রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:০২ অপরাহ্ন

ইসলাম ও শিশু অধিকার : মা-বাবা’র করণীয়

ইসলাম ও শিশু অধিকার : মা-বাবা’র করণীয়

স্বদেশ ডেস্ক: প্রত্যেকের জন্য সন্তান হচ্ছে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এক অনন্য উপহার। তাই সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর এই সুখবর অন্যকে আনন্দচিত্তে জানানো আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার বহি:র্প্রকাশ।
একইভাবে অন্যদের দায়িত্ব হচ্ছে, সন্তান জন্মের খবর পাওয়ার পর নবজাতকের বাবা-মাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো এবং সন্তানের জন্য দোয়া করা। সন্তানলাভের পর অর্থাৎ এই অনন্য উপহার পাওয়ার পর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো জরুরি। নানা উপায়ে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যেতে পারে। সন্তানলাভের পর কৃতজ্ঞতা জানানোর একটি ভালো উপায় হলো আকিকা। ইসলামি পরিভাষায় সন্তান জন্মগ্রহণের পর আল্লাহর শুকরিয়া ও আনন্দের বহি:র্প্রকাশ হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও শিশুর নিরাপত্তার জন্য পশু কুরবানি করাকে আকিকা বলা হয়। আকিকা করার উত্তম দিবস হলো সন্তান জন্মের সপ্তম দিন। সন্তানলাভের পর কথা ও কাজের মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত।
আকিকা ছাড়াও সন্তান লাভের পর দান-খয়রাত করে এবং মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ালে আল্লাহতালায়া খুশি হন। এসবই হলো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় ও তাঁর নৈকট্য লাভের উত্তম উপায়। আকিকা, দান-খয়রাত ও মানুষকে খাওয়ানো হলে শিশুর জন্য দোয়া পাওয়া যায়। মুসলমানরা নানা ধরণের বিপদ-আপদ, বালা-মুসিবত থেকে শিশুকে রক্ষার জন্য দোয়া করেন। এসবের মধ্যে ধর্মীয়, নাগরিক ও আত্মিক অনেক উপকারী দিকও রয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কও জোরদার হয়। এতে করে সমাজে সৌহার্দ্য ও ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ় হবে। সর্বোপরি এতে ইসলামের সামাজিক দায়িত্বচর্চার উপলক্ষ হয়। মনে রাখতে হবে, সন্তান হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্যতম সেরা নেয়ামত। সন্তান পার্থিব জীবনেরও সৌন্দর্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের সুরা কাহাফের ৪৬ নম্বর আয়াতে বলেছেন, সম্পদ ও সন্তানসন্ততি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য।
বাবা-মায়ের অধিকারের বিষয়ে যেমন ইসলামে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ঠিক তেমনি সন্তানের অধিকারও ব্যাপকভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (স.) বলেছেন, যেমনিভাবে সন্তানের উচিত নয়, বাবা-মাকে অসম্মান করা ঠিক তেমনি বাবা-মায়েরও উচিত নয় সন্তানকে অসম্মান করা। অন্য এক হাদিসে এসেছে রাসূলে খোদা (স.) বলেছেন, সন্তানের প্রতি সম্মান দেখান এবং তাদেরকে সৎ হিসেবে গড়ে তুলুন।
শিশুদের আরেকটি অধিকার হলো সুন্দর নাম পাওয়া। ইমাম রেজা (আ.) বলেছেন, বাবা প্রথম যে ভালো কাজটি সন্তানের জন্য করেন তাহলো সুন্দর ও অর্থবহ নাম বাছাই। কাজেই আপনারা সবাই সন্তানের জন্য সুন্দর নাম রাখুন। অনেকে কোরআনে শব্দের উল্লেখ থাকলেই নাম রাখার জন্য সে শব্দটাকে নির্বাচন করেন, এটা ঠিক নয়, বরং নামটির অর্থও দেখতে হবে। কারণ কোরআনে কাফেরদের বিভিন্ন অবস্থা, ভর্ৎসনা ও আজাব বুঝাতেও বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার হয়েছে।
শিশু হচ্ছে মানবসভ্যতার প্রথম অবদান। এই শিশুই একদিন বড় হয়ে তার শ্রমশক্তি ও প্রতিভার অবদানে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, শ্রেষ্টত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারে। সুতরাং এই শিশুকে উপযুক্ত ভাবে লালন-পালন করা সকলের দায়িত্ব, তার জীবনকে আনন্দময়- মঙ্গলময়Ñ শান্তিময় রাখা সকলের দায়িত্ব। তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় করে তুলতে হবে যেন সে স্বাধীনভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে, নিজের উৎকর্ষ সাধন করতে পারে। তার আনন্দ-খুশি-শান্তি নিশ্চিত রাখতে হবে। তার শিশুকালকে রঙিন স্বপ্নময় করে দিতে হবে। শিশুর অন্ন-বস্ত্র বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অধিকার পূর্নাঙ্গভাবে মেটাতে হবে। এ দায়িত্ব হলো রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের। শিশুকে নিরাপত্তা দিতে হবে এবং আনন্দময় জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে তাকে বড় করে তুলতে হবে। অভিভাবকহীন পরিত্যাক্ত যেসব শিশু পথের ধারে ঘুমিয়ে থাকে, ডাস্টবিনের খাবার কুড়িয়ে খায়, বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পোড়ে এবং শীতে কাঁপে, সেইসব শিশুদেরও মানবাধিকার আছে। শিশু অধিকার ভোগ করতে না দেয়াটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। শিশু হচ্ছে সবচেয়ে অসহায়। সে যখন কথা বলতে পারে না, কিছু চাইতেও জানে না, এমনকি নিজের কষ্ট ও বেদনার কথাও প্রকাশ করতে পারে না, তখন তার প্রতি সহানুভূতি দেখানো পরিবারের বড়দের দায়িত্ব। শিশুর প্রথম শিক্ষা হয় মায়ের কাছে. তারপর পরিবারের কাছে। একজন ভালো মা পারেন সুসন্তান গড়ে তুলতে, একটি আদর্শ পরিবার পারে একটি মূল্যবোধসম্পন্ন শুদ্ধতম মানুষ তৈরি করতে। একটি সংস্কৃতিবান সমাজ এবং সুশাসনমন্ডিত রাষ্ট্র পারে একজন সুনাগরিক সৃষ্টি করতে। যে সমাজ ও রাষ্ট্র উন্নত এবং কল্যাণকামী সেই সমাজের শিশুরা যথেষ্ট দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক হিসেবে কৈশোর থেকে গড়ে ওঠে। তারুণ্যের শক্তি-মেধা-বুদ্ধিমত্তা-শ্রম দ্বারা দেশের উন্নয়নের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠা বোধ করে না। সমাজ, রাষ্ট্র তথা গোটা বিশ্বের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে সৎ ও যোগ্য মানুষ গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই। এ কারণে পবিত্র ইসলাম ধর্ম শিশু অধিকারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শিশুদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে, তাদের সততা, নীতি-নৈতিকতা তথা ধর্মের শিক্ষা দিতে হবে।
আমাদের দেশে অনেকের মাঝে একটি ধারণা আছে যে আকিকার মাধ্যমে শিশুর নামকরণ করা হয়। কিন্তু আসলে তা নয়। শিশুর সুন্দর ও ভালো অর্থবহ নাম রাখা একটি স্বতন্ত্র সুন্নত। আকিকা করা আরেকটি স্বতন্ত্র সুন্নত।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877