শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

বিপর্যস্ত কিয়েভে কারফিউ

স্বদেশ ডেস্ক:

রুশ হামলায় বিপর্যস্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে নগর প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিতস্খো এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেছেন, মঙ্গলবার কিয়েভবাসীর জন্য কঠিন দিন হতে পারে। হয়তো এদিন শহরবাসীকে মারাত্মক মুহূর্তের মুখোমুখি হতে হবে। এর আগে গত সোমবার রাত থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত কিয়েভের বিভিন্ন আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলা চালায় রুশ সেনারা। হামলা হয় একটি মেট্রো স্টেশন ও দিনিপ্রো বিমানবন্দরেও। এসব হামলায় অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগরীর মেয়র।

বিবিসি, সিএনএন, আল জাজিরাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, গত সোমবার রাত থেকে কিয়েভ এবং এর আশপাশের অঞ্চলে রুশ হামলার মাত্রা বেড়েছে। গতকাল ভোরের আলো ফুটতেই কিয়েভের আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে ঝাঁকে ঝাঁকে বোমাবর্ষণ করে রুশ বিমান। ইউক্রেন সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বোমাবর্ষণের সঙ্গে গোলাবর্ষণও সমানতালে চলছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ পশ্চিম কিয়েভের সিভাতোসিনস্কি জেলা এবং লাগোয়া শহর ইরপিনে। এ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী হাস্তামেল এবং বুচাতেও রুশ সেনারা রাতভর হামলা চালিয়েছে।

হামলায় মানবিক বিপর্যয়ের শিকার ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপোল। এক সময় সাজানোগোছানো এই শহরজুড়ে এখন কেবলই ভবনের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে আছে। গত এক সপ্তাহে এই শহরে মুহুর্মুহু রুশ হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৫শ ছাড়িয়ে গেছে। যুদ্ধাবস্থার মধ্যে এত লাশ সমাহিত করতে না পারায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁড়া হয়েছে গণকবর। তবে গতকাল কিছু মানুষ মারিওপোল ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছেন।

শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার অন্তত ১৬০টি ব্যক্তিগত গাড়ি মানবিক করিডোর দিয়ে শহর ত্যাগ করেছে। এখনো দুই হাজার যানবাহন মারিওপোল ত্যাগের অপেক্ষায় আছে। হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দেশটির আরেকটি শহর খারকিভও। সেখানেও দেখা গেছে গণকবরের সারি। নগরীর আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ওলেহ সাইনিহুবভ জানিয়েছেন, গত সোমবার রাতেই অন্তত ৬৫ বার খারকিভে হামলা চালিয়েছে রুশ বিমান। এ ছাড়া গত কয়েকদিনের হামলায় নগরীর অন্তত ৬শ ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

যদিও ইউক্রেনজুড়ে যে ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানি চলছে, তার ছাপ নেই দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ভাষায়। উল্টো প্রতিরোধ ও পাল্টা আক্রমণের পক্ষেই নিজের মত ব্যক্ত করেছেন তিনি। গতকাল এক ভিডিওবার্তায় জেলেনস্কি রুশ সেনাদের হুশিয়ারি দিয়ে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি ইউক্রেনের জনগণের পক্ষ থেকে আপনাদের একটি সুযোগ দিচ্ছি। সেটা বেঁচে থাকার সুযোগ। যদি আমাদের বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন, তা হলে মানুষের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা উচিত, সেভাবে শোভনীয় আচরণ আপনাদের সঙ্গে করব।

হামলার এই তীব্রতার মধ্যেই কিয়েভ যাচ্ছেন পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী। বিবিসি জানিয়েছে, তিন প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেন সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতার পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন নিশ্চিত করতেই তারা দেশটিতে সফর করবেন।

এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে চতুর্থ দফার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। নতুন এ সিদ্ধান্তের আওতায় রাশিয়ায় বিলাসবহুল পণ্য রপ্তানি ও স্টিলের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়ার ১১ নিরাপত্তা কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নিষেধাজ্ঞায় পড়া সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে রাশিয়ান ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান ভিক্টর জলোতভ, ফেডারেল সার্ভিসের প্রকৌশলগত সহযোগিতা বিভাগের প্রধান দিমিত্রি শুগায়েভ, রসোবরোনেক্সপোর্ট সিইও আলেক্সান্দার মিখায়েভও রয়েছেন। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছেন রাশিয়ার আটজন উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877