স্পোর্টস ডেস্ক:
খেলার বাইরে ক্রিকেট কখনও কখনও আবেগের নাম হয়ে ওঠে। সেই আবেগ এতটাই তীব্র থাকে যে, কেউ কেউ জীবনের মায়াও ভুলে যান। আবার কখনও ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটনা। স্বাভাবিক চিত্রের পেছনে থাকে অস্বাভাবিক কিছু। আবার অস্বাভাবিক দেখতে কোনো কিছুর ভেতরে থাকে কেবলই স্বাভাবিক কোনো গল্প।
সেসব নিয়ে সমান্তরালভাবে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ক্রিকেট। অপ্রত্যাশিত বিষয় যেন সেই যাত্রাকে থামাতে না পারে, সেজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি রাখে কঠোর নজরদারি। তবু ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো অপ্রত্যাশিত ঘটনা অহরহ দেখা যায় আন্তর্জাতিকসহ ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোতে। বিশেষ করে ২০ ওভারের ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোতে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রভাব বেশি দেখা যায়।
গেল বছরে ফিক্সিং নিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদন হৈচৈ ফেলেছিল বাংলাদেশেও। সেই প্রতিবেদনে ৩০টির বেশি দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে, যা বিপিএলে ঘটেছে গেল দুই বছরে। কিন্তু সেটি নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। গেল ৩০ ডিসেম্বর থেকে মাঠে গড়িয়েছে একাদশ বিপিএল। এই আসরেও এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যেগুলো সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। সেই ঘটনাগুলো নজরদারির বাইরে নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে থাকা আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগ (আকসু)।
একাদশ বিপিএলের তৃতীয় ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের বোলার ওশানে থমাস ১ বলে দিয়েছিলেন ১৫ রান। চারটি নো বল ও দুটি ওয়াইডসহ তার ওভারে এসেছিল ১৮ রান। ঐ ওভার শেষ করতে ক্যারিবিয়ান পেসারকে করতে হয়েছিল ১২টি বল। এই ঘটনার পরে খুলনার কোচ তালহা জুবায়ের ওশানের ফিটনেস ঘাটতির কথা বলেছিলেন। তিনি এই ক্রিকেটারের নো বল করার প্রবণতার বিষয়ও তুলেছিলেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওশান মাঝেমধ্যেই নো বল করে থাকেন বলে তিনি জানিয়েছিলেন। ওশানের পরে সন্দেহের নজর পড়েছে দুর্বার রাজশাহীর পেসার শফিউল ইসলামের ওপরে। তিনি রাজশাহীর প্রথম ম্যাচের একাদশে জায়গা পাননি। এরপরের তিনটি ম্যাচে খেলেছেন তিনি। যেখানে পাওয়ারপ্লের সময়ে বল করে হাতখুলে রান দেওয়ার চিত্র দেখা গেছে। নিজের প্রথম ম্যাচ ও রাজশাহীর দ্বিতীয় ম্যাচে ঢাকা ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ২০ রান দিয়েছিলেন ১ ওভারে। চিটাগং কিংসের বিপক্ষে দেন ২২ রান এবং সবশেষ ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে দিয়েছিলেন ১৮ রান। ধারাবাহিকভাবে পাওয়ারপ্লের সময়ে এত রান দেওয়ার বিষয়টি সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। ৩৫ বছর বয়সি এই পেসারের ফিটনেস নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।
সিলেটের মাটিতে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ২০৫ রান করেও সিলেট স্ট্রাইকার্স জয় তুলে নিতে পারেনি। ঐ ম্যাচে সিলেটের অধিনায়ক আরিফুল হক ৩ ওভার বল করে ৫১ রান দিয়েছিলেন। একের পর এক ফুলটস করে তিনিও সন্দেহের জন্ম দিয়েছেন। বাউন্ডারি ছোট থাকায় ও উইকেট বোলারদের পক্ষে না থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেন।
গতকাল ঢাকার বোলার আলাউদ্দিন বাবু রংপুরের বিপক্ষে পরপর তিনটি ওয়াইড বল করেছেন। এছাড়া আফগান স্পিন অলরাউন্ডার আমির হামজা যে নো বল করেছেন, সেটিও রয়েছে আলোচনায়। গেল বছরে আবুধাবি টি-টেন লিগে হযরত বিলাল নামের এক পেসার একটি নো বল করে সন্দেহের জন্ম দিয়েছিলেন। সেটি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্ন উঠেছিল, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার হাস্যরসে মেতেছিলেন।
গতকাল আমিরের নো বল নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, স্পিনার হয়েও এমন নো বল তিনি কীভাবে করেন? ইনিংসের প্রথম ওভার হওয়ায় মানসিক চাপ থেকে এমনটা হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। আবার সেটি নাও হতে পারে। বিপিএলের দ্বিতীয় আসর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ফিক্সিংয়ের প্রমাণ মিলেছে, সেসব ঘটনায় শাস্তিও হয়েছে অনেকের। তবু নতুন নতুন ঘটনা জন্ম দিয়েছে সন্দেহের।
গতকাল বিসিবির আকসু প্রধান মেজর রাইয়ান আজাদ দৈনিক ইত্তেফাককে বলেছেন, তাদের বিশেষ টিম নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। কারও বিরুদ্ধে কোনো প্রশ্ন উঠলে বা অনিয়মের তথ্য পেলে তারা সেটি নিয়ে কাজ করেন। কেউ যদি অনিয়মের বিষয়ে কিছু জেনে থাকে তাহলে তাদের তথ্য দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করেছেন তিনি।