স্বদেশ ডেস্ক:
নানা বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসান কানাডায় ঢুকতে পারেননি। গত শুক্রবার দুপুরে তাকে টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেয় দেশটির বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি। এর পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে তুলে দেওয়া হয় দুবাইগামী ফ্লাইটে। একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে মুরাদ হাসানকে কানাডা ঢুকতে না দেওয়ার ঘটনাটি দেশে-বিদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এখন তিনি দুবাই অবস্থান করছেন, নাকি দেশের পথে আছেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। কোনো সূত্র বলছে, তিনি দুবাইয়ে আছেন। আবার কোনো সূত্র বলছে, তিনি দেশের পথে। মুরাদের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলেও তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কানাডার স্থানীয় একটি বাংলা নিউজ পোর্টালে বলা হয়, ডা. মুরাদ হাসান আমিরাতের একটি ফ্লাইটে স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১টা ৩১ মিনিটে টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এ সময় কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। দীর্ঘ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর পর তাকে বিমানবন্দর থেকেই ফেরত পাঠানো হয়।
জানা গেছে, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ডা. মুরাদের অশালীন কথাবার্তা নিয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক অসন্তুষ্ট। তারা কানাডায় মুরাদ হাসানের প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে লিখিত আবেদন জানায়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই কানাডা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ মুরাদ হাসানকে ঢুকতে দেয়নি। এর আগে তার কাছে কানাডার বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানতে চান। এ ব্যাপারে নিজের বক্তব্য জানান মুরাদ হাসান। কিন্তু তার বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরে তাকে দুবাইগামী ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘মুরাদ হাসানকে কেন কানাডায় ঢুকতে দেওয়া হলো না, এ বিষয়ে এখনো কিছু জানি না।’
মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাষ্ট্র মামলা করতে পারত কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কেন, রাষ্ট্র মামলা করবে কেন? রাষ্ট্র তো সংক্ষুব্ধ নয়। যদি কেউ সংক্ষুব্ধ হয়, তার তো অধিকার রয়েছে মামলা করার। আমার কাছে জিজ্ঞাসা করছেন কেন? আপনি যদি সংক্ষুব্ধ হন, আপনি মামলা করবেন।’
কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের গতকাল বলেন, ‘উনি (ডা. মুরাদ) কানাডায় প্রবেশ করেছেন কিনা, আমার জানা নেই। কানাডার ইমিগ্রেশন তাকে আটকে দিয়েছে কিনা, সেটাও আমার জানা নেই। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি জানিয়ে আসেননি।’
গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেন মুরাদ হাসান। পরের দিন তার নাম তথ্য মন্ত্রণালয়ের নামফলক থেকেও মুছে ফেলা হয়। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে থাকা প্রতিমন্ত্রীর তালিকা থেকে মুরাদ হাসানের নামটি বাদ দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে ইতোমধ্যে সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। এর আগে শাহবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনি মামলা করতে একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ওই অভিযোগ তদন্তাধীন। ইতোমধ্যে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।