শনিবার, ২৫ মে ২০২৪, ১০:০৫ অপরাহ্ন

স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিতে যারা

স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিতে যারা

স্বদেশ ডেস্ক:

অক্টোবর স্তন ক্যানসার সচেতনতার মাস। বিশ্বজুড়েই পালিত হয়ে থাকে। স্তন ক্যানসার এক ভয়াবহ রোগ। মুক্তি পেতে বা দূরে থাকতে প্রয়োজন সচেতন হওয়া। কেননা, বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অসংখ্য নারীর স্তন ক্যানসার একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। আমাদের দেশে জরায়ু ক্যানসারের পরই স্তন ক্যানসারের অবস্থান। প্রতিবছর দেশে ৮ হাজার ৩৯৭ নারী মারা যান শুধু স্তন ক্যানসারে। তবে আমরা যদি স্তন ক্যানসার সম্পর্কে জানি এবং সচেতন হই, তাহলে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগটি শনাক্ত করা সম্ভব। আর যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হলে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করা যায়।

স্তন ক্যানসার যাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ : বয়স পঁয়ত্রিশের ঊর্ধ্বে, অতিরিক্ত ওজন, শারীরিক ব্যায়াম না করা, মদ্যপান, ঋতু অবসানে হরমোন গ্রহণ করা, রেডিয়েশন, তাড়াতাড়ি ঋতু শুরু ও দেরি করে ঋতুর অবসান, বেশি বয়সে সন্তান ধারণ বা সন্তানহীন, মিউট্যান্ট জিন (বিআরসিএ-১ ও বিআরসিএ-২), বংশগত কারণ ইত্যাদি।

স্তন ক্যানসারের লক্ষণ : স্তনে ব্যথামুক্ত চাকা, স্তনের বোঁটার পরিবর্তন। যেমনÑ ভেতরে ঢুকে যাওয়া, স্তন বোঁটা থেকে ক্ষরণ, স্তনের আকার ও আকৃতির পরিবর্তন, বগলে চাকা, স্তনের চামড়া লাল হয়ে যাওয়া ও ছোট ছোট গর্ত হওয়া। যেমন কমলালেবুর মতো আবরণ, স্তনে ঘা দেখা দেওয়া।
স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয় : বিয়েশাদি এবং প্রথম সন্তান ধারণ ৩০ বছরের আগেই সম্পন্ন করতে হবে। পরিমিত আহার ও হালকা ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর হালকা-পাতলা রাখতে হবে। তামাক, গুল ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাদ্য, ফাস্টফুড কম খেতে হবে। পর্যাপ্ত ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যানসার নির্ণয় : শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করতে হবে। স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের সবচেয়ে সহজ এবং খরচহীন পদ্ধতি হলো নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা। নিয়ম হলো প্রথমে আয়নার সামনে দাঁড়ান। হাত দুটো সোজা মাথার উপরে তুলুন। কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা আছে কিনা, খেয়াল করুন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাত দুটি কোমরে রাখুন। দুই হাতে যতদূর সম্ভব কোমরের ওপর চাপ প্রয়োগ করুন। দুই স্তনের দিকে লক্ষ্য করুন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে কিনা। যেমনÑ আকার, আকৃতি, গঠন, চামড়ার রঙ, বোঁটা ভেতরে ঢুকে যায় কিনা। এবার চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। এই পরীক্ষা দাঁড়ানো অবস্থার চেয়ে শুয়ে করা ভালো। কেননা শোয়া অবস্থায় স্তনের টিস্যু ছড়িয়ে যায় এবং যতদূর সম্ভব পাতলা থাকে। ফলে স্তনের টিস্যু পরীক্ষা খুব সহজেই করা যায়। এবার হাতের মধ্যখানের তিন আঙুলের ভেতরের অংশ দিয়ে স্তন পরীক্ষা করুন। ডান স্তনের জন্য বাম হাত এবং বাম স্তনের জন্য ডান হাত ব্যবহার করুন। যে স্তন পরীক্ষা করবেন, সেই পাশের হাত মাথার নিচে রাখুন। স্তন চামড়ার কাছাকাছি টিস্যু মৃদু চাপ দিয়ে, বুকের হাড়ের কাছাকাছি টিস্যু জোরে চাপ দিয়ে এবং মাঝামাঝি টিস্যু মাঝামাঝি চাপের সাহায্যে পরীক্ষা করুন। কোনো ধরনের সন্দেহ বা কোনো অস্বাভাবিকতা শনাক্ত হলে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

স্তনের ডাক্তারি পরীক্ষা : স্তন ক্যানসারের লক্ষণগুলোর এক বা একাধিক যদি দিনের পর দিন দেখা যেতে থাকে, তাহলে স্তন ক্যানসার হয়েছে বলে সন্দেহ করা উচিত এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া হতে হবে।

বেঁচে থাকার শতকরা হিসাব : প্রথম স্টেজে শতভাগ কিন্তু চতুর্থ স্টেজে ২২ শতাংশ। তাই ‘ভয় কিংবা আতঙ্ক নয়, স্তন ক্যানসার থেকে মুক্ত হতে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। তাহলেই নিরাপদ থাকা সম্ভব। তবে শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে যুদ্ধ করা ভালো।

লেখক : ক্যানসার বিশেষজ্ঞ; সহযোগী অধ্যাপক

রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ, এনআইসিআরএইচ, মহাখালী, ঢাকা

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877