শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন

‘শঙ্কার মেঘ’ কাটছে থাই আকাশের

‘শঙ্কার মেঘ’ কাটছে থাই আকাশের

স্বদেশ ডেস্ক:

দেশে-দেশে গণতন্ত্রের নিয়ম হলো, সাধারণ নির্বাচনে যে দল বা জোট বিজয়ী হবে তারাই নতুন সরকার গঠন করবে। কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, কারা মন্ত্রী হবেন, নতুন সরকারের রূপরেখা কেমন হবে- ইত্যাকার বিষয়ও ঠিক করবেন বিজয়ীরাই। কিন্তু থাইল্যান্ডের গণতন্ত্রে সেই নিয়ম নেই। বরং জনগণের ভোটে নির্বাচিতদের সরকার গঠনের জন্য পুনরায় সিনেট বা উচ্চকক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। এই সিনেটই ঠিক করে দেয়- কে হবেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সিনেট সদস্যরা আবার জনগণের ভোটেও নির্বাচিত নন, উপরন্তু সেনাবাহিনী কর্তৃক মনোনীত, একই সঙ্গে অভিজাত রাজতন্ত্র-ঘেঁষা।

সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে এবার নির্বাচনে দেখা গেছে, দেশটির সংস্কারপন্থি দলগুলো ব্যাপক জয় পেয়েছে। বিশেষ করে তরুণ নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাতের নেতৃত্বাধীন মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি (এমএফপি) দারুণ চমক দেখিয়েছে। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে তারাই সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছেন। এরপরই রয়েছে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার দল ফিউ থাই পার্টি। সব মিলিয়ে সংস্কারপন্থি দলগুলো পার্লামেন্টের ৬০ ভাগের বেশি আসন নিশ্চিত করেছে। হতাশার ব্যাপার হলো এতেও

তাদের সামনে নতুন সরকার গঠনে জটিলতা পুরোপুরি কাটছে না। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার পিটা আট দলীয় জোটের ঘোষণা দিয়েছেন, যারা সবাই তার নেতৃত্বে সরকার গঠনে প্রস্তুত রয়েছেন। এই জোটের দখলে রয়েছে পার্লামেন্টের ৩১৩ আসন- তাদের প্রয়োজন আরও ৬৩ আসনের সমর্থন। এখানেই থাই গণতন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা। প্রতিনিধি পরিষদের ৫০০ আসনে জনগণের সরাসরি ভোটে সদস্যরা নির্বাচিত হয়ে থাকেন। কিন্তু বাকি ২৫০ আসনে সিনেটরদের মনোনীত করে সেনাবাহিনী। তারা সাধারণ সেনা সমর্থিত দলকেই তাদের সমর্থন দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ৭৫০ (৫০০+২৫০) আসনের মধ্যে সরকার গঠনে ৩৭৬ ভোট প্রয়োজন। এই ম্যাজিক ফিগার অর্জনে এখনো পিছিয়ে রয়েছে পিটার নেতৃত্বাধীন জোট।

তবে এবার নির্বাচনে সংস্কারপন্থিদের ভূমিধস জয় দেশটির রক্ষণশীল সিনেটের গায়েও ধাক্কা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু সিনেটর পিটাকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। যদিও সেই সংখ্যা কম। থাই সংবাদমাধ্যম ব্যাংকক পোস্ট গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘আরও সিনেটর পিটাকে সমর্থন দিতে চলেছে।’ ওই প্রতিবেদনের ভাষ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ১৪ জন সিনেটর পিটাকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু এতেও সরকার গঠনে ঘাটতি থেকে যায়। যদিও এবার তরুণ নেতা পিটার প্রতি অনেকেই ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। সিনেটর সাথিত লিমপোঙপান বলেছেন, তিনি এমএফপি দলের নীতি ও উদ্দেশ্যের কথা শুনেছেন- যা তাদের সমর্থন দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। অপর সিনেটর প্রপাশ্রি সুচান্তভোত বলেছেন, তিনিও তার সমর্থন পিটার দিকেই রাখবেন। আরেক স্পষ্টবাদী নারী সিনেটর ওয়ানচাই সোর্নসিরি বলেছেন, তাকে ভুল বোঝানো হয়েছে, তিনি পিটার বিরোধিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তার সাফ কথা, প্রতিনিধি পরিষদে যিনি অর্ধেকের বেশি আসন পাবেন তাকেই প্রধানমন্ত্রী পদে ভোট দেবেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এতে করে পিটার শেষ রক্ষা না-ও হতে পারে। এক্ষেত্রে দেশটির এই হবু প্রধানমন্ত্রীকে হয়তো সিনেটের সঙ্গে কিছু বিষয়ে চুক্তির প্রয়োজন হতে পারে। আর সেটি হলো, বহুল আলোচিত ১১২ ধারা বাতিল না করা। ওই ধারায় থাই রাজার অবমাননার কঠোর সাজার বিধান রয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন সিনেটর এ ব্যাপারে পিটার কাছ থেকে গ্যারান্টি চেয়েছেন। এ বিষয়ে পিটাও বলেছেন, ‘আইনটি প্রয়োজনীয়’। এদিকে গতকাল ব্যাংকক পোস্ট আরেক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইতোমধ্যে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি জানিয়েছে, ১১২ ধারার বিষয়েও তাদের চাপ কমেছে। কেননা সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কোনো দলকে তারা এই বিষয়ে কোনো শর্ত আরোপ করবে না। এতে পিটার পথ আরেকটু মসৃণ হলো।

এদিকে সাংবিধানিক জটিলতা নিয়ে বেশি কিছু ভাবতে নারাজ হবু প্রধানমন্ত্রী পিটা। গত বৃহস্পতিবার আট জোটের সম্মেলনে তিনি বলেন, ৩১৩ আসনের সমর্থন যথেষ্ট, এই সময়ে ৩৭৬ ভোট তেমন কোনো বড় ইস্যু নয়। তারপরও এ নিয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। সরকারে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে, প্রয়োজনীয় নাম্বার নিশ্চিত করতে আমরা দলের কাছে আর্জি জানিয়েছি।

এবার নির্বাচনে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির উত্থান থাই রাজনীতিতে নতুন দিনের সূচনা করেছে বলা হয়। নির্বাচনের আগে জরিপে পিতংতার্ন সিনাওয়াত্রার দল ফিউ থাই পার্টি এগিয়ে ছিল। কিন্তু নির্বাচনের ফলে দেখা গেল, ফিউ থাই পার্টি দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এ বিষয়ে চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী থিতিনান পংশুধিরাক মনে করেন, মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি থাই রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে। তার কথায়, ফিউ থাই পার্টি ভুল পথে লড়াই করেছে। তারা জনতুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেছে, যা তারা আগেই অর্জন করেছে কিন্তু মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি এক ধাপ এগিয়ে থাই রাজনীতি সংস্কারের ডাক দিয়েছে। এটি থাই রাজনীতিতে নতুন লড়াইয়ের ক্ষেত্র।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877