স্বদেশ ডেস্ক:
২০২৩ সালে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি না মেনে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাতে অংশ নেবে না বিএনপি। বরং ওই ভোট যেন অনুষ্ঠিত হতে না পারে, সেজন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আমাদের সময়কে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না, এটা তো জাতীয় ও আন্তর্র্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের যে দাবি এটা এখন শুধু বিএনপির দাবি নয়, সর্বজনীন দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, যে নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারবে না, সেই নির্বাচনে যাওয়া অর্থহীন। বিএনপির আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের দাবি না মেনে নির্বাচনের উদ্যোগ নিলে তা প্রতিরোধের ডাক দেওয়া হবে। দলের শীর্ষ নেতা নীতিগতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেও একই তথ্য জানা যায়।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের দলের অবস্থান স্পষ্ট- শুধু ২০২৩ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদই নয়, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। সবশেষ গত রবিবার আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিষয়টি আরও পরিষ্কার করেছেন। তা হচ্ছে- এই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যারা এই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে তাদের জাতীয় বেইমান খেতাব দেওয়া হবে।
বিএনপির ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, দলের শীর্ষ নেতার কাছে খবর আছে এবারও দল ও জোটের কিছু নেতা নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের চেয়েও নির্বাচন যেতে বেশি আগ্রহী। আগামী জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে দেশি-বিদেশিদের কাছে বিএনপির অবস্থান অস্পষ্ট ছিল। দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা আমাদের সময়কে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট হলো।
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে দলের শীর্র্ষ নেতার অবস্থান স্পষ্ট করার পর গতকাল সোমবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থাসহ দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এই বৈঠকে নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন। বৈঠকে নিরপেক্ষ সরকার আন্দোলন জোরদার করতে ঐক্য প্রক্রিয়ার কাজ ত্বরান্বিত করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তাগিদ দেওয়া হয়।
দলের ক‚টনৈতিক উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন নেতা আমাদের সময়কে বলেন, বিএনপির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোর ক‚টনীতিকদের বিভিন্ন সময়ে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গেও তারা কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্র্বাচন দেখতে চান। এই অবস্থার মধ্যে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। এ সময় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান মোমেন। এ নিয়ে দেশের রাজনীতিতে বেশ আলোচনা-সমালোচনা দেখা দেয়।