মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৯:৫১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
পর্যটক সামলাতে দেয়াল তুলছে জাপান ঢাবিতে গোলাম মাওলা রনির ওপর হামলা টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল যুক্তরাষ্ট্র, একাদশে যারা আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ হয়নি: ওবায়দুল কাদের অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে কৃষি খাতে ফলন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তি সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী ভিকারুননিসায় ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল, অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে থাকতে পারে : সিইসি সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা যে বার্তা দিচ্ছে শিয়ালের টানাহেঁচড়া দেখে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেল এক নারী ও দুই শিশুর লাশ
মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও অধমত্ব

মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও অধমত্ব

মাওলানা এম এ হালিম গজনবী এফসিএ:

আল্লাহর বাণী, ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত-১১০)
বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ‘শ্রেষ্ঠ জাতি’ উপাধিতে ভূষিত করলেন পাশাপাশি জানালেন, আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে মানবকল্যাণ সাধনের জন্য। আর তিনি আমাদের জানালেন আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণ সম্পর্কে। সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণ হলো, মানুষকে সৎ কাজের আদেশ, উপদেশ, পরামর্শ দেয়া এবং মানবসমাজকে নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড থেকে সর্বাবস্থায় বিরত রাখা।

আলোচ্য দু’টি কাজ নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ জাতি হওয়ার পূর্বশর্ত। যদিও আপাতদৃষ্টিতে সৎকাজের আদেশ ও উপদেশ দেয়ার মাঝে শর্তটি সীমাবদ্ধ। তবে সত্যিকার অর্থে ব্যাপারটি তা নয় বরং সৎকাজের আদেশ, উপদেশ, পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি তা অবশ্যই আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে।

আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা: যেসব কাজের আদেশ দিয়েছেন সেসব সৎকাজ ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, নফল, মুস্তাহাব শ্রেণীতে বিভক্ত। এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, উপরোক্ত শর্ত দু’টি আমরা কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারছি? আমার দৃঢ় বিশ্বাস উত্তর আসবে, আমরা শর্ত দু’টি পালনে অনেকাংশেই ব্যর্থ। পক্ষান্তরে, নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখা বলতে গেলে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিকূল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। ফলে বিশ্ব শান্তির পরিবর্তে বিশ্ব অশান্তি দ্রুত বাড়ছে। একই অবস্থা ব্যক্তিগত শান্তি, পারিবারিক শান্তি, সামাজিক শান্তি, রাষ্ট্রীয় শান্তি, আন্তর্জাতিক শান্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে। ইসলাম শান্তির ধর্ম, এটি শতভাগ সত্য। বিশ্ববাসী যদি ইসলাম ধর্মের বিধানগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আঁকড়ে ধরত তাহলে বিশ্বশান্তি আটলান্টিক মহাসাগরের খরস্রোতের মতো অবিরাম প্রবাহিত হতে থাকত। প্রয়োজন হতো না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর, বাসাবাড়ির দারোয়ান, তালা চাবির ব্যবহার এমনকি রাতে ঘরের দরজা বন্ধ করারও। ইসলাম ধর্ম সর্বশেষ ধর্ম, বিশ্বধর্ম। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক রাসূল মুহাম্মদ সা:। তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন বিশ্বনবী হিসেবে অভূতপূর্বভাবে। ইসলাম ধর্ম হতে উদাসীনতা মানে দ্রুত গতিতে অশান্তি অরাজকতার দিকে ধাবিত হওয়া। আল্লাহর ঘোষণামতে, আমরা মানুষরা সৃষ্টির সেরা হওয়া সত্ত্বেও। বিবেকের কাছে প্রশ্ন করি, ইসলাম ধর্মের বিধিবিধান থেকে উদাসীন হয়ে শান্তির আশা করা কি কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে? উত্তর, নিশ্চয়ই না। কারণ ইসলাম ধর্মের আদেশাবলির মধ্যে নিহিত আছে প্রকৃত কল্যাণ। পক্ষান্তরে, নিষিদ্ধ কাজগুলোর মধ্যে নিহিত আছে অকল্যাণ, অশান্তি, অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি।

আল্লাহ বলেছেন, ‘আর আমি সৃষ্টি করেছি দোজখের জন্য বহু জিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তা দিয়ে বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, সে চোখ দিয়ে তারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তা দিয়ে শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর (পাশবিক কার্যাবলির কারণে)। তারাই হলো গাফেল।’ (সূরা আরাফ, আয়াত-১৭৯)
পাশবিক শব্দটির সাথে আমরা পরিচিত। পাশবিক অত্যাচার, পাশবিক নির্যাতন, পাশবিক আচরণ ইত্যাদি আমাদের জীবনের সঙ্গে মিশে আছে বলা যায়।

আলোচ্য আয়াতে চোখ, কান, অন্তরসম্পন্ন মানুষগুলো আল্লাহর বর্ণনামতে যথাক্রমে অন্ধ, বধির, বিবেকহীন। ফলে ধর্মীয় জ্ঞান আহরণের দিক থেকে উপরোক্ত প্রত্যঙ্গগুলো না থাকার শামিল, অর্থহীন, অকেজো যা সত্যিকার অর্থে মহা পরিতাপের ও মহা ক্ষতির বিষয়। প্রসঙ্গত মনে পড়ে সেই দুঃখজনক বাক্যটি- ‘হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ’। এ প্রসঙ্গে অন্য একটি আল্লাহর বাণী, ‘মোহর বা সিলগালা করে দিয়েছেন কাফেরদের অন্তর ও শ্রবণশক্তি এবং ঢেকে দিয়েছেন পর্দা দিয়ে তাদের চোখগুলো। এরাই নিক্ষিপ্ত হবে পরকালে অবর্ণনীয় ও ভয়াবহ কঠিন শাস্তির ভেতরে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-৭)
এ আয়াতেও আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেছেন অন্তর, শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ইত্যাদির অকার্যকারিতা ও ভয়াবহ পরিণাম অর্থাৎ জাহান্নামবাস।

অনুরূপ আরো একটি আল্লাহর বাণী উল্লেখযোগ্য, ‘আমি তাদের গলায় শেকল পরিয়ে রেখেছি, তা তাদের চিবুক পরিমাণ বর্তমান রয়েছে। তাই তারা ঊর্ধ্বমুখী হয়ে রয়েছে (ফলে তারা দেখতে পাচ্ছে শুধু ঘরের ছাদ বা গাছপালার ডাল বা খোলা আকাশ)। আর আমি তাদের সম্মুখে প্রাচীর রেখেছি এবং পেছনেও প্রাচীর রেখেছি, আর তাদেরকে উপর থেকে ঢেকে রেখেছি, তাই তারা দেখতে পায় না।’ (সূরা ইয়াসিন, আয়াত : ৮-৯)
উপরোক্ত প্রথম আয়াতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে একটি ভয়াবহ চিত্র অর্র্থাৎ ঘাড় বাঁকা ঊর্ধ্বমুখী করে রাখা। দ্বিতীয় আয়াতটিতে আল্লাহ ব্যবস্থা রেখেছেন তাদেরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রাখা প্রাচীর ঘেরা করে। ফলে এদের কোনো দিনই সৌভাগ্য হবে না ইসলামের আলো দেখতে পাওয়ার।

উপরোক্ত চারটি আয়াতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত, কাফের, মুশরিক, মুজরিম, ফাসেক, মুনাফিকদের ঔদাসীন্যের প্রেক্ষাপট যার পরিণাম তাদের মহা ব্যর্থতা বিশেষ করে পরকালে।
দয়া করে আসুন আমরা আত্মজিজ্ঞাসা করি। ব্যক্তিগতভাবে আমরা কে কোন দলভুক্ত আছি, হতভাগ্যদের দলে নাকি সৌভাগ্যবানদের। সে মোতাবেক প্রয়োজনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
লেখক : সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877