স্বদেশ ডেস্ক: জ্বলতে থাকা ‘পৃথিবীর ফুসফুস’খ্যাত আমাজন জঙ্গলের নতুন নতুন স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ব্রাজিল সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত বৃহস্পতি থেকে শুক্রবারের মধ্যে বনের অন্তত ১২০০ স্থানে নতুন করে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ঘন ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে ওইসব অঞ্চলের আকাশ। এই পরিস্থিতিতে গত শনিবার থেকে ব্রাজিল সরকার আমাজনের আগুন নেভানোর কাজে সহযোগিতা করতে দেশটির সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার ও বিমান নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ জানিয়েছে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ছোট-বড় মিলে প্রায় ৭৪ হাজার বার অগ্নিকা-ের শিকার হয়েছে আমাজন। তবে এবারের আগুনই সবচেয়ে ভয়াবহ। আল জাজিরা জানিয়েছে, নতুন করে সহস্রাধিক স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য চায় ছয়টি রাজ্য। শনিবার ব্রাজিলের পরিবেশমন্ত্রী রিকার্ডো সেলেস জানান, সাহায্য চাওয়া রাজ্যগুলো হচ্ছে পারা, রন্ডোনিয়া, রোরাইমা, টোকানটিন্স, একর এবং ম্যাটো গ্রোসো।
বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ব্রাজিলের উগ্র ডানপন্থি বলে পরিচিত প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারোর নীতিকে দায়ী করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বন পুড়িয়ে ব্যবসায়িক কর্মকা- সম্প্রসারণের নীতির জন্য নিজ দেশের পরিবেশবাদীদেরও তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এ ছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্রাজিল সরকারের নিষ্ক্রিয়তার ঘটনায় দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি বাতিলেরও হুমকি দেয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এই চাপের মধ্যেই জি-৭ সম্মেলন শুরুর ঠিক আগে আমাজনের আগুন নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিতে বলসোনারো বাধ্য হয়েছেন বলে মনে করছে এএফপি।
এর আগে আমাজনের আগুন নিয়ে জি-৭ সম্মেলনে বিশেষ আলোচনার ডাক দিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। আগুন আয়ত্তে আনতে না পারলে ব্রাজিলকে আর্থিকভাবে বয়কট করার কথাও ভাবছিল জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর অনেকেই। বিশেষ করে ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ডের হুশিয়ারি ছিল, ব্রাজিলের সঙ্গে আর বড় ধরনের কোনো বাণিজ্যিক চুক্তিতে যাবে না তারা। এমনকি ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানি নিষিদ্ধ করার জন্য ইইউর কাছে আবেদন করেছিলেন ফিনল্যান্ডের অর্থমন্ত্রীও। আমাজনের আগুনকে ‘আন্তর্জাতিক সংকট’ বলে আখ্যা দেয় জার্মানি, যুক্তরাজ্যও। এর পরেই নড়েচড়ে বসে ব্রাজিল সরকার। অবশেষে শনিবার রাতেই মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে সেনা পাঠানোর কথা ঘোষণা দেন তিনি। বলসোনারো বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ, আদিবাসীদের জমি ও সীমান্ত এলাকা রক্ষার জন্য সাহায্য করবে সশস্ত্র বাহিনী। ২৫ আগস্ট থেকে শুরু করে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোতায়েন থাকছে সেনা।