মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৫ অপরাহ্ন

গুগল ও ফেসবুকের সাথে যুদ্ধে জড়াচ্ছে কানাডা, হারের সম্ভাবনাই বেশি

গুগল ও ফেসবুকের সাথে যুদ্ধে জড়াচ্ছে কানাডা, হারের সম্ভাবনাই বেশি

স্বদেশ ডেস্ক:

মেটা – ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামের মালিকানা প্রতিষ্ঠান- এবং গুগল জানিয়েছে কানাডায় তাদের প্লাটফর্মে তারা স্থানীয় সংবাদ ব্লক করবে। সংবাদ মাধ্যমগুলোকে তাদের কনটেন্টের জন্য পয়সা দিতে হবে – কানাডায় এমন একটি আইন পাশের পর এই দুই প্রযুক্তি জায়ান্ট এই হুমকি দিল।

কী দাঁড়াবে পরিস্থিতি এখন?

কানাডার কিবেক অঙ্গরাজ্যের ফরাসী ভাষার মিডিয়া হাউজ লা প্রেসের প্রেসিডেন্ট পিয়ের এলিয়ট লোভাসিওর বলেন ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টদের সাথে টাকা-পয়সা নিয়ে চুক্তির জন্য তিনি বছরের পর বছর চেষ্টা করছেন।

কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন তার প্রতিষ্ঠানের ২২০ জন কর্মী জান-প্রাণ দিয়ে যে কনটেন্ট তৈরি করছে তা দিয়ে এইসব প্রযুক্তি কোম্পানি প্রচুর পয়সা বানাচ্ছে।

“কিন্তু ন্যায্য পয়সা চাইলে তারা মুখের ওপর না বলে দিচ্ছে,” বিবিসিকে তিনি বলেন।

তিনি আশা করছিলেন অনলাইন নিউজ অ্যাক্ট নামের নতুন আইনটি এই অবস্থা বদলে দেবে। ভেবেছিলেন যে মিডিয়ার তৈরি সংবাদ ও অন্যান্য কনটেন্ট প্রচারের জন্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এখন পয়সা দেবে যা তারা ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারবেন।

গুগল এবং মেটাকে লক্ষ্য করে তৈরি এই আইনে বলা হয়েছে এসব প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে এখন থেকে টাকা-পয়সা দেওয়া নিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোর সাথে বোঝাপড়া করে চুক্তি করতে হবে। যদি দুই পক্ষ কোনো চুক্তিতে পৌঁছুতে ব্যর্থ হয় – তাহলে দেশের গণমাধ্যম বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের মধ্যস্থতায় আপোষ-মীমাংসা করতে দুপক্ষকে বাধ্য করতে পারবে।

পার্লামেন্টের বাজেটের ওপর নজরদারি করে এমন একটি নিরপেক্ষ সংস্থার হিসাবে এই আইনের ফলে কানাডার সংবাদমাধ্যমগুলো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বছরে ৩০ কোটি কানাডীয় ডলার (২২.৬ কোটি মার্কিন ডলার) আয় করবে, যা তাদের সংবাদ সংগ্রহ এবং তৈরির খরচের ৩০ শতাংশ মেটাবে।

কিন্তু সেই আশাবাদের ওপর ছাই ঢেলে দিচ্ছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো।

তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে এমন আইন তারা মানবে না, বরং কানাডার মিডিয়াগুলো সংবাদের লিংক তাদের প্লাটফর্মগুলোতে শেয়ার করলে সেগুলো ব্লক করে দেওয়া হবে।

মেটা, যারা প্রথম থেকেই এমন আইনের বিরোধিতা করছিল- বলেছে আগামী কয়েক মাসে তাদের প্লাটফর্মে কানাডার নিউজ সাইটগুলো ব্লক করা শুরু করা হবে।

ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগল ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়াতে সংবাদ-মাধ্যমগুলোর সাথে টাকা-পয়সা দেওয়ার চুক্তি করেছে, এবং তারা বলেছে তারা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ ধরণের চুক্তির জন্য প্রস্তুত।তবে কানাডার নতুন এই আইন সম্পর্কে এ সপ্তাহে গুগল হুমকি দিয়েছে যে ছ’মাসের মধ্যে আইনটি যখন কার্যকর করা হবে, তখন তারা তাদের সার্চ ইঞ্জিন থেকে কানাডা থেকে আপলোড করা সংবাদের সমস্ত লিংক ব্লক করে দেবে।গুগল জানিয়েছে বর্তমানে কানাডার দেড়শরও বেশি সংবাদ মাধ্যমের সাথে তাদের চুক্তি রয়েছে, এবং দাবি করেছে গুগল থেকে পাওয়া ট্রাফিকের কারণে এসব সংবাদ সাইটগুলো বছরে ২৫ কোটি কানাডীয় ডলার আয় করছে।“আমরা আরও করতে চাই,” বলেছে গুগল, “কিন্তু ওয়েব এবং সার্চ ইঞ্জিনগুলো বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় কাজ করে তার বাইরে গিয়ে আমরা কিছু করতে পারবোনা। কারণ তা টেকসই হবেনা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।“গত মাসে এই আইন পাশের আগে প্রধানমন্ত্রী জান্টিন ট্রুডো সংবাদের লিংক ব্লকের এসব হুমকি অগ্রাহ্য করেন।

লা প্রেসের পিয়ের-এলিয়ট লোভাসিওর বলেন, “টাকা দেওয়ার বদলে স্থানীয় সংবাদ সাইটগুলোতে কানাডীয়দের ঢোকা বন্ধ করে দেয়ার যে হুমকি দিচ্ছে এসব ইন্টারনেট জায়ান্ট সেটাই প্রধান সমস্যা। তারা এখন রীতিমত হুমকি-ধমকির পথ নিয়েছে। কিন্তু তাদের এই কৌশল কাজ করবে না।“

প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো বলছে জবরদস্তি করে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মিডিয়াগুলোকে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, কিন্তু মি. লোভাসিওর বলেন, মিডিয়াগুলো কোনো দয়া-দাক্ষিণ্য চাইছে না।

“আমরা ন্যায্য একটি ব্যবসায়িক চুক্তির জন্য দেন-দরবারের সুযোগ চাইছি,” তিনি বলেন। “একটা কারণেই তারা এটা চায়না কারণ বাজারে তাদের মনোপলি বা একাধিপত্য।“

কানাডার সরকার ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর এই বিরোধ কোন দিকে মোড় নেয় বিশ্বের বহু দেশেরই নজর থাকবে – কারণ ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত এবং ব্রিটেনসহ অনেক দেশ এ ধরণের আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে।

যে পরিমাণ অর্থ দেওয়া নিয়ে টানা-হেঁচড়া চলছে তা এসব প্রযুক্তি কোম্পানির শত শত কোটি ডলার আয়ের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি অংশ কিন্তু সাংবাদিকতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ – বলেন মনোপলি বিরোধী গবেষণা সংস্থা ওপেন মার্কেটস ইনস্টিটিউটের অন্তর্গত সেন্টার ফর জার্নালিজম অ্যান্ড লিবার্টির পরিচালক কর্টনি র‍্যাডশ।

“সার বিশ্বেই ঐক্যমত্য তৈরি হচ্ছে যে সংবাদ ব্যবহারের জন্য গুগল এবং ফেসবুকের উচিৎ মিডিয়াকে পয়সা দেওয়া,” তিনি বলেন। “মানুষের বোঝা উচিৎ গণতন্ত্রের মৌলিক স্তম্ভ এই সাংবাদিকতাকে রক্ষা করতে হবে।“

সূত্র:   বিবিসি নিউজ, নিউ ইয়র্ক এবং টরোন্টো

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877