ডা. মাহমুদুল হাসান সরদার: বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞানে হোমিওপ্যাথি একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদেরও ক্যান্সার চিকিৎসায় ভূমিকা রাখতে হবে। হোমিওপ্যাথিতে ক্যান্সার চিকিৎসার যতটুকু সুযোগ রয়েছে, তা শিক্ষা ও দক্ষতার অভাবে তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বাংলাদেশে হোমিও চিকিৎসাবিষয়ক বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এখন হোমিওপ্যাথি স্নাতক কোর্স (বিএইচএমএস) অন্যতম। এখান থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত এ ধরনের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসক তৈরি করা সম্ভব। এছাড়া ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের এ ধরনের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা প্রয়োজন। একদল প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ চিকিৎসক তৈরি করতে পারলে হোমিওপ্যাথিতে ক্যান্সার চিকিৎসার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হবে এবং আমাদের দেশের গরিব ক্যান্সার রোগীরা সহজেই এবং কম টাকায় ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে পারেন। কিন্তু বর্তমানে অনেক হাতুড়ে হোমিও ক্যান্সার চিকিৎসকের কথা শোনা যায়, তা যে সত্যি নয় তা কিন্তু নয়। অথচ তাদের অনেকেরই ক্যান্সার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পর্যন্ত নেই। এ ধরনের হাতুড়ে ক্যান্সার চিকিৎসকরা হঠাৎ ধনী হওয়ার মানসিকতায় অনৈতিক এ বাণিজ্য করে যাচ্ছেন, যা সত্যিকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের জন্য বেশ বিব্রতকর। এ জন্য আমরা যারা ক্যান্সার প্রতিরোধ ও চিকিৎসাসেবায় জড়িত তাদের পক্ষ থেকে রোগীদের কাছে আবেদন, আপনারা চিকিৎসক নির্বাচনে চিকিৎসকের যোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। যেসব চিকিৎসক চিকিৎসার নামে একাধিক কিংবা ১০-১২টি অথবা ৫০টি ওষুধ রোগীকে দিয়ে থাকেন, তারা কোনোভাবেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক নন। তারা হোমিওপ্যাথির নামে জনগণকে প্রতারণা করছেন। তাদের সম্পর্কে রোগী সমাজকে সচেতন হতে হবে। আর যারা সত্যিকার অর্থে ক্যান্সার চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাদের অনুরোধ জানাব, ক্যান্সার বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেকে যোগ্য চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলুন। ক্যান্সার সম্পর্কে মৌলিক এবং ক্লিনিক্যাল ধারণা না থাকলে ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা করা যায় না। চেম্বারের সামনে ক্যান্সার গবেষণা লিখলেই ক্যান্সার চিকিৎসক হওয়া যায় না। আজকাল আবার অনেকে কম্পিউটারে ক্যান্সার চিকিৎসা করেন, অথচ ক্যান্সার বিষয়ে কিছুই জানেন না। কেউ কেউ আবার পাবলিক হেলথ বিষয়ে পড়েও প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। একজন চিকিৎসককে দায়িত্বশীল হতে হয়। তিনি রোগীর জীবন নিয়ে খেলা করতে পারেন না। তিনি চিকিৎসার নামে বাণিজ্যও করতে পারেন না। চিকিৎসা নৈতিকতায় চিকিৎসককে সততার মানদ-ে উন্নীত হতে হয়। ভাবুন, একবার একজন চিকিৎসককে কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। অথচ, আমরা কি চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছি? পেশাগত সততা কি আমরা মেনে চলছি? আসুন, আমরা আত্মসমালোচনা করি। নিজেদের যোগ্য ও দক্ষ চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলি, যার মাধ্যমে হোমিওপ্যাথি সমাজে সত্যিকার মর্যাদা লাভ করবে।