সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১২:১২ পূর্বাহ্ন

রাশিয়ার ওপর বিশ্ব কতটা নির্ভরশীল

রাশিয়ার ওপর বিশ্ব কতটা নির্ভরশীল

স্বদেশ ডেস্ক:

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লিয়েন ঘোষণা দিয়েছেন, ইইউর সদস্য দেশগুলো যাতে ২০২২ সালের পর রাশিয়ার তেল না কেনে, সে জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে ইইউ সদস্য হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ক্রয় চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে।

গত মার্চে ইইউ এক বছরের মধ্যে গ্যাস আমদানি দুই-তৃতীয়াংশ কমাতে অঙ্গীকার করে। আরও কী করা যায়, তা নিয়ে জোটের মধ্যে আলোচনা চলছে।

যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে রাশিয়ার তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানির ওপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য ধীরে ধীরে চলতি বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়া থেকে তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করবে।

রাশিয়া সতর্ক করে বলেছে, তার তেল নিষিদ্ধ করলে তা বিশ্ববাজারের জন্য বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনবে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইইউতে জীবাশ্ম জ্বালানি বিক্রি করে রাশিয়া তার মাসিক আয় প্রায় দ্বিগুণ করেছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার এ তথ্য দিয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তেল ও গ্যাসের দাম বেড়ে যায়। এ যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া থেকে প্রতি মাসে প্রায় ২২ বিলিয়ন ইউরোর জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি করেছে ইইউ। অথচ ২০২১ সালে ইইউ রাশিয়া থেকে মাসে গড়ে ১২ বিলিয়ন ইউরোর জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি করে।

তেল উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পরই রয়েছে রাশিয়া। অর্থাৎ রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার আগে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির প্রায় অর্ধেক ইউরোপে যেত। ২০২০ সালে নেদারল্যান্ডস ও জার্মানি দৈনিক হিসাবে সবচেয়ে বেশি রাশিয়ার তেল আমদানি করেছে।

ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) তথ্য অনুসারে, সেøাভাকিয়া গত বছর তাদের মোট তেল আমদানির ৯৬ শতাংশ করেছে রাশিয়া থেকে। হাঙ্গেরির ক্ষেত্রে এ হার ৫৮ শতাংশ। তেলের বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজে পেতে এ দেশ দুটিকে অতিরিক্ত এক বছর সময় দেওয়া হবে। গত বছর যুক্তরাজ্যের মোট তেল আমদানির ৮ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। আর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে এ হার ছিল ৩ শতাংশ।

২০১৯ সালে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যে পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে, তার ৪১ শতাংশ রাশিয়া থেকে আসে। যদি ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাসের সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে বিশেষ করে ইতালি ও জার্মানি বড় ধরনের বিপদে পড়বে। কারণ তারা সবচেয়ে বেশি গ্যাস আমদানি করে। যুক্তরাজ্যকে প্রায় ৫ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া। আর রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র কোনো গ্যাস আমদানি করে না। রাশিয়া বেশ কয়েকটি প্রধান পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে গ্যাস পাঠায়। এ গ্যাস প্রথমে আঞ্চলিক সংরক্ষণাগারগুলোতে যায়। তার পর তা মহাদেশজুড়ে বিতরণ করা হয়।

গ্যাসের জন্য ইউরোপ অন্য রপ্তানিকারকদের দিকে যেতে পারে। এ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কাতার, আলজেরিয়া বা নাইজেরিয়া। কিন্তু ইউরোপের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে এই রপ্তানিকারকদের বাস্তবিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইউরোপে অতিরিক্ত ১৫ বিলিয়ন ঘনমিটার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পাঠাতে সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপ জ্বালানিশক্তির অন্যান্য উৎস, যেমন বায়ুশক্তির ব্যবহার বাড়াতে পারে। কিন্তু তা যেমন দ্রুত সময়ের মধ্যে করা সম্ভব নয়, তেমনি তা করা সহজও নয়।

বিশ্লেষক বেন ম্যাকউইলিয়ামস বলেছেন, গ্যাসের চেয়ে তেলের বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজে পাওয়া সহজ হওয়া উচিত। কারণ কিছু তেল রাশিয়া থেকে আসে। এ ছাড়া অন্যত্র থেকেও তেলের প্রচুর চালান আসে।

কিছু দেশ, যারা আইইএর সদস্য, তারা তাদের মজুদ থেকে ১২০ মিলিয়ন ব্যারেল সমতুল্য তেল ছাড় করেছে। এটি এ দেশগুলোর ইতিহাসে তেলের রিজার্ভ থেকে সবচেয়ে বড় ছাড়।

মার্চের শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন জ্বালানির উচ্চমূল্য কমানোর প্রয়াসে আমেরিকার মজুদ থেকে বড় ধরনের তেল ছাড়ের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র চায়, সৌদি আরব তার তেল উৎপাদন বাড়াক। এ ছাড়া ভেনিজুয়েলার তেল সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877