শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন

মুসলিম যুবকের ডেলিভারি করা খাবার ফেরত নিয়ে ভারতে বিতর্ক

মুসলিম যুবকের ডেলিভারি করা খাবার ফেরত নিয়ে ভারতে বিতর্ক

স্বদেশ ডেস্ক: এক অহিন্দুকে কেন তার খাবার ডেলিভারি করতে পাঠানো হয়েছে, এই প্রশ্ন তুলে খাবারের অর্ডার বাতিল করে দিয়েছিলেন ভারতের মধ্যপ্রদেশের এক বাসিন্দা। অর্ডার বাতিল করার কথা তিনি ঘোষণা করেন টুইটারে। তার উত্তরে ‘জোম্যাটো’ নামের ওই জনপ্রিয় ফুড ডেলিভারি অ্যাপ টুইট করেই জানিয়েছে ”খাবারের কোনও ধর্ম হয় না।”

এ নিয়ে বুধবার ভারতীয়দের টুইট হ্যান্ডেলগুলি সরগরম হয়ে ওঠে। জোম্যাটোর টুইটের পরে ওই সংস্থাটির প্রধান আরও রূঢ় ভাষায় জবাব দিয়েছেন। দীপিন্দর গোয়েল লেখেন যে এধরনের অর্ডারের ফলে যদি ব্যবসার ক্ষতি হয়, তাও মেনে নিতে তারা রাজি।

মধ্যপ্রদেশের জবলপুরের বাসিন্দা পণ্ডিত অমিত শুক্লা নামের এক ব্যক্তি, যার টুইটার হ্যান্ডেলের নাম ‘নমো সরকার’, তিনি মঙ্গলবার রাতে জোম্যাটোর মাধ্যমে অর্ডার দিয়েছিলেন কিছু খাবারের। খাবার ডেলিভারির দায়িত্ব পড়ে একজন মুসলিমের ওপর। জানতে পেরেই সাথে সাথে অপত্তি করেন অমিত শুক্লা।

জোম্যাটো কাস্টমার কেয়ারের সঙ্গে চ্যাটের যে স্ক্রিনশট তিনি টুইট করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে মি. শুক্লা লিখেছেন, “আমাদের শ্রাবণ মাস চলছে। একজন মুসলমানের ডেলিভারি করা খাবারের প্রয়োজন নেই।”

এরপরে জোম্যাটোকে তিনি বলেন অন্য কাউকে দিয়ে ডেলিভারি দেওয়া হোক তার খাবার। পবিত্র শ্রাবণ মাসে তারা শুদ্ধ নিরামিষ রেস্তোঁরা থেকে খাবার আনান। তাই ডেলিভারি বয়কে পাল্টানো হোক, নাহলে অর্ডার বাতিল করবেন তিনি। জোম্যাটোর অ্যাপ আনইনস্টল করারও হুমকি দেন।

এরপরেই জোম্যাটো জবাব দেয়, “আমরা রাইডারদের [ডেলিভারি বয়] মধ্যে বিভাজন করি না।”

মি. শুক্লা গোটা ঘটনা টুইট করে সবাইকে জানানোর পরে আজ (বুধবার) পাল্টা উত্তর দিয়েছে জোম্যাটো। তারা বলেছে, “খাবারের কোনও ধর্ম হয় না। খাবারটাই একটা ধর্ম।”

এরপরেই নিজের সংস্থার পক্ষ নিয়ে জোম্যাটোর কর্ণধার দীপিন্দর গোয়েল লেখেন, “ভারতীয়ত্বের ধারণার জন্য আমরা গর্বিত এবং আমাদের ক্রেতা এবং পার্টনারদের বৈচিত্রের জন্যও। আমাদের সেই চিন্তাধারাকে আঘাত দেয়, এরকম কোনও ব্যবসা যদি আমরা নাও পাই, তাতে কোনও ক্ষতি হবে না।”

এরপরেই শুরু হয় টু্‌ইটারে বাকযুদ্ধ। এখনও পর্যন্ত জোম্যাটোর টুইটটি ১৬ হাজারেরও বেশিবার রিটুইট করা হয়েছে, লাইক পড়েছে প্রায় ৪৬ হাজার।

অনেক মান্যগণ্য ব্যক্তি জোম্যাটোর টুইটকে অভিন্দন জানিয়েছেন, যাদের মধ্যে কংগ্রেস নেত্রী স্বরা ভাস্কর যেমন আছেন, তেমনই আছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বা প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি।

নানা ধরণের মন্তব্য করা হয়েছে জোম্যাটো আর মি. শুক্লার টু্‌ইট যুদ্ধে। “ধর্মের নামে যেধরণের ঘৃণা ছড়ানো বেড়ে চলেছে, সেই সময়ে কর্পোরেট দুনিয়ার এরকম কড়া কথার উদাহরণ প্রায় দেখাই যায় না,” লিখেছেন ‘স্যাম সেজ’ নামে একজন।

একজন তির্যক মন্তব্য করেছেন, “এরপর থেকে দেখে নেবেন যে খাবারটা একজন হিন্দু চাষ করেছে কিনা, ট্রাকে করে একজন হিন্দু তা নিয়ে এসেছে কিনা, বিক্রি করেছে যে সে হিন্দু কিনা বা যে রান্না করল, সে হিন্দু কিনা! ধর্মের ব্যাপার তো!”

শেখ ফারহাদ নামের একজনের মন্তব্য, “মুসলিম দেশ থেকে আনা পেট্রল ডিজেল বয়কট করে সাইকেলে চাপুন।”

অভিনভ শর্মা নামে একজনের মন্তব্য, “ওর গাড়ি, বাইক, ট্রেন বা প্লেনে চড়া উচিত নয়। তন্দুরি খাবার, জিলিপি, সিঙ্গাড়া এগুলোও খাওয়া উচিত নয়! মুসলমানী পরিচয় আছে, এমন সবকিছু বর্জন করা উচিত ওর।”

সিম্মি আহুজার মন্তব্য, “স্যার, এই টুইটারটাও তো অহিন্দুর! আপনার ঘরে যে সবজি আছে, খুঁজে দেখুন অহিন্দুরই চাষ করা হয়তো, বা দুধ-ও। আর যে ভাষায় আপনি লিখেছেন, সেটাও তো অ-হিন্দু ভাষা। হিন্দুদের মূল ভাষা সংস্কৃত। তাতেই লিখুন!”

মিজ আহুজার এই মন্তব্যে আবার শুরু হয়েছে আরেক বিতর্ক। কুঁওর পি এক এস রানা নামের একজন জবাব দিয়েছেন, “ম্যাডাম, আপনার জ্ঞানের ভাণ্ডার একটু প্রসারিত করুন। কোন্‌ মুসলমান চাষাবাদ করে? ভারতে ২% মুসলমানও চাষ করে না। কমিশনখোরের কাজ করে। সব সব্জিই হিন্দুরা চাষ করে আর সব্জি বাজারে মুসলমানরা সেগুলো বিক্রি করে।”

সিম্মি আহুজা উত্তরে লিখেছেন, “২০১১-র জনগণনায় ৪৬% হিন্দু চাষাবাদ করেন। বাকি চাষের কাজ অহিন্দুরা করে। অর্থাৎ ৫৫%।”

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877