স্বদেশ ডেস্ক:
ইউক্রেন ইস্যুতে সামনে আসা পরমাণু যুদ্ধের হুমকিকে খাটো করে না দেখতে পশ্চিমাদের সতর্ক করেছে রাশিয়া। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, কিয়েভকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো মূলত রাশিয়ার সঙ্গে ‘ছায়াযুদ্ধে’ লিপ্ত রয়েছে। কাজেই পরমাণু সংঘাতের ঝুঁকিকে পশ্চিমারা তুচ্ছ করে দেখতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন সংঘাত অবসানে কোনো চুক্তি সই করতে হলে তা মূলত নির্ভর করবে মাঠের সামরিক পরিস্থিতির ওপর। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ল্যাভরভের কাছে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ এড়ানোর গুরুত্ব জানতে চাওয়া হয়। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে ১৯৬২ সালে কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের তুলনা হয় কিনা জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তিনি বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে পরমাণু যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার নীতিতে অটল রাশিয়া। এটিই আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। কিন্তু বর্তমানে যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তা বিবেচনাযোগ্য।’
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এসব ঝুঁকি কৃত্রিমভাবে বাড়াতে চাই না। কিন্তু অনেকেই তা চাচ্ছেন। বিশ্ব মারাত্মক ঝুঁকিতে। এমন পরিস্থিতিকে আমরা হালকা করে দেখতে পারি না।’
দুই মাসের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন চলছে। ১৯৪৫ সালের পর কোনো ইউরোপীয় দেশে এটাই সবচেয়ে বড় আক্রমণ। এতে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়েছে, ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে বহু শহর ও নগর। প্রায় ৫০ লাখ ইউক্রেনীয় দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
মস্কো নিজেদের পদক্ষেপকে ‘বিশেষ অভিযান’ বলছে। তাদের দাবি, এই অভিযানের লক্ষ্য ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ করা এবং দেশটিকে ফ্যাসিবাদ থেকে রক্ষা করা। ইউক্রেন এবং পশ্চিমাদের দাবি মস্কো এসব মিথ্যা অজুহাতে উসকানিহীন আগ্রাসন শুরু করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
মস্কোর পদক্ষেপের পক্ষ নিয়ে আলোচনার ঘাটতির জন্য ওয়াশিংটনকে দায়ী করেন সের্গেই ল্যাভরভ। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কার্যত সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ ইউক্রেনে রাশিয়ানদের রক্ষা করতে আমরা বাধ্য ছিলাম।’
ল্যাভরভ দাবি করেন, পশ্চিমারা স্পর্শকাতর অস্ত্র সরবরাহ করায় এই সংঘাত অবসানের বদলে দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ে পরিণত হতে যাচ্ছে। ইউক্রেনকে জাভেলিন ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, সাঁজোয়া যান, অত্যাধুনিক ড্রোন সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘এসব অস্ত্র রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বৈধ লক্ষ্যবস্তু হবে। ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের অস্ত্রাগারগুলো একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া কী করা যায়? যুদ্ধ মানে যুদ্ধ। ন্যাটো মূলত আমাদের সঙ্গে ছায়াযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।’
কিয়েভের কর্তৃপক্ষ আস্থার সঙ্গে বৈঠকে বসেনি দাবি করে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মতো। আলোচনা অব্যাহত না রেখে কিংবা সমস্যার সুরাহা না করে জনগণের সঙ্গে তিনি খেলছেন।