সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৩৬ অপরাহ্ন

আলজাজিরার প্রতিবেদন: ভারতীয় ভিসা নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে বাংলাদেশি রোগীরা

আলজাজিরার প্রতিবেদন: ভারতীয় ভিসা নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে বাংলাদেশি রোগীরা

স্বদেশ ডেস্ক:

লিভারের সমস্যায় ভুগছেন ৩৭ বছর বয়সি মোহাম্মদ নুরি আলম।  গত বছরের সেপ্টেম্বরে  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, তার জরুরিভাবে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট প্রয়োজন।  কিন্তু  এটি এমন একটি পদ্ধতি যা বাংলাদেশে সম্ভব নয়।  এরপরই তার স্ত্রী খাদিজা খাতুন সিদ্ধান্ত নেন, হায়দ্রাবাদে অবস্থিত ভারতের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে যাওয়ার।  কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তারা এখনও ভিসা পাননি।  আর এতে আকাশ ভেঙে পড়েছে খাদিজার মাথায়।

ভারতের মিত্র শেখ হাসিনা গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে ভিসা কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে।

যার ফলে খাদিজা এবং তার স্বামী এরইমধ্যে ২০ নভেম্বর ও ২০ ডিসেম্বর দুটি হাসপাতালের অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস করেছেন।  আর আগামী ১০ জানুয়ারি তাদের পরবর্তী অ্যাপয়েন্টমেন্ট রয়েছে। কিন্তু হায়দ্রাবাদে চিকিৎসার জন্য তারা ঠিকমত ভারতে যেতে পারবেন কিনা তা অনিশ্চিত।

খাদিজা বলেন, আমরা অক্টোবর থেকে সবকিছু চেষ্টা করেছি- ট্রাভেল এজেন্সিগুলির কাছে যাওয়া, সরকারি মিত্রদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া।  ভারতই আমাদের একমাত্র ভরসা।

থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশের চিকিৎসার ব্যয় বেশি হওয়ায় তা তাদের সাধ্যের বাইরে।  খাদিজার এখন আশা, নতুন বছরে তার স্বামীর চিকিৎসার জন্য ভিসা পাওয়া যাবে।  দুই সন্তানের জননী খাদিজা বলেন, আমি অসহায় বোধ করছি, সমাধান ছাড়াই হাসপাতালের মধ্যে দৌড়াচ্ছি।

তবে শুধু খাদিজা নন, এরকম অবস্থা হাজার হাজার বাংলাদেশি রোগীর।  আর এর কারণে ব্যাপক সংকটের মধ্যে পড়েছেন বাংলাদেশের অনেক রোগী।  ভারতীয় কর্তৃপক্ষের ভিসা বিধিনিষেধের কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।

ভারতের ভিসা সেন্টারের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, তারা শুধুমাত্র জরুরি মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের সীমিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিচ্ছে।  আর বর্তমানে জরুরি ও মানবিক প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে শুধুমাত্র সীমিত সংখ্যক ভিসা প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তার মতে, জুলাইয়ের বিক্ষোভে হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশের পাঁচটি ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রে দৈনিক অনলাইন ভিসা স্লট প্রায় ৫০০টি কমেছে।

যার ফলে খাদিজার মতো অনেক বাংলাদেশির এখন ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা আরও কম।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে দিল্লিতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।  আর এরপরই  ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।  বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন হাসিনা।  গত মাসে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকার গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিকে তার প্রত্যর্পণের জন্য কূটনৈতিক চিঠি পাঠিয়েছেন।

এদিকে ভারত সরকার বাংলাদেশকে জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশি হিন্দুদের ওপর হামলার কারণে উদ্বিগ্ন।  তবে ঢাকার দাবি, ধর্মীয় কারণে নয়, বেশিরভাগ হামলা রাজনৈতিক কারণে হাসিনার কথিত সমর্থকদের ওপরে হয়েছে।  বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিযোগও রয়েছে যে, ভারতীয় মিডিয়াগুলো হিন্দুদের ওপর সহিংসতাকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করছে।

আর দুদেশের সরকারের মধ্যকার টানাপোড়েনের প্রভাব পড়েছে ভিসার ওপর।  গত ২৬ আগস্ট ভিসা প্রক্রিয়া বিলম্বের কারণে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রে বিক্ষোভ হয়।

এদিকে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে, ভারতের ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে হামলা হয়; আর এর প্রতিবাদে ঢাকাতেও তীব্র প্রতিবাদ করেন বাংলাদেশিরা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877