শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০১:৪৫ অপরাহ্ন

বিশ্ব অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব, দুর্ভিক্ষের শঙ্কা

বিশ্ব অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব, দুর্ভিক্ষের শঙ্কা

স্বদেশ ডেস্ক:

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার এক মাস পূর্ণ হতে যাচ্ছে আর দু’দিন পর। চার কোটি ৪০ লাখ মানুষের পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হামলার সময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছিলেন- যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ ইউক্রেন রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এর পর এই এক মাসে ইউক্রেনের বন্দরনগরী মরিপোল, খারকিভসহ নানা অঞ্চল বোমাবর্ষণে তছনছ হয়ে গেলেও এখনো দেশটিকে নিজেদের আয়ত্তে আনতে পারেনি রাশিয়া। উল্টো পশ্চিমা অস্ত্র-সাহায্য নিয়ে ইউক্রেন সেনারা বিশ্বের দ্বিতীয় সামরিক শক্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

গতকাল বুধবারও দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা ও পাল্টা প্রতিরোধ অব্যাহত ছিল; সেই সঙ্গে হচ্ছে প্রাণহানিও। প্রায় এক মাসের এই যুদ্ধে কোনো পক্ষ এখনো চূড়ান্ত সফল না হলেও, বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়েছে এর মারাত্মক প্রভাব। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোর দেওয়া একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় অর্থনৈতিকভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে রাশিয়া, যার প্রভাব পড়েছে দেশটির জনজীবনে।

বিশ্ববাজারে তেলের দাম ছুঁয়েছে রেকর্ড। খাদ্যপণ্যের দামও বাড়ছে হু হু করে। এ ছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশই বিশ্বে গম, রাইয়ের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য ও সারের অন্যতম রপ্তানিকারক। যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব পণ্যের রপ্তানিতেও প্রভাব পড়েছে। এমনিতেই কোভিড মহামারীর কারণে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ব অর্থনীতি রীতিমতো বিপর্যস্ত অবস্থা পার করছে। তার ওপর এই যুদ্ধ পরিস্থিতিকে এমন নাজুক করে তুলতে পারে যে, এর পরিণতি হতে পারে ধারণাতীত। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ বিশ্বনেতাদের হুশিয়ার করেছে, অনাকাক্সিক্ষত এই যুদ্ধ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডেকে আনতে পারে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ।

বিজনেস রেকর্ডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এক মাসের যুদ্ধের সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক জ্বালানির বাজারে। কারণ রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী এবং রপ্তানিকারক দেশ। তাই যুদ্ধ শুরুর পর দেশটির তেল-গ্যাস সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হবে- এই আশঙ্কা থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে, যা এক পর্যায়ে ১৩৯.১৩ ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। এটি ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ইতোমধ্যে রাশিয়াকে দমাতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সে দেশ থেকে তেল-গ্যাস আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েছিল তেলের উৎপাদন বাড়াতে; কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকার কারণে পশ্চিমা এই আহ্বানে অতটা সাড়া দেয়নি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো, যা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে।

অন্যদিকে খাদ্যপণ্যের রপ্তানিও এই যুদ্ধের কারণে সংকটে পড়েছে। ইতোমধ্যে যুদ্ধে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে ইউক্রেনের কৃষিব্যবস্থা। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার কারণে থমকে গেছে রাশিয়ার খাদ্যপণ্য রপ্তানি। পরিস্থিতি কতটা নাজুক হয়ে উঠতে পারে, সে সম্পর্কে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বলেছে, যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্য ও সারের দাম ৮ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গিয়ে এ সংকট আরও জটিল হয়ে উঠবে, যার ভার বহন করা খাদ্যে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য কঠিন হয়ে উঠবে। সেসব দেশে অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা ৮০ লাখ থেকে এক কোটি ৩০ লাখ পর্যন্ত বাড়তে পারে। বিশেষ করে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, সাবসাহারান অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো এ বছর মারাত্মক খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও সতর্ক করেছেন, ইউক্রেন সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার ঝড় তৈরি হতে পারে।
চলতি মাসের শুরুতে বিশ্ব অর্থনীতিতে এই যুদ্ধে মারাত্মক প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতির ওপর যুদ্ধের যে প্রভাব পড়তে যাচ্ছে, তা হবে খুবই মারাত্মক। যুদ্ধ যত বাড়বে, অর্থনীতির ক্ষতি হবে ততো ভয়াবহ। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যেসব অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেগুলোর বড় ধরনের পরিণতি রয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে যেসব দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, সেসব দেশে এর বেশি প্রভাব পড়বে।

এদিকে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে গতকালও যুদ্ধ অব্যাহত ছিল। রাজধানী কিয়েভের কাছের মাকারিভসহ দেশের কিছু কিছু অঞ্চল রাশিয়ার কাছ থেকে ইউক্রেনীয়রা পুনঃনিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে দাবি করেছে। বন্দরনগরী মরিপোলেও রুশ হামলা অব্যাহত আছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, লক্ষাধিক বেসামরিক মানুষ খাদ্য ও পানিবিহীন অবস্থায় এখনো মরিপোলে আটকা পড়ে আছে। শহরে মানিবক সাহায্য পৌঁছানোর যানগুলো বাধা দিচ্ছে রুশ সেনারা। জরুরি উদ্ধারকর্মীদের করা হচ্ছে বন্দি। দক্ষিণ-পূর্ব লুহানস্কে এদিন একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে রুশ গোলাবর্ষণে শিশুসহ ৩ জন নিহত হয়েছে। অবরুদ্ধ উত্তরাঞ্চলীয় চেরনিহিভ শহরেও একের পর এক আঘাত হানছে গোলা। শহরটির মেয়র ভøাদিসøাভ অ্যাট্রোশেঙ্কো জানিয়েছেন, হামলার মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে, দিনে তাদের ৪০টির বেশি মতৃদেহ দাফন করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে কাল বেলারুশে ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে রাশিয়ার রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধকে মাথায় রেখে পূর্ব ইউরোপের দেশ স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়ায় সেনা সংখ্যা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ন্যাটো।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877