মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৯ অপরাহ্ন

খুলনায় করোনায় মৃত্যু হার বেড়েছে ১৭ গুণ

খুলনায় করোনায় মৃত্যু হার বেড়েছে ১৭ গুণ

স্বদেশ ডেস্ক: খুলনায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩৪ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬৫২ জন। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই সূচকেই বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলায় বেশি। বছরের প্রথম ৩ মাস আক্রান্তের হার কম থাকলেও এপ্রিলে এসে তা অনেক গুণ বেড়ে যাওয়ায় চিন্তিত চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। খুলনায় মাত্র ১০০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল রয়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে এখানে কোনো সিট খালি নেই। মুমূর্ষু রোগীরাও এসে ফিরে যাচ্ছে। চাপ সামলাতে নতুন করে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট আরেকটি ইউনিট চালুর কাজ শুরু করেছে খুমেক কর্তৃপক্ষ।
খুলনার ডেপুটি সিভিল সার্জন মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সচেতনতামূলক প্রচার বাড়ানো হয়েছে।

কেউ আক্রান্ত হলে সেই পরিবারকে ফোন দিয়ে নির্দেশনা দেয় হচ্ছে। দ্রুত পরীক্ষা করে ফলাফল জানার জন্য সমপ্রতি ১০ হাজার অ্যান্টিজেন কিট আনা হয়েছে। আগে শুধু খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা পরীক্ষা হতো। এখন জেলা সদর হাসপাতালে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে সংক্রমণ দ্রুত শনাক্ত করে ছড়িয়ে পড়া কিছুটা হলেও রোধ করা যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৩ থেকে ১৯শে এপ্রিল পর্যন্ত ৭ দিনে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ১ হাজার ১শ’ ১৩ জন করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৮৬ জনই শনাক্ত হয়েছেন খুলনা জেলায়। বাকি ৯ জেলা মিলে শনাক্ত হয়েছেন ৭২৭ জন। খুলনা জেলায় গত এক সপ্তাহে দিনে গড়ে ৫৫ জনের বেশি করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছেন। খুলনা জেলায় এখন কোভিড-১৯ আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৮ হাজার ৬৫২ জন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, খুলনা জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩৪ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৫১৮ জন। জেলায় আক্রান্ত রোগীর মধ্যে  প্রায় ৮১ শতাংশ খুলনা নগরের। খুলনা নগরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১০৬ জন।
১৫ই এপ্রিল জেলায় একদিনে সর্বোচ্চ ৭৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর আগে ১০ই এপ্রিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭৪ জনের শনাক্ত হয়। এখনো ৮৯৭ করোনা রোগী বাড়িতে ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত বছরের ১৩ই এপ্রিল খুলনার ছোট বয়রার করিম নগরে জেলার প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলায় গত জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ এই ৩ মাসে ৫১৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। বছরের প্রথম ৩ মাসে প্রতিদিন গড়ে ৫ জনের কিছু বেশি করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। অথচ চলতি মাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। চলতি মাসের এ পর্যন্ত  ৯৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং এ সময়ে মারা গেছেন ১৯ জন। মৃত্যুর হার বেড়েছে প্রায় ১৭ গুণ।
খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, এপ্রিলের শুরু থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা দিন দিন বেড়েছে। লকডাউন শুরুর আগে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি একদমই মানেনি। কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় কিছুদিন পর সুফল আসতে পারে।
সেইসঙ্গে করোনা হাসপাতাল সংলগ্ন খুমেক হাসপাতালের সাবেক গ্যাষ্ট্রোলজি বিভাগকেও করোনা হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিটের আওতায় আনা হচ্ছে এমন পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগে থেকে সংস্কার কাজ চলছে সাবেক গ্যাষ্ট্রোলজি ওয়ার্ডের। এছাড়া গত ৫ দিন ধরে সাবেক অর্থোপেডিক ওয়ার্ডটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে জনবল প্রেষণে আনার জন্য প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। অক্সিজেন লাইন স্থাপনেরও পরিকল্পনা নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
খুমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে হাসপাতাল অভ্যন্তরের আইসিইউ ভবনের নিচতলা ও দোতলা মিলিয়ে একশ’ বেডের করোনা হাসপাতালের কার্যক্রম চললেও পুরোপুরি একশ’ বেডের সাপোর্ট দেয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে ৮টি রয়েছে আইসিইউ বেড। দ্বিতীয় তলায় অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে আরো অন্তত: ৩০টি আইসিইউ বেড করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু রোগীর হার যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে বিকল্প ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে। গত বছর খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালে একশ’ বেডের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল করা হলেও এ বছর তা ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ডায়াবেটিক সমিতিও সেখানে আগের মতো তাদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু করেছে। তাছাড়া এক হাসপাতালের জনবল দিয়ে অন্য হাসপাতাল পরিচালনা করা অনেকটা কঠিন। এজন্য খুমেক হাসপাতালের বর্ধিত অংশে অর্থপেডিক ওয়ার্ড স্থানান্তর করার ফলে নিচ তলার ফাঁকা জায়গাকেই করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিট করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, বর্তমানে রোগীর চাপ এতোই বেড়েছে যে, ট্রলিতে রেখেও চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। সমপ্রতি হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের শ্বশুরকে একদিন ট্রলিতে রেখে চিকিৎসা দেয়ার পর বেড দেয়া সম্ভব হয়।
করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা ইউনিটের বেড সংখ্যা বাড়াতে গেলে শুধু বেড বা অক্সিজেন সরবরাহ করলেই হয়না। এর সঙ্গে আরো অনেক কিছু জড়িত আছে। ভেন্টিলেটর চালাতে গেলে এর সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ, মনিটর, সাকার মেশিন, বেড, সাইড ট্রলি, এসি ইত্যাদিসহ অন্তত ৭/৮ প্রকারের আইটেম লাগে। এছাড়া একটি এসি নষ্ট হলে বিকল্প আরো ২/১টি রাখতে হয়। সর্বোপরি প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। সব মিলিয়ে একটি বেডের জন্য কমপক্ষে ৩ লাখ টাকার বাজেট প্রয়োজন হয়।
করোনা হাসপাতালের দ্বিতীয় ইউনিট সম্পর্কে খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ১০০ বেডের করোনা হাসপাতালটি আইসিইউ ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। আরো ৫০ বেডের সমপ্রসারণ কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ড পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। এখন অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা হবে। লজিষ্টিক সাপোর্ট পেলেই আরো ৫০ বেডের প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877