সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪০ পূর্বাহ্ন

মানহীন শিশুখাদ্যের লাগাম টানার উদ্যোগ

মানহীন শিশুখাদ্যের লাগাম টানার উদ্যোগ

স্বদেশ ডেস্ক:

বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত বিকল্প শিশুখাদ্যের অবৈধ বিক্রি ও বিপণনের লাগাম টানতে সংশ্লিষ্ট আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান। আইনটি ২০১৩ সালে প্রণীত এবং চার বছর পর ২০১৭ সালে এর বিধি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। তবে এতদিন আইনটি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আইন অনুযায়ী ১৭টি প্রতিষ্ঠান ৯৮টি প্যাকেটজাত বিকল্প শিশুখাদ্যের অনুমোদন চয়েছে। কিন্তু শর্তপূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ৪৮ বিকল্প শিশুখাদ্য অনুমোদন পায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্য অনৈতিক প্রচারে অনেক প্রতিষ্ঠানই দেশে ব্যবসা করে আসছে। এ ক্ষেত্রে অনেকেই শিশুদের সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়টি অগ্রাহ্য করে আসছে। তাই এ ধরনের অনৈতিক বাণিজ্যিক চর্চা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে শিশুখাদ্য ব্যবসায়ীদের অনৈতিকভাবে পরিচালিত কার্যক্রমের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে। যেহেতু জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিবন্ধন দেওয়া শুরু হয়েছে; তাই এখন কোনো প্রতিষ্ঠানই নিবন্ধন ছাড়া ও শর্ত না মেনে পণ্য আমদানি, প্রস্তুত ও বিপণন করতে পারবে না।

জানা গেছে, বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক নম্ব^রে থাকা সত্ত্বেও অবৈধ বিপণনের কারণে শিশুখাদ্যের বাজার বেড়েই চলছে। বাংলাদেশে ৬৫ শতাংশ নারী তাদের শিশুদের পাঁচ মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ পান করান,

যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। কিন্তু তার পরও প্রতিবছরই দেশে বিকল্প শিশুখাদ্যের বাজার বাড়ছে। বাংলাদেশে বিকল্প শিশুখাদ্যের বাজার এখন প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার। লন্ডনভিত্তিক বাজার গোয়েন্দা সংস্থা ইউরোমনিটর ইন্টারন্যাশনালের তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে শিশুখাদ্যের বাজার ছিল মাত্র ৫৫ মিলিয়ন ডলারের।

আইন অনুযায়ী, মায়ের দুধের বিকল্প শিশুখাদ্য ও বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা শিশুর বাড়তি খাদ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এতে ব্যক্তির পাশাপাশি দায়ী প্রতিষ্ঠানকেও শাস্তির আওতায় আনা যাবে। এসব খাদ্য খেয়ে বা সরঞ্জামাদির ব্যবহারের কারণে কোনো শিশু অসুস্থ বা মারা গেলে প্রস্তুতকারীর ১০ বছরের কারাদ- অথবা ৫০ লাখ টাকা অর্থদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন হলে তাতেও কারাদ- ও অর্থদ- হতে পারে। এ বিষয়ে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প ও শিশুখাদ্য পণ্য নিবন্ধন যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ডা. মুরাদ মো. সমশের তবরিছ খান বলেন, ‘শিশুদের সর্বোচ্চ পুষ্টি নিশ্চিতে মাতৃদুগ্ধের যৌক্তিক ব্যবহার এবং কোম্পানিগুলোর অনৈতিক বিপণন নিয়ন্ত্রণেই এই আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ অনৈতিক বিপণনের কারণে মায়েরা যেন প্রভাবিত হয়ে এসব খাদ্যে আকৃষ্ট হয়ে না পড়েন। তারা যেন শিশুর সার্বিক কল্যাণার্থে বুকের দুধ পান করিয়ে যান। সেটি বাস্তবায়নই আইন প্রয়োগের প্রধান উদ্দেশ্য।

ইনফ্যান্ট অ্যান্ড ইয়াং চাইল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্য বলছে, তাদের সদস্য প্রতিষ্ঠান মাত্র ১০টি। যারা সম্পূর্ণ বৈধ প্রক্রিয়ায় দেশে শিশুখাদ্য আমদানি ও বিপণন করে থাকে। তবে এর বাইরে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বিকল্প শিশুখাদ্য আমদানি ও বাজারজাত করে আসছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে কোনো বিকল্প শিশুখাদ্য পণ্য বিপণন করতে হলে অবশ্যই প্যাকেটের গায়ে বাংলায় লেখা থাকতে হবে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, বিদেশ থেকে ব্রিফকেসে করে শিশুখাদ্য পণ্য আমদানি করে বিক্রি করে আসছে। এ ছাড়া অনেক আমদানিকারক বিকল্প শিশুখাদ্য বাল্ক (প্যাকেটজত নয়) এনে প্যাকেট করে বিক্রি করে, যা আমদানি ও প্যাকটজাত করার সময় মানহীন হয়ে পড়ে। এমনকি সে সময় শিশুখাদ্যে জীবাণুর আক্রমণও অস্বাভাবিক নয়। কেউবা আন্তর্জাতিকভাবে মানসম্মত নয় এমন অনেক ব্র্যান্ডের পণ্য সরাসরি এনে বিক্রি করছে।

আমদানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে, আইন প্রয়োগ শুরুর কারণে ইতোমধ্যে বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আইন অনুযায়ী জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের শর্ত মেনে আমদানি করতে পারছে অনেক আমদানিকারক। এতে বাজারে প্রচলিত অনেক শিশুখাদ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ওসব পণ্যে অভ্যস্ত শিশুর বাবা-মায়েরা সমস্যায় পড়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য উৎপাদন বা আমদানিতে চারটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে আইনে উল্লিখিত শর্তসাপেক্ষে পণ্যের অনুমোদন দেওয়া হয়। বিষয়গুলো হলো- শিশুর জন্য প্রস্তুত করা এসব খাদ্য ও সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম তেজস্ক্রিয়তামুক্ত কিনা। এ বিষয়ে উৎপাদনকারী দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা সনদ আছে কিনা। সংশ্লিষ্ট পণ্যের জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট ও কোডেক্স এলিমেন্টারিয়াস কমিশনের সনদ আছে কিনা।

জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান মায়ের বুকের দুধের বিকল্প ও শিশুখাদ্য বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত ও আমদানি করে থাকে; যেখানে প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় ঘটে। জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের আইনে আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৭টি প্রতিষ্ঠান তাদের ৯৮টি পণ্যের বিক্রি ও বিপণনের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। সব ধরনের শর্তপূরণ করায় এর মধ্যে ৫০টি বিকল্প শিশুখাদ্যের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাকিরা শর্তপূরণ করতে পারলে অনুমোদন পাবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877