স্বদেশ ডেস্ক:
মাদক মামলার আসামী আওয়ামী লীগ নেতার ভুঁড়িভোজে অংশ নেওয়া ওসির ছবি তুলতে গিয়ে পুলিশের লাঠিচার্জে বিএনপির ১২ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোস্তাফি এলাকার একটি কোল্ড স্টোরেজে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের ও ডিবি ওসি ফিরোজ হোসেনকে প্রত্যাহার করে ৭ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে তিন সদস্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা পুলিশ।
জানা যায়, ওই কোল্ড স্টোরেজের মালিক একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। আর এদিকে একাধিক মামলার আসামী আওয়ামীলীগ নেতা আখের উদ্দিনের ভুঁড়িভোজে অংশ নেন সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের ও ডিবি ওসি ফিরোজ হোসেন। খবর পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে ছবি তুলেন এবং জানতে চান মামলার আসামীকে গ্রেপ্তার না করে তার বাড়িতে দাওয়াত খাচ্ছেন কেন? এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ তাদের আটক করে এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ জনতার মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আটকদের ছাড়াতে তারা লালমনিরহাট – ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানালে পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ করে। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, যুবদল নেতা হাবিবুর রহমান নয়ন ও ছাত্রদল নেতা বিপ্লব হোসেন সহ ১২জন আহত হয়। পরে তাদের চিকিৎসার জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি ও ডিবির ওসির প্রত্যাহারের দাবিতে রাত ১১টা থেকে ৫ ঘন্টাব্যাপী লালমনিরহাট – ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে স্থানীয় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী। এ সময় সড়কে কয়েকশত যানবাহন আটকা পরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনী এসে ঘটনার বিচারের আশ্বাস দিলে রাত ৪টার দিকে অবরোধ তুলে নেয় আন্দোলনকারীরা।
গোকুন্ডা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু বলেন, ‘ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা শুনে আমরা (বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠন) সেখানে গেলে পুলিশ আমাদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করে এবং লাঠিচার্জ করে। পুলিশের নির্যাতনে কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।’
লালমনিরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘গোকুন্ডা ইউনিয়নের চিহ্নিত মাদককারবারী ও আওয়ামীলীগের ক্যাডার এবং একাধিক মামলার আসামী আখের হোসেনের সঙ্গে পুলিশের রাতে দাওয়াত খাওয়ার ছবি তুলতে যাওয়া তিন যুবককে আটক ও হট্টগোলের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতাকর্মী এবং ছাত্র- জনতা রাস্তায় জড়ো হয়। পরে পুলিশ আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে। এতে আমাদের অনেকেই আহত হয়েছেন। পরে সেনাবাহিনীর আশ্বাসে রাত ৪টার পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘ডিবি পুলিশের ওসি ও সদর থানার ওসি প্রত্যাহার না হলে আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি চালমান থাকত।’
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের ও ডিবি পুলিশের ওসির ফিরোজ হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক বলে জানিয়েন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম।
তিনি আরও জানান,ওই ঘটনায় সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের ও ডিবি ওসি ফিরোজ হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়াও এ ঘটনায় ৭দিনের সময় বেঁধে দিয়ে তিন সদস্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।