মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫১ অপরাহ্ন

অভিযান চলবে, সংলাপের পথও খোলা থাকবে

অভিযান চলবে, সংলাপের পথও খোলা থাকবে

স্বদেশ ডেস্ক

বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে হামলাকারী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দমনে কঠোর অভিযান চালানো হবে। পাশাপাশি ওই এলাকার জনগণ চাইলে আলোচনা বা শান্তি সংলাপের পথও খোলা রাখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

শনিবার দুপুরে বান্দরবান সার্কিট হাউসে জেলার আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, অভিযান চলবে, তবে বর্তমান সরকার জনগণের নির্বাচিত সরকার। এই অঞ্চলের জনগণ চাইলে শান্তি আলোচনাও অব্যাহত রাখা হবে। সরকার কখনো জনগণের বাইরে নয়।

কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সাম্প্রতিক কয়েকটি হামলা, অপহরণ, ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা অংশ নেন। তাঁরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যাঁর যাঁর মতামত তুলে ধরেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সভায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কোনো ছাড় না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি; সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্লোজসার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রধান যদি দেশের বাইরে থাকে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে এনে আইনের আওতায় আনার বিষয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।

রুদ্ধদ্বার এই সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে যা যা প্রয়োজন, সবকিছু করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারের সংখ্যা বাড়ানো হবে। সীমান্তে বিজিবির তৎপরতা জোরালো করা হবে। সব বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীও সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।

কেএনএফের নাম উল্লেখ না করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমা অত্যন্ত ধৈর্যসহকারে সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দুই দফা বৈঠক হয়েছে। আরেক দফা বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় তারা ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ ও পুলিশ-আনসারের অস্ত্র লুটের মতো জঘন্য অপরাধ করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এই অবস্থায় রাষ্ট্র চুপ থাকতে পারে না। তিনি বলেন, শান্তি আলোচনায় অস্ত্রধারীরা স্বীকৃত অ্যাজেন্ডা হিসেবে কোনো কিছু দেয়নি; বরং আলোচনা থেকে সরে গিয়ে নিজেদের একতরফা স্বার্থ সিদ্ধির জন্য শক্তি জানান দিতে রুমা ও থানচিতে পরপর ঘটনা ঘটিয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পার্বত্য তিন জেলায় অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছিল। কেউ যদি ভিন্ন উদ্দেশ্যে অন্যের প্ররোচনায় পাহাড়ে অশান্তি করে থাকে, কাউকে ছাড় দেব না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব রয়েছে। ভারত বন্ধুপ্রতিম দেশ। যারা ঘটনা ঘটাচ্ছে, তারা যদি বিদেশেও আশ্রয় নেয়, তাদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে নিয়ে এসে বিচার করা হবে।’

জেলা প্রশাসন আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত এই সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধান অতিথি ছিলেন। এতে অংশ নেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বান্দরবানের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসার ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী।

সভায় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধানসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বান্দরবান সেনা রিজিয়ন কমান্ডার, র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমা, জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহীনসহ জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তারাও অংশ নেন।

গত মঙ্গলবার রাতে ও পরদিন দুপুরে বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলার কৃষি ও সোনালী ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় সশস্ত্র লোকজন। তারা টাকা লুট করে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মারধর করে, একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ও আনসারের ১৪টি অস্ত্র ও গুলি লুট করে নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় কেএনএফ জড়িত বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব ঘটনায় ছয়টি মামলা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

এর জের ধরে রুমা উপজেলার বেশির ভাগ বাসিন্দার মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। অপ্রয়োজনে কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। আর কেউ বের হলেও সন্ধ্যার আগে ফিরছেন বলে জানা গেছে।

তবে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নূরে আলম মিনা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877