সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০১:৪৭ পূর্বাহ্ন

সীমান্ত হাটে অস্ত্র কারবার

সীমান্ত হাটে অস্ত্র কারবার

স্বদেশ ডেস্ক:

পণ্য কেনাবেচার মাধ্যমে সীমান্তের দুপারের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব ও দৈনন্দিন জীবনমান উন্নয়নে কয়েক বছর আগে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হাট। এর মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে অন্য দেশের পণ্য কেনার সুযোগ পান সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ। সেই সীমান্ত হাটের দিকে নজর পড়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের অস্ত্র চোরাকারবারিদের। তারা অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচার নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে এ হাটকে।

গত বৃহস্পতিবার ভারতে তৈরি তিনটি রিভলবার ও ১৬ রাউন্ড গুলিসহ তিন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, রিভলবার তিনটি সিলেটের গোয়াইনঘাটের বিছানাকান্দি সীমান্ত হাটে হাতবদল হয়েছিল। এর আগেও ওই সীমান্ত হাটে অবৈধ অস্ত্রের হাতবদল হয়।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে কাউন্টার টেররিজম বিভাগের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের আর্মস এনফোর্সমেন্ট শাখার একটি টিম যাত্রাবাড়ীর ব্রাহ্মণচিরন রোডে অভিযান চালায়। এ সময় ওই রিভলবার ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয় অস্ত্র চোরাকারবারি আবদুল শহীদ, দোলন মিয়া ও আনছার মিয়াকে। এ সময় অন্য দুই অস্ত্র কারবারি আরব আলী ও আমিন মিয়া পালিয়ে যায়। এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, উদ্ধার করা তিনটি রিভলবারের মধ্যে দুটি ১২ চেম্বারবিশিষ্ট। একটি রিভলবার সাধারণত ৬ চেম্বারের হয়। অর্থাৎ ৬ রাউন্ড গুলি ভরা যায়। এ ধরনের ১২ চেম্বারের রিভলবার সচরাচর উদ্ধার হয় না বলে জানান অভিযানে অংশ নেওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা।

গ্রেপ্তার তিন অস্ত্র কারবারির মধ্যে আবদুল শহীদ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এবং আনছার মিয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। শহীদ এক সময় পাথরের ব্যবসা করতেন। দুই বছর আগে পাথর ব্যবসায় লোকসানের পর অস্ত্র ব্যবসায় নামেন। প্রতিমাসে অন্তত দুটি অস্ত্রের চালান এনে বিক্রি করেন তিনি। দোলন ও আমিনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।

পলাতক আরব আলী বিছানাকান্দি সীমান্ত হাট থেকে প্রতিটি রিভলবার ২০ হাজার টাকা করে কিনে আনতেন। তিনি খাসিয়া সম্প্রদায়ের এক অস্ত্র কারবারির কাছ থেকে রিভলবার কিনতেন। পরে তা শহীদ ও আমিনের কাছে ৪০ হাজার টাকা করে বিক্রি করতেন। আমিন ও শহীদ তা ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। পলাতক আমিন পেশায় অটোরিকশা চালক। কিন্তু সহজে বড়লোক হতে অবৈধ পথ বেছে নেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ সূত্রগুলো জানায়, সাধারণত বেনাপোল, হিলি, আখাউড়া, কুষ্টিয়া, ঠাকুরগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ আরও বেশ কয়েকটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ভারতে তৈরি অস্ত্র বাংলাদেশে ঢুকে। ২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর এসব সীমান্তে অবৈধ অস্ত্রের চালানের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবিসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নজরদারি বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে অস্ত্র চোরাকারবারিরা বিকল্প রুটে অস্ত্র চোরাচালানের চেষ্টা চালাচ্ছে। এমনই একটি রুট হলো বিছানাকান্দি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত ডিসি মো. ছানোয়ার হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তের ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। আগে সীমান্তের যেসব রুটে ক্রাইম হতো, সেগুলোয় এখন ক্রাইম কম হচ্ছে। এখন সীমান্তের অনেক রুট দিয়েই চোরাচালানিরা তাদের অবৈধ মালামাল আগের মতো আনতে পারছে না। ফলে তারা বিকল্প নতুন নতুন রুট দিয়ে চোরাচালানের চেষ্টা করছে। বিছানাকান্দি তেমনি একটি রুট।

বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (সদর) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম জাহাঙ্গীর আলম আমাদের সময়কে বলেন, অস্ত্র, মাদক, বিস্ফোরক, নারী পাচারসহ সব ধরনের চোরাচালানের বিরুদ্ধে বিজিবি কঠোর অবস্থানে আছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং সীমান্তবর্তী মানুষের সুবিধায় সীমান্ত হাট চালু করা হয়। এখানে অস্ত্র কেনাবেচার হওয়ার কথা নয়। আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877