সোমবার, ২৭ মে ২০২৪, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানিসঙ্কট

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানিসঙ্কট

স্বদেশ ডেস্ক:

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া পানিতে দুর্গন্ধও বেড়েছে আগের চেয়ে বেশি। তীব্র গরম ও পবিত্র রমজানের রোজার মধ্যে পানিসঙ্কটে নানাবিধ সমস্যায় পড়ছেন নগরবাসী। বিশুদ্ধ পানির অভাবে নামাজ, রোজা, ইফতারি ও সাহরি ঠিকমতো করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু দায়সারা বক্তব্য দিয়েই পার করছে ঢাকা ওয়াসা।

ফকিরাপুল এলাকার বাগিচা গলি, মসজিদের গলি, গরমপানির গলিসহ আশপাশের অনেক বাড়িতে গত দেড় সপ্তাহ ধরে পানিসঙ্কট দেখা দিয়েছে। ১৯০/এ, ফকিরাপুলের বাসিন্দা কাজী সাইফুদ্দিননয়া দিগন্তকে বলেন, গত ২৭ মার্চ থেকে বাসায় ঢাকা ওয়াসার লাইনের পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ৯তলা বাড়িতে পানি না পাওয়ায় বাসিন্দাদের নাকাল হতে হচ্ছে। অনেক চেষ্টা করে দিনে দুই-তিন গাড়ি করে পানি মিলছে। যার জন্য গাড়িপ্রতি আমাদের দিতে হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা করে। কিন্তু এতে চাহিদা মিটছে না। রমজানে ওজু, গোসল ও খাবার পানি নিয়ে আমরা খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি। এটা বলে বোঝাতে পারব না। বিষয়টি ফকিরাপুলস্থ ঢাকা ওয়াসা অফিসে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তাদের লোকজন এসে একটি লাইনে পলিথিন পেয়েছে। সেটা পরিষ্কার করার পর শনিবার থেকে অল্প কিছু পানি আসছে। কিন্তু এখনো সম্পূর্ণভাবে চালু হয়নি। তিনি বলেন, গত বছর নতুন লাইন স্থাপনের পর থেকেই গরম এলেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে গত বছরও অভিযোগ দেয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান।

ঢাকা ওয়াসার ফকিরাপুল অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমাননয়া দিগন্তকে বলেন, গরমের কারণে পনির চাহিদা বেড়ে গেছে। এ ছাড়া পানির উৎপাদনও কম হচ্ছে। এ কারণে কিছুটা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি।

শুধু ওই এলাকাতেই নয়, বাড্ডার খিলবাড়ীর টেকের বাসিন্দারা গত তিন সপ্তাহ ধরে পানি সঙ্কটে রয়েছেন। গভীর রাত পর্যন্ত তারা পানির জন্য অপেক্ষা করেও স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পানি পাচ্ছেন না। রাত-দুপুরে পাইপলাইনে কিছু পানি এলেও এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর আর পানি থাকে না। এ সময় সবাই তাদের চাহিদামতো পানি সংগ্রহ করতে পারছেন না। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাড্ডা এলাকায় অবস্থিত ঢাকা ওয়াসা অফিসে এলাকাবাসী অভিযোগ জানালেও কোনো প্রতিকার মিলছে না। পানির লাইনে পানি না পেলেও টাকা জমা দিয়ে পানির গাড়ি মিলছে। পানি সঙ্কটে তারা রমজান মাসে ওজু, গোসল করতে পারছেন না। আর ৩০০ টাকার পানির গাড়ি ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন।

রাজধানীর কাঁঠালবাগান এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে পানির সঙ্কট চলছে। একটু পানির আশায় সারাদিন অপেক্ষায় থেকেও কাক্সিক্ষত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝেমধ্যে যা একটু পানি আসে, সেই পানিও ব্যবহার অনুপোযোগী।

মুগদা এলাকায় পানিসঙ্কট না থাকলেও দুর্গন্ধের কারণে পান করা যায় না। এলাকার বাসিন্দা ও শাহাবুদ্দিন আয়েশা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আহমাদুল কবির জাকির নয়া দিগন্তকে বলেন, পানিতে অনেক দুর্গন্ধ। খাওয়া যায় না। এ জন্য ওয়াসার এটিএম বুথ থেকে কার্ড করে নিয়েছি। সেখান থেকে পানি এনে খেতে হয়। আর বাসার পানি দিয়ে গোসল করলেও গায়ে চুলকানির মতো দাগ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, পানির জন্য আমাদের দ্বিগুণ খরচ করতে হচ্ছে।

ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, গ্রীষ্মের তাপদাহের সাথে রাজধানীবাসীর পানির চাহিদা বাড়লেও ঢাকা ওয়াসার উৎপাদন কমেছে। এ সময় শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গার পানিতে বেড়েছে দূষণ। এসব পানি পরিশোধন করে খাবার উপযোগী করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফলে সায়েদাবাদ ও চাঁদনীঘাট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট থেকে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম পানি উৎপাদন করা হচ্ছে। একইভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ও লোডশেডিং বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর নলকূপে পানির উৎপাদনও কমে গেছে। এ অবস্থায় চাহিদার আলোকে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। ফলে চৈত্রের তাবদাহের মধ্যে রোজা রেখে মানহীন পানি নিয়ে চরম বিপাকে রাজধানীবাসী। নিরুপায় হয়ে এসব পানি পান করে পানিবাহিত ডায়রিয়াসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন নগরবাসী।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877