধ্যে রজব মাস অতি সম্মানিত ও মর্যাদাবান এবং তাৎপর্যবহ ও বরকতময়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই মহান আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা ১২টি। এর মধ্যে চারটি হচ্ছে (যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য নিষিদ্ধ) সম্মানিত। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার কোরো না। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৬)
রজব মাস সম্পর্কে নবী (সা.) থেকে আবু বকর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘বছর হচ্ছে ১২ মাস। এর মধ্যে চার মাস হারাম (নিষিদ্ধ)। চারটির মধ্যে তিনটি ধারাবাহিক : জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও (মুদার গোত্রের) রজব মাস; যে মাসটি জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী।’ (বুখারি-৪৬৬২ ও মুসলিম-১৬৭৯)
নবীজি (সা.) রমজান ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতেন শাবান মাসে, তারপর রজব মাসে। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, রজব মাস এলে আমরা নবীজি (সা.)-এর আমল দেখে তা বুঝতে পারতাম।
অধিক পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করা রজব মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। কোরআন তিলাওয়াত শেখা ও শুদ্ধ করা, নামাজের প্রয়োজনীয় সুরা-কিরাত এবং দোয়া-দরুদ ভালোভাবে জানা অত্যন্ত জরুরি, যাতে রমজানের আমল সঠিকভাবে পালন করা যায়।
ইমাম ইবনু রাজাব (রহ.) বলেছেন, ‘রজব মাস হচ্ছে কল্যাণ ও বরকতময় মাসগুলোর চাবিকাঠি।’
ইমাম আবু বাকর আল বালখী (রহ.) বলেছিলেন, ‘রজব হচ্ছে বীজ বপনের মাস, শাবান মাস হচ্ছে সেই বীজে পানি সিঞ্চনের মাস, আর রমজান হচ্ছে ফসল তোলার মাস।’ (লাতাইফুল মাআরিফ, পৃ.-২১৮)
এই উক্তি থেকেই বোঝা যায় যে রজব মাস থেকেই আমাদের রমজানের জন্য ক্রমান্বয়ে প্রস্ততি নেওয়া শুরু করে দিতে হবে। এর মাঝে আছে :
১) গুনাহ কমানোর প্রয়াস, ২) সময়ের অপচয় রোধ, ৩) বেশি বেশি নেক আমলের প্রয়াস, ৪) সাপ্তাহিক দুটি ও আইয়্যামে বিজের সিয়ামগুলো পালনের মধ্যমে রমজানের অগ্রিম প্রস্তুতি গ্রহণ, ৫) রমজানের ব্যাপারে প্ল্যানিং করা, বিশেষ করে শেষ দশকের ব্যাপারে, ৬) বেশি বেশি তিলাওয়াতের মাধ্যমে রমজানে অধিক পরিমাণে তিলাওয়াতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা, ৭) কয়েক রাকাত করে তাহাজ্জুদ আদায়ের মাধ্যমে নিজেকে রমজানের দীর্ঘ কিয়ামের জন্য প্রস্তুত করে নেওয়া, ৮) বেশি বেশি জিকর করা, ৯) রমজানের প্রয়োজনীয় মাসায়েল জেনে নেওয়া, ১০) আল্লাহ তাআলার কাছেই সময়ের বরকত চাওয়া এবং রমজান পাওয়ার এবং তাকে উত্তমভাবে কাজে লাগানোর কামনা জানিয়ে দোয়া করা। ১১) দান-সদকা করা, পরিমাণে অল্প হলেও এবং ১২) রমজান আসার আগ পর্যন্ত নিম্নোক্ত দোয়া পড়া :
‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দিন। আর আমাদেরকে রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৬৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৪৬)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রজব মাসের তাৎপর্য জেনে এর ওপর আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।