রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:১৬ অপরাহ্ন

শিশুর নাম রাখা নিয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছেন নবীজি (সা.)

শিশুর নাম রাখা নিয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছেন নবীজি (সা.)

স্বদেশ ডেস্ক:

সন্তানের জন্য বাবা-মার পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় উপহার হলো একটি সুন্দর নাম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তাদের পিতৃ পরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃ পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে তোমাদের কোনো বিচ্যুতি হলে তাতে তোমাদের কোনো গোনাহ নেই, তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আহযাব : ৫)।

রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের ও তোমাদের পিতৃ পুরুষের নাম ধরে কেয়ামতের দিন ডাকা হবে। অতএব, তোমরা সুন্দর নাম নির্বাচন করো।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২১৬৯৩)। সন্তানের সুন্দর নাম নির্বাচন করা পিতার কর্তব্য ও দায়িত্ব।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম তারবিয়াতের ব্যবস্থা করা বাবার ওপর সন্তানের হক।’ (মুসনাদে বাযযার : ৮৫৪০)।

সন্তান জন্ম নেওয়ার ৭ দিনের মাথায় সুন্দর নাম রাখা মুস্তাহাব। তবে প্রথম দিন ও অন্য যে কোনো দিন নাম রাখাও নাজায়েজ নয়। এমনকি জন্মের আগেও নাম রাখা জায়েজ। (সুনানে আবু দাউদ : ২৮৪০, তাসমিয়াতুল মাওলুদ ১/১৮)।

কোনো আলেম ও নেককার ব্যক্তির পরামর্শ মতো নাম রাখা শ্রেয়। কেননা, সাহাবায়ে কেরাম তাদের সন্তানদের নাম নির্বাচনের জন্য নবিজি (সা.)-এর কাছে সন্তানকে পেশ করতেন।

সর্বোত্তম নাম নির্বাচন করা কর্তব্য। কেননা, নামের প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে। হাদিস শরিফে আছে, ‘সর্বোত্তম নাম হলো আবদুল্লাহ, আবদুর রহমান।’ (ইবনে মাযাহ : ৩৭২৮)।

ওই নাম যা আল্লাহর দাসত্ব প্রকাশ করে অর্থাৎ যে নামের সঙ্গে ‘আব্দ’ শব্দ সংযুক্ত থাকে এমন নাম রাখা মুস্তাহাব। তবে আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কারও নামে আব্দ শব্দ যোগ করা জায়েজ নেই। যেমন আবদুস শামস ইত্যাদি রাখা জায়েজ নেই। (তাসমিয়াতুল মাওলুদ পৃ. ১৫, মালাবুদ্দা মিনহু)।

হামদ বা আল্লাহতায়ালার প্রশংসা বোঝায় এমন নাম রাখা ভালো। যেমন মাহমুদ, হামেদ, আহমাদ ইত্যাদি। (তাসমিয়াতুল মাওলুদ পৃ. ১৫, মালাবুদ্দা মিনহু)। নবি-রাসূলদের নামে নাম রাখা মুস্তাহাব। যেমন মুহাম্মাদ, ইবরাহিম, ইসমাঈল ইত্যাদি। তবে নবিদের নামের মধ্যে সর্বোত্তম হলো, আমাদের নবির নামে নাম রাখা। (আবু দাউদ : ৪৯৫০, তাসমিয়াতুল মাওলুদ পৃ. ১৫)।

কোনো নেককার ব্যক্তির নামে নাম রাখার প্রচলনও সাহাবিদের মধ্যে ছিল। সুতরাং সুন্দর অর্থবহ যে কোনো নাম রাখা যায়। (মুসলিম : ৫৭২১)।

আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট এমন নাম রাখা যাবে না-যেমন আল্লাহ, রহমান, রহিম ইত্যাদি। আবদুর রহমান ও আবদুর রহিম রাখা যাবে।

আল্লাহর দুশমনের নামে নাম রাখা যাবে না-যেমন ফেরাউন, হামান, কারুন ইত্যাদি। মূর্তির নামে নাম রাখা যাবে না-মালিকুল আমলাক, শাহেন শাহ, আহকামুল হাকিমিন, রাজাধিরাজ ইত্যাদি নাম রাখা নিষেধ। (মুসলিম : ৫৭৩৪, তাসমিয়াতুল মাওলুদ পৃ. ২১)।

মন্দ নামগুলো পরিবর্তন করে ভালো নাম রাখা নবিজির সুন্নত। (মুসলিম : ২১৩৯)।

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, মৃত অবস্থায় জন্ম নেওয়া সন্তানের নাম রাখা মুস্তাহাব। অনুরূপ গর্ভে মারা যাওয়া সন্তানের নাম রাখা মুস্তাহাব। যদি বোঝা না যায় যে, সে ছেলে না মেয়ে, তাহলে এমন নাম রাখার নিয়ম, যা ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্য রাখা হয়। যেমন তালহা, উমাইরা ইত্যাদি। (আল আজকার পৃ. ২৮৫)।

যদি ব্যক্তি এটা খারাপ মনে না করে বা মনে কষ্ট না নেয়, তাহলে কোনো নামে তারখিম অর্থাৎ নামের কোনো অক্ষর বাদ দিয়ে সংক্ষেপে বলা জায়েজ। যেমন খাদিজাকে খাদি বলা। (বোখারি : ২৮৫)। ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, কাউকে ভালো উপাধী দেওয়া বৈধ। আর মন্দ উপাধী দেওয়া হারাম। আর এ ব্যাপারেও ওলামায়ে কেরাম একমত যে, পরিচয়ের এমনটি করা জায়েজ। (সূরা হুজুরাত : আয়াত-১১, আল আযকার পৃ. ২৯০)।

ছেলের নামে কুনিয়াত (উপনাম) রাখা বৈধ। আমাদের নবিজি (সা.)-এর উপনাম ছিল আবুল কাসেম। অনুরূপ ছেলের নাম ছাড়া অন্য নামে উপনাম রাখাও বৈধ। (মুসলিম : ৫৭৪৭)। ইমাম নববি (রহ.) বলেন, অপরিচিত ব্যক্তিকে এমন শব্দে সম্বোধন করা উচিত, যাতে ব্যক্তি কষ্ট না পায় এবং মিথ্যার আশ্রয় না হয়। যেমন, হে ভাই। ওই ব্যক্তির অবস্থা অনুযায়ী যে নাম সঠিক মনে হয়। যেমন রিকশাচালককে রিকশাওয়ালা ভাই বলা। (মুসনাদে আহমাদ : ২০৭৮৪)।

সমাজে বাবা-মার নামের প্রথম অক্ষরের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখার প্রচলন লক্ষ করা যায়। ইসলামে এর কোনো বিশেষত্ব নেই। তবে জরুরি মনে না করে এমনটি করা দোষের কিছুও নয়। (আহকামে জিন্দেগি)।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877