বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গা ক্যাম্প নির্মাণ : টেকনাফের বুক থেকে উধাও সবুজ

রোহিঙ্গা ক্যাম্প নির্মাণ : টেকনাফের বুক থেকে উধাও সবুজ

স্বদেশ ডেস্ক:

দুই বছর আগেও কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা ছিল সবুজে ঘেরা। পাহাড় ছিল সংরক্ষিত। কিন্তু ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর যখন মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তখন থেকেই বদলে যেতে থাকে এই ভূদৃশ্য। সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে গাছ কেটে পাহাড় ন্যাড়া করে তৈরি হয় ক্যাম্প। এ ছাড়া জ্বলানি সংগ্রহের জন্যও কাটা পড়তে থাকে গাছ। ফলে মাত্র দুই বছরে টেকনাফের ওই সবুজ পাহাড়ে যেন তৈরি হয়েছে মানবসৃষ্ট খয়রি রঙের ক্ষত। ইএসএ সেন্টিনেল হাবের সৌজন্যে যার স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করেছে বিবিসি। এতে স্পষ্ট দেখা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্প নির্মাণের কারণে কীভাবে দুই বছরের ব্যবধানে টেকনাফের কুতুপালং এবং নয়াপাড়ার ভূদৃশ্য পরিবর্তন হয়ে গেছে। একইভাবে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারের আশ্রয় প্রকল্প নির্মাণের ফলে কীভাবে নোয়াখালীর ভাসানচরের প্রকৃতিও বদলে গেছে, স্যাটেলাইটের ছবিতে তা-ও দেখা গেছে।

২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তোলা কুতুপালং এলাকার ছবিতে বিস্তীর্ণ সবুজ চোখে পড়ে। কিন্তু ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট একই এলাকার ছবিতে সবুজের মাঝখানে বসতির চিহ্ন দেখা যায়। একইভাবে ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর নয়াপাড়ার নাফ নদের তীরবর্তী এলাকায় সবুজের প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। শুধু অল্পকিছু এলাকায় মানববসতির চিহ্ন ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর তোলা ছবিতে ওই এলাকায় ব্যাপক পরিবর্তন চোখে পড়ে। সবুজ পিছিয়ে গিয়ে এগিয়ে আসে বসতির চিহ্ন। আবার ২০১৬ সালের ২৪ অক্টোবর তোলা ছবিতে নোয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় মানববসতিহীন নির্জন ভাসানচর দেখা যায়। কিন্তু ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের ছবিতে চরটিতে সরকারের গড়ে তোলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের গোলাপি কাঠামো দৃশ্যমান হয়।

বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্টের পর থেকে ১৮ অগাস্ট ২০১৯ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন রোহিঙ্গা। বিপুলসংখ্যক এই রোহিঙ্গাদের রাখার জন্য কক্সবাজারে মোট ৩২টি আবাসিক ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্যাম্পটি স্থাপিত হয় কুতুপালং-বালুখালী অঞ্চলে। পরে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য কুতুপালং-বালুখালী এলাকাকে ২২টি ক্যাম্পে বিভক্ত করা হয়।

এছাড়া প্রাথমিকভাবে ৮৪ হাজার অস্থায়ী শেল্টার নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও পরবর্তীতে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় শেল্টারের সংখ্যা বাড়িয়ে প্রায় সোয়া দুই লাখে উন্নীত করা হয়। এগুলোর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন শেল্টারের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার এবং মধ্যমেয়াদি শেল্টার রয়েছে প্রায় ৭০০টি। মোদ্দা কথা রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য সবকটি ক্যাম্প মিলিয়ে মোট সাড়ে ৬ হাজার একর ভূমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে টেকনাফ-কক্সবাজার অঞ্চলের শিবিরগুলোয় চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে গত সেপ্টেম্বরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেয় বাংলাদেশ সরকার। তবে রোহিঙ্গারা ভাসানচরে স্থানান্তরিত হতে না চাওয়ায় সেই প্রক্রিয়া এখনো শুরু করা যায়নি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877