স্বদেশ ডেস্ক:
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে গ্রেফতার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের নিরাপরাধ বলে দাবি করেছেন তাদের অভিভাবকরা। তারা তাদের সন্তানদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন।
তারা বলছেন, এ শিক্ষার্থীদের অযথা হয়রানি করা হয়েছে। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, তারপরও তাদের এর সাথে জড়ানো হাস্যকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন আটক বুয়েট শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
গত রোববার বিকেলে বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩৪ জনকে আটক করে তাহিরপুর থানার পুলিশ। গতকাল সোমবার দুপুরে তাদের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
পুলিশের দাবি, গ্রেফতার ছাত্ররা ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত। তারা টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়ানোর আড়ালে এখানে গোপন বৈঠক ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে এসেছিলেন। জননিরাপত্তা বিঘ্নিত ও মানুষের জানমালের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্য ছিল তাদের।
পুলিশের তথ্যমতে, গ্রেফতার ৩৪ জনের মধ্যে ২৪ জন্য বুয়েটের বর্তমান শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছয়জন প্রথম বর্ষ, ছয়জন দ্বিতীয় বর্ষ, পাঁচজন তৃতীয় বর্ষ, পাঁচজন চতুর্থ বর্ষ ও দুজন স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ছেন। বাকি ১০ জনের মধ্যে সাতজন বুয়েটের সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী। অন্য তিনজনের মধ্যে দুজন এবার এসএসসি পাস করেছে আর অপরজন বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর বাসায় কাজ করেন।
গ্রেফতার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বুয়েটের ছাত্র আলী আম্মার মৌয়াজের ভাই আলী আহসান জুনায়েদ।
তিনি বলেন, ‘গত ২৯ জুলাই এই শিক্ষার্থীরা সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যায়। দীর্ঘক্ষণ তাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রায় তিন ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে হঠাৎ ফোন করে আমাদের অনেকেই তারা নিজের ও অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর জানাতে বলে। তারা জানায়, হাওরে নৌকাভ্রমণের সময় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে পুলিশ তাদের আটক করে তাহিরপুর থানায় নিয়ে এসেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করেছে; এরপর পরিচয়পত্রের নম্বর দেয়ার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছে। তারা ফোনে শুধু এটুকুই বলতে পেরেছে। তাদের ফোন নিয়ে নেয়া হয়। স্থানীয় পুলিশ সুপার ও ওসির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা পারা যায়নি।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘অনেক উদ্বেগের পরে সোমবার বিকেলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে আমরা জানতে পারি, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। তারা নাকি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য সেখানে গেছে! এমন অকল্পনীয় অভিযোগ শুনে আমরা যারপরনাই আশ্চর্যান্বিত হই। আমরা মনে করি, এ রকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক।’
‘স্থানীয় এসপি ও ওসিকে ফোন দেওয়ার পাশাপাশি আমরা রাত থেকে বুয়েটের মাননীয় ভিসিকেও ফোন করেছি অসংখ্যবার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কারো সাথেই যোগাযোগে সক্ষম হইনি। মঙ্গলবার (আজ) বিকেলে আমাদের হাতে পৌঁছানো মামলার বিবরণীতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটিয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের ক্ষতিসাধন, রাষ্ট্রদ্রোহের কর্মকাণ্ডসহ ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধ ইত্যাদি অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুরো বিষয়টি আমাদের প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।’
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ‘আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সাথে আমাদের সন্তানেরা জড়িত নয়। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি, তারা সাধারণ শিক্ষার্থীমাত্র। কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে এমন ভয়ংকর মামলা সাজানো হলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
তারা বলেন, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। অথচ কোনো রাজনীতিতে যুক্ত না থাকা সত্ত্বেও পুলিশের ভিত্তিহীন চক্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষায় বারবার সহযোগিতা চাইলেও ভিসি ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো সহযোগিতা করছে না।
যোগাযোগ করা হলে বুয়েট কর্তৃপক্ষ তাদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানান অভিভাবকেরা।
আটক শিক্ষার্থীদের দ্রুত জামিন দেয়া এবং মামলা থেকে মুক্তির জন্য বিচারবিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও জোর দাবি জানান অভিভাবকরা।