বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১০:৪২ অপরাহ্ন

থেমে নেই মানবপাচার, লিবিয়ায় কর্মী ভিসা ইস্যু বন্ধ

থেমে নেই মানবপাচার, লিবিয়ায় কর্মী ভিসা ইস্যু বন্ধ

স্বদেশ ডেস্ক:

লিবিয়ার শ্রমবাজার খোলা থাকলেও ঢাকার লিবিয়া দূতাবাস থেকে কর্মীদের নামে ভিসা স্ট্যাম্পিং দেয়ার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে কী কারণে ভিসা দেয়ার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে সে বিষয়ে ঢাকার লিবিয়া দূতাবাস সংশ্লিষ্ট কারো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ দিকে বৈধপ্রক্রিয়ায় যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়ায় আপাতত কর্মী যাওয়ার কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও মানবপাচারকারী চক্রের মাধ্যমে ‘বডি’ কন্ট্রাক্ট্রে’ দুবাইয়ে ভিজিট ভিসায় পাড়ি জমানো লোকগুলোকে প্রলোভনে ফেলে চক্রটি লিবিয়া হয়ে ট্রলারে ইউরোপের দেশ ইতালিতে পাঠানোর অবৈধ কাজ কারবার চালিযে যাচ্ছে দেদার।

অপর দিকে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে কর্মী প্রেরণের চুক্তি নতুন করে করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের লিবিয়ায় যাওয়ার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৭টার পর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি।

এর আগে লিবিয়ার ত্রিপোলি থেকে গত শুক্রবার দুপুরে একজন ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে লিবিয়ার সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ থেকে বৈধপথে এই দেশে শ্রমিক আসছিল। ১৫ সিন্ডিকেট লোক পাঠানোর কাজ করবে বলে শুনেছি। এরপর কী হলো বুঝতে পারছি না। এর মধ্যেই হঠাৎ ঢাকার লিবিয়া দূতাবাস এক নোটিশে জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত লিবিয়াগামী শ্রমিকদের ওয়ার্কিং ভিসা দেয়া বন্ধ থাকবে। ওই ব্যবসায়ী বলেন, কারণ হিসেবে তারা যতটুকু জেনেছেন, নতুন করে দূতাবাসে আইটি সেকশনের কাজ চলছে। এ কারণে বন্ধ রয়েছে। তবে ফ্যামিলি ভিসা, ভিজিট ভিসা, লিবিয়া থেকে কোনো কর্মী ছুটিতে এসে আবার যাওয়ার ক্ষেত্রে দূতাবাস থেকে ভিসা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, লিবিয়াতে ২০১৪ সালের পর থেকে মানবপাচারকারী চক্রের যে দৌরাত্ম্য ছিল সেটি এখনো চলছে। ঢাকা থেকে বডি কন্ট্রাক্টে এখনো লোক আসছে। কিভাবে আসছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকার সিন্ডিকেট গ্রামের দালালদের মাধ্যমে ভিজিট ভিসা দিয়ে প্রথমে দুবাই পাঠানোর কন্ট্রাক্ট করে। এরপর সেখানে কয়েক দিন রেখে সুযোগ বুঝে আকাশপথে কখনো মিসর হয়ে, আবার কখনো সরাসরি লিবিয়ার বেনগাজিতে নিয়ে আসছে। এই এয়ারপোর্টে আসার পর কোনো কাগজ লাগে না। সেখান থেকে সড়কপথে ত্রিপোলি নিচ্ছে চক্রটি। কিছু দিন রাখার পর সাগরপথে ইউরোপের দেশ ইতালি পাঠানোর জন্য তারা কাঠের ট্রলারে তুলে দিচ্ছে। এসব মানবপাচারের ঘটনা কমানোর জন্য লিবিয়ার ত্রিপোলিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছে। কিন্তু কোনোভাবেই চক্রটিকে ভাঙতে পারছে না। তার মতে, বর্তমানে লিবিয়ার বেনগাজিতে একটি সরকার পরিচালিত হচ্ছে। অপর দিকে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে যে সরকার পরিচালিত হচ্ছে মূলত তাদের দ্বারাই সব প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

গতকাল ঢাকার কাকরাইল থেকে একজন ব্যবসায়ী নয়া দিগন্তকে বলেন, লিবিয়ার শ্রমবাজারটি পুরোদমে চালু হলে দেশটিতে অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। শুনেছি আগামী ২ মার্চ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী মহোদয়ের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের লিবিয়ায় যাওয়ার কথা। তারা আগের থাকা চুক্তিটি আবারো নতুন করে করতে যাচ্ছে বলে শুনছি।এ বিষয়ে গতকাল রাতে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো: শহিদুল আলমের বক্তব্য নিতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

লিবিয়ার শ্রমবাজারে শ্রমিক প্রেরণের সাথে সম্পৃক্ত একজন প্রতিষ্ঠিত জনশক্তি ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশের শর্তে গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আমিও শুনেছি আমাদের মন্ত্রী মহোদয় লিবিয়ায় যাচ্ছেন। সম্ভবত তিনি আগে এমওইউ চুক্তি আছে। সেটি মনে হয় নতুন করে করতে যাচ্ছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেশটিতে কন্সট্রাকশনসহ বিভিন্ন দফতরে কর্মী নিয়োগের পাশাপাশি দক্ষ কর্মী হিসেবে ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানের চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে ডাক্তার নার্স পাঠানোর বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকার একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সিকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে। এখন লিবিয়ার ত্রিপোলির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সার্বিক বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন ঢাকায় আসার পর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্তভাবে ডাক্তার নার্স ও টেকনিশিয়ান যাওয়ার বিষযে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে ওই ব্যবসায়ী জানান।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877