রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন

কেন বারবার জনতার রায় আইভীর পাশে

কেন বারবার জনতার রায় আইভীর পাশে

স্বদেশ ডেস্ক:

একটা প্রচলিত কথা আছে, ক্ষমতায় থাকলে জনগণ একই প্রার্থীকে দ্বিতীয়বার ভোট দিতে চায় না। অনেক সময় নতুন প্রার্থীর দিকে ঝোঁক থাকে তাদের। তবে সব ক্ষেত্রে যে এমনটি হয় তা নয়। নারায়ণগঞ্জে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর তৃতীয় দফায় বিজয়ের হিসাবটা আসলে কী? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে নির্বাচনের দিকে নজর দিতে হয়। এ ছাড়া এর আগে দুবার মেয়র ছিলেন- সেই সময়ে তিনি জনগণের কাতারে কতটুকু ছিলেন, তাও সামনে আনতে হয়। একই সঙ্গে দুই প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজসহ দলের পক্ষ থেকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচ্য।

নির্বাচন পর্যবেক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আইভী ক্লিন ইমেজের একজন নেত্রী। তিনি দলের বড় পদে না থাকলেও কাজ দিয়ে জনগণের মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ছোটখাটো কিছু অভিযোগ-অনুযোগ ছাড়া বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি। যদিও মেয়রের আলিশান বাড়ি নিয়ে গণমাধ্যমে রিপোর্ট হয়েছে। কিন্তু তিনি সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে সাধারণ ভোটার বা নাগরিকের কাছে কোনো অভিযোগ মুখ্য হয়ে ওঠেনি। বরং আইভী তার নিজের মতো করেই এগিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জ শহর সভাপতি আলী আহম্মদ চুনকার মেয়ে আইভী। বাবার কাছ থেকে শেখা রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও শহরে বাবার অবদানের বিষয়টি তার নির্বাচনেও বেশ কাজে আসে বলে মনে করেন অনেকে।

নির্বাচনের সময় তার পাশে দলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্থানীয় নেতা ছিলেন না। তবে কেন্দ্র থেকে বড় বড় নেতারা তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। মানুষ দেখেছে আইভী লড়াইটা একা করছেন না। তার দলও পাশে আছে। এটি তার প্রচার ও ভোটে প্রভাব পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

আইভীর নির্বাচনী রাজনৈতিক পথচলা শুরু ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে। এর পরও তিনি থেমে থাকেননি। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হিসেবে স্বীকৃতি পেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত নেতা মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক পরিবারের সন্তান শামীম ওসমান তার কাছে হেরে যান। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নির্বাচনের পর থেকেই শামীম ওসমান ও আইভীর মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়। সেই থেকে দুজনের মধ্যে একটা শীতল দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এবারের নির্বাচনে শামীম ওসমানের ভূমিকা কী হবে-তা নিয়েও নানা আলোচনা ছিল। আইভী ভোটের মাঠে শামীম ওসমানকে গডফাদার বলতেও ছাড়েননি। কিন্তু বিপরীতে শামীম ওসমান ছিলেন স্থির। তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচনে তার অবস্থান স্পষ্ট করেন। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ব্যক্তি নয়- নৌকার জন্য তিনি আছেন। নৌকার বিজয় হোক, তা তিনি মনেপ্রাণে চান।

গতকাল ভোট দেওয়ার পর শামীম ওসমান তার মনোপীড়ার বিষয়টি চেপে গিয়ে বলেছেন, নৌকার বিজয় তিনি চান। নারায়ণগঞ্জের মানুষ নৌকার পক্ষে আছেন- এমনটিও বলেন।

নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ করেছেন তাদের মতামত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভোট হয়েছে সুষ্ঠু। কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ ভোটাররা কোন বিষয়টি বেশি বিবেচনায় নিয়েছেন- এমন প্রসঙ্গ সামনে রাখলে সহজেই বলা যায় তারা নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন চান। আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয় সেটা চান। নিরাপত্তা চান। নগরীর সংস্কার চান। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন চান। তৈমূর আলম খন্দকার তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন কিনা, সে আলোচনাও ছিল। ভোটারদের ভাবনার বিষয়টিও আইভীর পক্ষে কাজ করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

নারায়ণগঞ্জের এবারের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী ভোটার ভোট দিয়েছেন। ভোটের ফল দেখে ধারণা করা যায়, তাদের বেশিরভাগের পছন্দ ছিল আইভী। তরুণ ভোটাররাও ছিল ফ্যাক্টর। আইভী নিজের ক্যারিশমা ও দলের শীর্ষ পর্যায়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছেন, যা ভোটেও প্রভাব পড়ে। এবার আইভীর ভোট চাওয়ার কৌশলও ছিল ভিন্ন। তিনি বয়স এবং নারী-পুরুষভেদে ভোটারদের নিয়ে ভোটের অগেই বিশ্লেষণ করেছেন- এমনটিও জানা যায়। সেই বিশ্লেষণে ভোট টানার কৌশল আয়ত্ত করেন, যা ভোটের ফল নির্ধারণে কাজে এসেছে। অপরদিকে শামীম ওসমানের সঙ্গে তার মান-অভিমান কিংবা দ্বন্দ্ব যাই থাকুক না কেন, নির্বাচনে শামীম ওসমান শেষ পর্যন্ত দল ও নৌকার পক্ষেই ছিলেন।

যদিও আইভী বলে আসছেন শামীম ওসমানের প্রার্থী তৈমূর আলম। যদি তাই হতো, আইভী-তৈমূরের ভোটের ব্যবধান এত হওয়ার কথা নয়। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে শামীম ওসমানের সঙ্গে যোগাযোগ ও নেতাদের বৈঠকের পর তিনি নির্বাচন নিয়ে তেমন নড়াচড়া করেননি বলেই জানা যায়। তার নীরব থাকাও আইভীর জন্য ছিল আশীর্বাদ।

অপরদিকে তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচন করতে গিয়ে দল থেকে ছিটকে পড়েন। তার পাশে আড়ালে-আবডালে দলের স্থানীয় কিছু নেতাকর্মী ছিলেন। তবে তাদের অনেকেই পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে ছিলেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেভিওয়েট ও জনপ্রিয় প্রার্থী আইভীর বিরুদ্ধে লড়তে হলে তৈমূরের পক্ষ থেকে যে বলয় থাকার কথা ছিল, তা তিনি তৈরি করতে পারেননি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে তৈমূর আলম খন্দকারও পরিচিত এবং জনপ্রিয় মুখ। কিন্তু নির্বাচনী কৌশল ও পরিবেশ-পরিস্থিতি সামলে তিনি এর চেয়ে বেশি এগোতে পারেননি। তবে পরাজিত হলেও কোনো বড় ধরনের অভিযোগ ছাড়াই তিনি এই নির্বাচন মেনে নিয়েছেন।

অপরদিকে বিজয়ী আইভী বলেছেন, তিনি তার কাজে তৈমূর আলম খন্দকারের সহায়তাও নেবেন। এটি তার উদারতা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনগণের পাশে দীর্ঘসময় ধরে থেকে আইভী হয়ে ওঠেন জনপ্রিয় নেতা। তৃতীয়বারের নির্বাচনেও তিনি তার প্রতিদান পেয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য তিনি নতুন কী কাজ করেন। নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে কী উদ্যোগ নেন। জনগণের সেবক হিসেবে এটা তার জন্য এক কঠিন পরীক্ষা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877