মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, ১২:০১ পূর্বাহ্ন

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে করণীয়

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে করণীয়

স্বদেশ ডেস্ক:

বিশ্বজুড়ে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও হৎপিণ্ড বিকল (হার্ট ফেইলিউর) হয়ে যাওয়ার পেছনে সিংহভাগ কারণ উচ্চ রক্তচাপ। ২০১৯ সালে এক কোটির বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। এর অর্ধেকের বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল উচ্চ রক্তচাপ। তাই উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে সচেতন হওয়া খুব জরুরি।

উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা : আমাদের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক রক্তচাপ বজায় রাখা দেহের জন্য সম্ভব হয় না। ফলে রক্তচাপ বাড়ে অনেকেরই। ১৪০/৯০ মিমি পারদের ওপরের রক্তচাপকে বলা যায় উচ্চ রক্তচাপ। একাধিক বার মাপার পর একই রকম রক্তচাপ পাওয়া গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ঝুঁকি : উচ্চ রক্তচাপের জন্য বড় ঝুঁকিগুলো হলো স্থূলতা, ধূমপান, মানসিক চাপ, শরীরচর্চা বিমুখতা এবং বেশি লবণ গ্রহণের প্রবণতা। এ ঝুঁকিগুলো ইচ্ছে করলেই বদলে ফেলা যায়। স্থূলতা অনেক রোগের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য, ফ্যাটি লিভার, অস্থিসন্ধির সমস্যাসহ অসংখ্য রোগের পেছনে অতিরিক্ত ওজনের ভূমিকা রয়েছে। আয়েশী যাপিতজীবন, আলসেমি, অতিরিক্ত ক্যালরির খাদ্য গ্রহণের ফলে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, যা মানুষকে টেনে নেয় উল্লিখিত ব্যাধির দিকে।

ধূমপানের ফলে নিকোটিনসহ রাসায়নিক যৌগের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য রক্তচাপ বেড়ে যায়। অনেক দিন ধরে ধূমপানের ফলে রক্তনালির ভেতরের প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ স্থায়ী রূপ নেয়। খাদ্যে বেশি লবণ গ্রহণে শরীর অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। আমাদের খাদ্যতালিকার দিকে নজর দিলে দেখতে পাব অসংখ্য লবণযুক্ত খাবার। অনেক খাদ্যে লবণ লুকিয়ে আছে। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলোয় লবণ বেশি থাকে।

প্রতিযোগিতামূলক এই মানবজীবনে মানুষ নানা কারণে মানসিক চাপের ভেতর হাবুডুবু খাচ্ছে। মানসিক চাপ সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়ায়। মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকে আশ্রয় নেয় ধূমপান কিংবা মাদকে। ফলে রক্তচাপ এসে আরও জেঁকে বসে মানবদেহে।

এছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে মানুষের দেহেও যোগ হয় কিছু রোগ। উচ্চ রক্তচাপও কখনো জুড়ে বসে। পরিবারে উচ্চ রক্তচাপের রোগী থাকলে অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হতে পারেন। বলা যায়, জেনেটিক। অনেক রোগ ব্যাধি পারিবারিক ঐতিহ্যের মতোই। পরিবার ছেড়ে যেতে চায় না। লক্ষণ ও জটিলতা : বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ফলে দীর্ঘদিন বাড়তি রক্তচাপের ভেতর দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ডুবে থাকে। নীরবে নিভৃতে ক্ষতি ডেকে আনে দেহের। ফলে হঠাৎ করেই হতে পারে হার্ট অ্যাটাক। উচ্চ রক্তচাপে হৃৎপিণ্ড বিকল হতে পারে, স্ট্রোক হতে পারে, কিডনির ক্ষতি হতে পারে। চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় দীর্ঘদিনের উচ্চ রক্তচাপে। অনেকেই উচ্চ রক্তচাপের কারণে মাথা বা ঘাড় ব্যথা অনুভব করেন। অস্থিরতায় ভোগেন। বুক ধড়পড় করে। ঘাম নিঃসরণ বেড়ে যায়। বুকে চাপ অনুভূত হয়।

করণীয় : রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যাপিত জীবন ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। শরীরচর্চা করতে হবে। হাঁটতে হবে নিয়মিত। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। লবণ গ্রহণ কমাতে হবে। টাটকা শাকসবজি, ফল খেতে হবে নিয়মিত। চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ কমিয়ে আনতে হবে। ধূমপান ত্যাগ করতে হবে। ছেড়ে দিতে হবে অ্যালকোহল সেবন। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে হবে নিয়মিত। কার জন্য কোন ধরনের ওষুধ উপযুক্ত, তা নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের ওপর। রক্তচাপের মাত্রা, বয়স, লিঙ্গ, আনুষঙ্গিক অন্যান্য রোগব্যাধির উপস্থিতি ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে একজন চিকিৎসক উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ দিয়ে থাকেন।

লেখক : ক্লাসিফাইড মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট; সিএমএইচ, ঢাকা

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877