সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
১৪ বছর পর ‘ভুলভুলাইয়া’র ছবিতে অক্ষয় কুমার ‘কিশোর গ্যাং নির্মূলে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা পেয়েছে র‌্যাব’ উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব হারানোর পর থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ বিরোধী দল নিধনে এখনো বেপরোয়া কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে : মির্জা ফখরুল রাজশাহীর দুই জেলায় ভূমিকম্প অনুভূত ঢাকাসহ ৫ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সোমবার বন্ধ কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ, ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিছিন্ন তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে যা বললেন শিক্ষামন্ত্রী গ্রেফতারের আতঙ্কে নেতানিয়াহু, প্রতিরোধের চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রও পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে ১৫০০ কোটি টাকা
কোরবানির ঈদের সময় এতো গরু, অন্য সময় সঙ্কট কেন?

কোরবানির ঈদের সময় এতো গরু, অন্য সময় সঙ্কট কেন?

স্বদেশ ডেস্ক:

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদের সময় চাহিদা মেটানোর পর্যাপ্ত গরু থাকলেও বছরের অন্য সময় এর একটা সঙ্কট আছে।

সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এবার ঈদে কোরবানির জন্য ৯৮ লাখ পশুর সম্ভাব্য চাহিদার বিপরীতে এক কোটি ২২ লাখ প্রাণী রয়েছে।

এর মধ্যে গরু রয়েছে ৫৫ লাখ। এই সংখ্যা কোরবানির জন্য গরুর সম্ভাব্য চাহিদার তুলনায় পাঁচ লাখ বেশি।

ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ায় আট বছর ধরে মূলত কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে ব্যক্তি উদ্যোগে বা খামারে গরু পালন করা হচ্ছে।

ফলে বছরের অন্য সময় চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি থাকায় গরুর গোস্তের দাম হু হু করে বাড়ছে।

দেশে গরুর মাংস এখন প্রতি কেজি সাত শ’ থেকে সাড়ে সাত শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কোরবানির চাহিদা মেটাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ
ঢাকাসহ সারাদেশের কোরবানির হাটে এক সময় ভারত থেকে আসা গরুর আধিক্য দেখা যেত। এখন সেই চিত্র বদলে গেছে।

ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার আকস্মিকভাবেই ২০১৫ সালে তাদের দেশ থেকে বাংলাদেশে গরু প্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল।

সেই থেকে দেশের কৃষক এবং খামারিদের গরু দিয়ে ঈদে কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে।

কয়েকবছর ধরে কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে গরু উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে।

খামারিদের সমিতির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দুই বছর ধরে আট থেকে নয় লাখ গরু উদ্বৃত্ত ছিল।

গত বছর কোরবানির জন্য গরু ছিল ৪৬ লাখ। এর মধ্যে বিক্রি হয়েছিল ৩৮ লাখ।

এর আগের বছর গরু ছিল ৫৫ লাখ। সেখানে উদ্বৃত্ত থেকে গিয়েছিল নয় লাখ গরু।

এবার কোরবানির জন্য ৪০ লাখ গরুর সম্ভাব্য চাহিদার বিপরীতে পাঁচ লাখ বেশি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, এখন কোরবানির জন্য বাংলাদেশ ভারতের গরুর ওপর নির্ভরশীল নয়। বাংলাদেশ পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, এবার ঈদে প্রায় ৯৮ লাখ পশুর চাহিদা রয়েছে। সেজন্য দেশের খামারে এক কোটি ২২ লাখ পশু অর্থ্যাৎ গরু, ছাগল, ভেড়া এবং মহিষ মজুদ রাখা হয়েছে।

এর মধ্যে গরু রয়েছে ৫৫ লাখ।

খামারিদের সমিতির সভাপতির সভাপতি ইমরান হোসেন বলেছেন, যে গরু মজুদ আছে, তাতে এবারো কোরবানির চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত থাকতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।

বছরের অন্য সময় গরুর সঙ্কট
সারা বছরই গরুর গোস্তের চাহিদা থাকে। তবে গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে কোরবানির ঈদের সময়।

কোরবানির ঈদ ছাড়া রমজান মাসেও গরুর গোস্তের চাহিদা বেশি থাকে।

এছাড়া শীতের সময় বিয়েসহ সামাজিক নানা ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য গরুর গোস্তের চাহিদা বাড়ে।

খামারিদের সমিতির নেতা ইমরান হোসেন জানিয়েছেন, সারা বছর ৭৫ থেকে ৮০ লাখ গরুর চাহিদা থাকে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৪০ লাখ গরুর চাহিদা থাকে কোরবানির সময়।

তিনি দাবি করেন, বছরের অন্য সময়ও গরুর চাহিদা মেটানোর চেষ্টা তাদের রয়েছে।

ঢাকার কাছে বিক্রমপুরের একজন খামারি আজিজ আশরাফ বলেছেন, দেশে ছোট বড় মিলিয়ে ১৭ লাখের মতো খামার রয়েছে। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটি খামার এবং কিছু প্রান্তিক কৃষক সারা বছরের জন্য গরুর গোস্তের জোগান দিয়ে থাকে।

এর সাথে যুক্ত হয় কোরবানির সময়ের উদ্বৃত্ত থাকা গরু।

এই পরিস্থিতি বিবেচনায় বছরের অন্য সময় চাহিদার বিপরীতে গরুর সঙ্কট আছে বলে মনে করেন আশরাফ।

‘বছরের অন্য সময়ের জন্য ২৫ থেকে ৩০ লাখ গরুর যে চাহিদা থাকে, তাতে কমপক্ষে পাঁচ লাখ গরুর ঘাটতি থাকে’ বলেন খামারি আজিজ আশরাফ।

তিনি মনে করেন, সেজন্য গরুর গোস্তের বাজার বাড়তি থাকছে সবসময়।

অন্যদিকে কোরবানির জন্য এখন বাংলাদেশ ভারতের গরুর ওপর নির্ভরশীল নেই।

বছরের অন্য সময়ও ভারতের গরু আসা নিষিদ্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার সারা বছরের জন্যই ভারত এবং মিয়ানমার থেকে সীমান্ত দিয়ে গরু আসা নিষিদ্ধ করেছে দুই বছর আগে।

খামারিরা বলেন, নিষিদ্ধ থাকার পরও সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু আসে। তবে তা অতীতের তুলনায় সংখ্যায় অনেক কম। ফলে বছরের অন্য সময় গরুর গোস্তের জোগানে তারও প্রভাব পড়ছে।

ঢাকার মিরপুর এলাকার একটি বাজারের গরুর মাংস বিক্রেতা মোহাম্মদ শরীফ বলেন, কোরবানির সময় বাদ দিয়ে সারা বছর দেশের খামারিদের কাছ থেকে তাদের গরু সংগ্রহে হিমশিম খেতে হয়। বেশি দামে গরু কিনে তারা পোষাতে পারেন না।

ভোক্তাদেরও অভিযোগ রয়েছে, গরুর গোস্তের দাম নিয়ে।

ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা আসমা আহমদ। দুই শিশু সন্তান নিয়ে তাদের চারজনের সংসার।

তিনি এবং তার স্বামী দু’জনই চাকরি করেন। এরপরও দামের কারণে গরুর গোস্ত খাওয়া তারা কমিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য আগে সপ্তাহে দু’দিন গরুর গোস্ত আমরা রান্না করতাম। কয়েকমাস ধরে দামের কারণে আমরা মাসে দু’দিন গরুর গোস্ত খাচ্ছি।’

আসমা আহমদের প্রশ্ন, ‘কোরবানির সময় এত গরু, বছরের অন্য সময় সঙ্কট কেন’?

বছরের অন্য সময়ে ঘাটতি যে কারণে

কোরবানির ঈদে যেহেতু গরুর চাহিদা বেশি থাকে এবং দাম ভাল পাওয়া যায়, ফলে এই ঈদকে টার্গেট করেই কৃষক বা খামারিরা গরু মজুদ করে থাকেন।

সাধারণভাবে এই ধারণা রয়েছে।

খামারিদের অনেকে বলেছেন, গরু পালনে খরচ অনেক বেশি। কারণ গোখাদ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। ক্রমাগতই গোখাদ্যের দাম বেড়ে চলেছে।

এই খরচই এখন সারাবছরের গরুর জোগানে বড় বাধা বলে বলা হচ্ছে।

খরচ মিটিয়ে তিন থেকে ছয় মাস একটি গরু পালন করার পর বছরের অন্য সময়ে লাভজনক হয় না। সেজন্য কৃষক বা খামারিরা কোরবানি ছাড়া অন্য সময়ের জন্য গরু পালনে আগ্রহী হচ্ছেন না।

খামারি আজিজ আশরাফ বলেন, কোরবানির জন্য মোটাতাজা বা স্বাস্থ্যবান গরুর চাহিদা বেশি থাকে। সেজন্য কৃষক বা খামারিদের বিদেশি বিভিন্ন জাতের গরু সংগ্রহ করে তা পালন করতে হয়।

তিনি তার খামারে এবার ঈদের জন্য ছয় মাস ধরে বিদেশি নানা জাতের ৪০টি গরু পালন করেছেন।

এসব গরু সংগ্রহ বা কেনা থেকে শুরু করে লম্বা সময় পালন করার পেছনে বড় অংকের অর্থের বিনিয়োগ তিনি করেছেন।

একটি গরু পালনে গোখাদ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যয়ের কথা চিন্তা করে আশরাফ বছরের অন্য সময়ে মাংসের জন্য গরু পালন করেন না।

বছরের অন্য সময়ের ঘাটতি মানতে রাজি নন মন্ত্রী
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম দাবি করেন, বছরের অন্য সময়ও গোস্তের জন্য গরুর কোনো সঙ্কট নেই।

তিনি বলেন, দুই বছর ধরে ভারত এবং মিয়ানমার থেকে গরু এবং অন্য কোন পশুর গোস্ত আসা যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এর ফলে কৃষক এবং খামারিরা গরু উৎপাদনে বাড়িয়েছে।

দেশ এখন গরুর গোস্তে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তবে খামারিদের অনেকে বলেছেন, চাহিদার বিপরীতে ঘাটতির কারণেই বাজারে গরুর গোস্তের দাম বেড়ে চলেছে।

গত রমজান মাসেই গরুর গোস্তের কেজি সাত শ’ টাকার ওপরে উঠেছিল।

তখন প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খোলাবাজারে সাড়ে পাঁচ শ’ টাকা কেজিতে গরুর গোস্ত বিক্রি করেছিল।

সেই পরিস্থিতি বা গরুর গোস্তের দাম বৃদ্ধির গরুর মজুদের বিষয়কে মেলাতে চান না মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

তিনি গরুর গোস্তের দাম বৃদ্ধির জন্য বাজার ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন।

তিনি বলেন, সারা বছর চাহিদা মেটানোর পরও গরু উদ্বৃত্ত থাকছে।

‘সেজন্য এখন বিদেশে গোস্ত রফতানির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার এবং দেশের খামারগুলোকে সম্প্রসারণে নানা সুবিধা দিচ্ছে।’

খামারিরা অবশ্য বলছেন, দেশে গরুর গোস্তের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করার এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব। কিন্তু তাতে আরো সময় প্রয়োজন।

সূত্র : বিবিসি

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877