সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০২:৩৮ পূর্বাহ্ন

জ্বালানি নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে বাংলাদেশের

জ্বালানি নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে বাংলাদেশের

স্বদেশ ডেস্ক:

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে ততই বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বিশেষ করে জ্বালানি খাত আমদানিনির্ভর হওয়ায় বিশ্ববাজার থেকে প্রয়োজনীয় জ্বালানির আমদানি ও সরবরাহ নিয়ে সংকট গুরুতর পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। একদিকে প্রতিনিয়ত বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি), এলপিজিসহ জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়ছে; অন্যদিকে বৈশ্বিক সংকটের কারণে বাজার অস্থির হয়ে পড়ায় চাহিদা অনুুযায়ী জ্বালানি পাওয়া নিয়েও সংকট তৈরি হয়েছে। তার ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণেও সংকট বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সম্প্রতি তার অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপ এখন এলএনজি সংগ্রহে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফলে এলএনজির দাম অনেক বাড়বে। অনেক দেশ বাড়তি দাম দিয়ে জ্বালানি সংগ্রহ করবে। তবে এমন অবস্থা দাঁড়াতে পারে যে, টাকা হলেই সবাই এলএনজি সংগ্রহ করতে পারবে না। আমাদের আরও কিছু সমস্যা আছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট-ট্যাক্স বা শুল্ক আদায় অনেক বেশি পরিমাণে করে। আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক বেশি দামে জ্বালানি সংগ্রহ করতে হয়,

সেই দামের সঙ্গে হিসাব করে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় করে এনবিআর। ফলে জ্বালানি বিভাগকে অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ জ্বালানি কেনা, ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ পরিশোধ করতে হয়। যার সর্বশেষ মূল্য পরিশোধ করতে হয় সাধারণ মানুষকে। তাই এনবিআরের উচিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শুল্ক আদায় করা। তারা কোন কোন পণ্যে কয়েক দফা ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় করছে। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। এখন এলএনজি অনেক বেশি দামে সংগ্রহ করে দেশে সরবরাহ করতে হচ্ছে। ফলে এখানে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়ের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া দরকার।

জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দাম রুবলে পরিশোধ করতে রাজি না হওয়ায় পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। এখন দেশটি যদি ইউরোপের অন্যান্য দেশেও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তবে নিশ্চিতভাবে এ সংকটের ধাক্কা লাগবে বৈশ্বিক এলএনজির বাজারে। অল্প কিছু দেশ যারা এলএনজি সরবরাহ করে ইউরোপ চেষ্টা করবে তাদের কাছ থেকে নিতে। ফলে এলএনজি নিয়ে তৈরি হবে মহাসংকট। এ ঘটনা বাংলাদেশের জন্যও বড় দুশ্চিন্তার কারণ। কেননা বাংলাদেশ কাতার থেকে এলএনজি আমদানি করে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এলএনজি উৎপাদনকারী তিন দেশের একটি কাতার। ইউরোপের অনেক দেশও এখন কাতার থেকে এলএনজি সংগ্রহের চেষ্টা করছে। হঠাৎ এমন ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে এলএনজি আমদানিও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। একই সঙ্গে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম হবে আকাশচুম্বী। প্রায় এক দশক ধরে বাংলাদেশে গ্যাসের সংকট চলছে। শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা পূরণে সরকার ২০১৮ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে। এখন কাতার ও ওমান থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি করা হয়। এ ছাড়া স্পট মার্কেট থেকেও সংগ্রহ করা হয় এলএনজি। কিন্তু বাংলাদেশের অবস্থা এখন এমন হয়ে পড়েছে যে, কোনো কারণে এলএনজি আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে দেশের অধিকাংশ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া গ্যাসের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে চলা শিল্পকারখানার উৎপাদনও হবে ক্ষতিগ্রস্ত।

তবে সরকার চেষ্টা করছে নানা প্রক্রিয়ায় এলএনজি আমদানি অব্যাহত রাখতে। ভবিষ্যতে গ্যাস সরবরাহের অনিশ্চয়তার কথা ভেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সোমবার বাংলাদেশে নিযুক্ত কাতারের নতুন রাষ্ট্রদূতকে চুক্তিটি দীর্ঘমেয়াদে বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। দেশটির কাছে আরও এলএনজি চেয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া সম্প্রতি বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কাতার সফর করে এলএনজির আমদানি বাড়াতে চেষ্টা করছেন।

এদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণে আমদানি খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ফলে বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা এনবিআরকে আমদানির ক্ষেত্রে জ্বালানি মূল্যে ভ্যাট-ট্যাক্স কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আজিজ খান জ্বালানি খাতের সাংবাদিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, ভোজ্যতেলের মতো ডিজেল, ফার্নেস অয়েল এবং এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত। যে ফার্নেস অয়েল টনপ্রতি ২৫০ ডলারে আমদানি করা হতো, এখন ৭০০ ডলার দিয়ে কিনতে হচ্ছে। আগেও ৩০ শতাংশ ডিউটি দিতে হতো, এখনো ৩০ শতাংশ দিতে হচ্ছে। ৭০০ ডলারের ওপর ডিউটি দাঁড়াচ্ছে ২১০ ডলার, যা প্রায় আগের আমদানি মূল্যের সমান। জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে তার চেইন এফেক্ট অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায়। তেলের দাম বেড়ে গেলে সেচের খরচ বাড়বে, তাতে চালের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে, এতে উৎপাদনের পাশাপাশি সরবরাহ চেইনও বিঘ্ন হওয়ার ঝুঁকি আছে। তাই বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যের মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় এনবিআরের উচিত অন্তর্বর্তীকালের জন্য হলেও ডিউটি প্রত্যাহার করা নেওয়া।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877