স্বদেশ ডেস্ক: অবশেষে দেশের ৬৪ জেলাই প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর আওতায় চলে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে নেত্রকোনা বাদে অন্য সব জেলায় ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসাধীন থাকার কথা জানানোর পরদিন গতকাল দুপুরেই ওই জেলায় পাঁচ রোগী শনাক্তের খবর পাওয়া গেল। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরো চারজন। এর মধ্যে রয়েছেন ঢাকায় কর্মরত টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের অধিবাসী পুলিশের এক নারী এসআই। এ ছাড়া বরিশালের গৌরনদীতে নারী ও কাউখালীতে কিশোর এবং নারায়ণগঞ্জের একটি হাসপাতালে স্কুলশিক্ষিকা চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন। এ দিকে গত এক বছরে ঢাকায় যাননি এমন ব্যক্তিরাও কয়েক জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবরে নতুন করে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এডিস মশা ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাবনা ও রংপুরে এমন ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মশা পরীক্ষার বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসায় মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
প্রাণ গেল এসআই কোহিনুরের : ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পুলিশের এসআই ভূঞাপুরের কোহিনুরের (৩৩) মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত অবস্থায় প্রথমে তিনি ছিলেন রাজারবাগ পুলিশলাইনস হাসপাতালে। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গতকাল বুধবার রাজারবাগে সকাল সাড়ে ৯টায় তার প্রথম জানাজা এবং গ্রামের বাড়ি ভূঞাপুরের অর্জুনায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। কোহিনুরের সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে। জানা যায়, কোহিনুর সিটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গুরুতর অবস্থায় সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ক্রমেই তার অবস্থার অবনতি হয়। মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে কোহিনুরকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তাহিয়া নামে তার ১৮ মাসের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
গৌরনদীতে নারীর মৃত্যু : বরিশাল ব্যুরো জানায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জেলার গৌরনদী উপজেলার পশ্চিম আশোকাঠী গ্রামে মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে আলেয়া বেগম (৫৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুল মান্নান ফকিরের স্ত্রী। গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের আবাথসিক মেথডিক্যাল অথফিসার ডা: মাহবুব আলম মির্জা মৃতের স্বজনদের বরাত দিয়ে জানান, আলেয়া বেগম ঢাকায় বেড়াতে গিয়ে জ্বর নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি প্রাইভেট চিকিৎসক দেথখিয়ে বাথইরের একথটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। পরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গুর বিষয়থটি নিথশ্চিত হয়ে আলেয়াকে নিয়ে তার স্বজনরা চিথকিৎসার জন্য গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়। এর আগে মঙ্গলবার সকালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই যুবক মারা গেছেন। এ দিকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত শেবাচিম হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৫০ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
কাউখালীতে কিশোরের মৃত্যু : কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার গোসনতারা গ্রামের আদম আলীর পুত্র সোহেল (১৫) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে। সোহেল গত সোমবার প্রথমে কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেয়, পরে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার মারা যায়। এ দিকে আতঙ্কে দিনের বেলায়ও উপজেলার অনেকেই তাদের শিশুসন্তানকে মশারির নিচে রাখছেন।
স্কুল শিক্ষিকার মৃত্যু : শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, জাজিরা উপজেলার জবর আলী আকনকান্দি গ্রামের বর্ষা আক্তার (২৬) নামে এক স্কুলশিক্ষিকা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার সাইনবোর্ড এলাকার বেসরকারি একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি শরীয়তপুরের জাজিরার শাহেদ আলী মাদবরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ছিলেন। এ ছাড়াও জেলায় গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৫ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর তাদের ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই আকনকান্দি গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী বর্ষা (২৬) জ¦রে আক্রান্ত হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। পরের দিন তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু সেখানে ভর্তি করানো সম্ভব হয়নি। এরপর গত শনিবার তাকে সাইনবোর্ড এলাকায় প্রোঅ্যাকটিভ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একপর্যায়ে মঙ্গলবার রাতে তার মৃত্যু হয়।
পাবনায় হাসপাতালে ৩৮ জন : বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত ১০ দিনে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন। এর মধ্যে অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষেণে রয়েছেন ১২ রোগী। তাদের হাসপাতালের বেডে মশারি টাঙিয়ে আলাদা করে রাখা হয়েছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগ ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে এই হাসপাতালে এসেছে। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, দুইজন এমন রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে যারা এক বছরের মধ্যে ঢাকা যায়নি। এরা হলেন, সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের জাকির হোসেন (১৫) ও চরঘোষপুর এলাকার মিজান প্রামাণিক (২৫)। স্থানীয়ভাবে দুইজন আক্রান্ত হওয়ায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে লোকজনের মধ্যে। সিভিল সার্জন ডা: মির্জা মেহেদী ইকবাল এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, আমরা পাবনা শহরের মশা পরীক্ষার জন্য পরিকল্পনা করেছি। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি পাঠিয়েছি।
ময়মনসিংহ মেডিক্যালে ২৪ ঘণ্টায় ৬৩ রোগী : ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকাল বিকেলের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন আরো ৬৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৪৩, মহিলা ১১ এবং শিশু ৯ জন। এর আগের দিন ভর্তি হয়েছিলেন ৬৬ জন। সব মিলিয়ে সেখানে এখন চিকিৎসাধীন আছেন ১৫৩ জন। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: এ বি এম শামছুজ্জামান জানান, এদের কেউই আশঙ্কাজনক নয়। বহিরাগত ও জরুরি ইউনিটের দু’টি প্যাথলজিতে ডেঙ্গুর উপস্থিতি পরীক্ষা করতে ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে ‘এনএস-১ অ্যান্টিজেন টেস্ট’ করে ৮২ জনকে শনাক্ত এবং তাদের ৯ জনের পজেটিভ হওয়ায় ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এ দিকে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা: কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনএস-১ কিট সরবরাহ করা হয়েছে।
খুলনায় ৮ ক্লিনিককে জরিমানা : খুলনা ব্যুরো জানায়, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত নতুন করে ৯ ডেঙ্গুরোগী নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে খুলনায় চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৯ জনে। এ দিকে ডেঙ্গু পরীক্ষায় অতিরিক্ত টাকা নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে আটটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিককে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আরাফাতুল আলম ও ইমরান খান। সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, খুলনায় মোট ডেঙ্গুরোগী ৮২ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৩ জন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩৯ জন। তবে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর তথ্য বা সংখ্যা দিতে অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের সাথে নানা টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান খান জানান, বিভিন্ন অভিযোগে খুমেক হাসপাতালের সামনের বিশ্বাস ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৫০ হাজার টাকা, সন্ধানী ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৭০ হাজার টাকা, নিউ সাউথ জোন হাসপাতালকে ৫০ হাজার টাকাসহ আটটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নেত্রকোনায় অবশেষে ৫ রোগী শনাক্ত : নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায়নি স্বাস্থ্য বিভাগের এমন ঘোষণার দুই দিনের মাথায় জেলায় পাঁচ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নেত্রকোনায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় ১০ উপজেলায় এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা শুরু হয়েছে। নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা: মো: নিজামুল হাসান জানান, মঙ্গলবার একজন ও বুধবার বেলা ২টা পর্যন্ত চার ডেঙ্গুরোগীর আগমন ঘটে। সিভিল সার্জন ডা: তাজুল ইসলাম খান সত্যতা স্বীকার করে গণমাধ্যমকে জানান, পাঁচ ব্যক্তি আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসার পর সেখানে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি না থাকায় তাদের প্রাইভেট ক্লিনিকে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডেঙ্গুরোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
চাঁদপুরে চিকিৎসাধীন ২৩ রোগী : চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, গত ১৭ দিনে জেলায় ৭৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে এখানে এসেছে। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৩ জন রোগী। এদের মধ্যে ছয়জন চাঁদপুরে আক্রান্ত হলেও বাকিরা ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এসব রোগী হাসপাতালে একই সাথে রাখায় অন্য রোগীরা আছেন আতঙ্কে। অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের আলাদাভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: আনোয়ারুল আজিম জানান, আক্রান্তদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
সিলেটে নতুন ১৪ রোগী
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসাধীন থাকা ছয়জন ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। নতুন ভর্তি হওয়াদের মধ্যে একজন শিশু, তিনজন মহিলা ও ১০ জন পুরুষ। ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই হাসপাতালে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক রোগী ভর্তি হন গত ৭ জুলাই। এরপর মাঝে-মধ্যে এক-দু’জন করে ভর্তি হচ্ছিলেন। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ওসমানীতে এসেছেন ৫৯ জন। প্রতিদিনই ওসমানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে খোলা হয়েছে তিনটি ডেঙ্গু কর্নার। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ নজরদারিতে চিকিৎসা দেয়ার জন্য হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: শিশির চক্রবর্তীকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নরসিংদীতে আতঙ্ক : নরসিংদী সংবাদদাতা জানান, জেলাজুড়ে মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ২৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে নরসিংদী জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোনো মানুষের মৃত্যুর ঘটনা নেই। গত মঙ্গলবার বেলা ৩টার পর থেকে এ পর্যন্ত নতুন করে কোনো ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়নি। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই পর্যন্ত নরসিংদীতে ২৯ জন ডেঙ্গু রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ৯ জন ও নরসিংদী সদর হাসপাতালে ২০ জন। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে সাতজন। অন্যরা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার সবচেয়ে বড় সরকারি দু’টি হাসপাতাল নরসিংদী সদর ও ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গুশনাক্ত করার লজিস্টিক সাপোর্ট ও রিএজেন্ট নেই।
রংপুরে কন্ট্রোল রুম : রংপুর অফিস জানায়, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা। গত ১২ দিনে হাসাপাতালটিতে ৪৫ ডেঙ্গু শনাক্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে রংপুর সিটি মেয়রের নেতৃত্বে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। তবুও আতঙ্ক কাটছে না নগরবাসীর। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের পরিচালক ডা: মুলতান আহমেদ জানান, গত ১৯ জুলাই থেকে বুধবার বিকেলে পর্যন্ত ৪৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসাপাতালে ডেঙ্গু রোগী পরীক্ষার যন্ত্রপাতি কেনার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই তা কেনা হবে। মশক নিধন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য সিটি কন্ট্রোল রুম (হট-লাইন ০১৭৩৩-৩৯০১৫০) খোলা হয়েছে।
রামেকে আরো ১৯ রোগী : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নতুন করে আরও ১৯ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় তারা ভর্তি হন। এ নিয়ে হাসপাতালে এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্য্যা ৩৮ জন।
না’গঞ্জে এ পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যু : নারায়ণগঞ্জ সংবাদাতা জানান, ঢাকার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে নারায়ণগঞ্জেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেসরকারি হিসেবে ১১২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। সরকারি হিসাব মতে এই সংখ্যা ৭০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন তিনজন। এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (‘গ’ অঞ্চল) আফসার উদ্দিন। তিনি ধানমন্ডির গ্রিনরোড সেন্ট্রাল হাসপাতালে সাত দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকার পর বর্তমানে রূপগঞ্জে অবস্থান করছেন। অপরদিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকার প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন মিন্টু (৪৫), শহরের ইসদাইর এলাকার শাওন কবীর সালেহীন (৩৮) এবং সর্বশেষ ফতুল্লার বক্তাবলি এলাকার শান্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।