স্বদেশ ডেস্ক: সিলেটে সীমান্ত বন্দরে বাড়ানো হয়েছে স্বাস্থ্য সতর্কতা। ভারত থেকে কেউ এলে তাকে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রতিটি স্থলবন্দর এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে থার্মোস্ক্যানার বসানো হয়েছে। করা হচ্ছে স্বাস্থ্য পরীক্ষাও। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাতায়াতকারী যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। কেবলমাত্র চিকিৎসার জন্য জরুরি প্রয়োজনে যাত্রীরা যাতায়াত করছেন। সিলেটের সঙ্গে ভারতের সেভেন সিস্টারের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। এরমধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অনেক পুরনো।
ছয়টি স্থলবন্দর দিয়ে সিলেটের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে। ভারতে করোনার নতুন স্ট্রেইনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সীমান্ত লাগোয়া দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এই আতঙ্কের বাইরে নয়। স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রথম দফা লকডাউনের সময় ভারত ও বাংলাদেশ থেকে চলাচলকারী পর্যটকদের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় এসে নেমেছিলো। সেটি এখনো বিদ্যমান। তবে চিকিৎসার প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে যাত্রীরা চলাচল করতে স্থলবন্দর ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া সীমিত পরিসরে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহাল রয়েছে। ভারত থেকে চুনাপাথর, কয়লা সহ নানা পণ্য বাংলাদেশে আসছে। এতে করে সীমান্ত এলাকায় ভারত থেকে ট্রাকযোগে চালক ও শ্রমিকরা প্রবেশ করছেন। তবে মালপত্র নামিয়ে দিয়ে তারা চলে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে দু’দেশের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভারত থেকে সিলেটে প্রবেশের অন্যতম পথ হচ্ছে তামাবিল স্থলবন্দর। করোনার প্রথম ঢেউয়ের শুরু থেকে এ স্থলবন্দরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এখনো স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি বিদ্যমান রয়েছে। ভারত থেকে কেউ এলে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা ছাড়াও কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে। চিকিৎসার প্রয়োজনে ভারতে যাওয়া এক যাত্রী গতকালও সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করেন। তাকে থার্মো স্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষার পর সরকারি হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। গোয়াইনঘাটের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. রেহানউদ্দিন জানিয়েছেন, তামাবিল চেকপোস্টে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পূর্বের নিয়মে তারা এখন ৫ দিনের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করছেন। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি এখনো তাদের কাছে নির্দেশনা আকারে আসেনি। এলে তারা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এখন যারা আসছেন তাদেরকে পূর্বের নিয়মে গোয়াইনঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোয়ারেন্টিনের জন্য পাঠানো হচ্ছে বলে জানান তিনি। সিলেটের প্রবেশের অন্যতম আরেকটি প্রবেশ পথ হচ্ছে জকিগঞ্জ শুল্কবন্দর। করোনার প্রথম পর্যায়ে এই বন্দরের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ রাখা হয়েছিলো। যাতায়াতের সংখ্যা ছিল খুব কম। পরবর্তীতে সেপ্টেম্বর থেকে কিছুটা স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করছিল। ওই সময় যাত্রীরা আসা-যাওয়া করেছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার পক্ষ থেকে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে জকিগঞ্জ শুল্ক স্টেশন দিয়ে যাত্রীরা যাচ্ছে না কিংবা আসছেও না। ফলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে না। জকিগঞ্জের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ আল মেহেদী জানিয়েছেন, এখন সপ্তাহ দিন পর কিছু সংখ্যক শ্রমিক পণ্য নিয়ে আসে। এলে তারা স্থলবন্দর এলাকাতেই থাকে। এরপরও তারা গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ওই শ্রমিকদের ঢুকতে দেয়া হয়। এখন যেহেতু পর্যটক নেই, এ কারণে স্থলবন্দর এলাকায় তাদের নিরাপত্তা সতর্কতা নেই। তবে স্থলবন্দরের পার্শ্ববর্তী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সব তদারকি করা হচ্ছে। ভারতের আসাম থেকে বাংলাদেশে সুতারকান্দি স্থলবন্দর। এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিনিয়ত আসছে মানুষ ও ভারত থেকে মালামাল। করোনাকালে বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। বিশেষ করে নিত্যপণ্য আসে ওই স্থলবন্দর দিয়েছে। এ কারণে বিয়ানীবাজার থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মেডিকেল টিম এই স্থলবন্দরে রয়েছে। তারা ভারত থেকে আসা যাত্রী ও শ্রমিকদের থার্মোস্ক্যানার দিয়ে পরীক্ষা করছেন। যেসব যাত্রী ভারত থেকে আসছেন তাদের কোয়ারেন্টিন বাড়িতে নিশ্চিত করা হচ্ছে। তবে বিয়ানীবাজার উপজেলার যেসব স্থানীয় বাসিন্দারা ভারত থেকে আসছেন তাদের কোয়ারেন্টিন স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে তদারকি করা হয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান। তিনি জানান, নতুন নির্দেশনা এখনো তাদের কাছে পৌঁছায়নি। সেটি এলে নতুন নির্দেশনা পালন করা হবে।