স্বদেশ ডেস্ক:
আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পরই দেশটিতে মানবিক সংকট শুরু হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) সদ্য প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি অর্থনৈতিক সহায়তা বৃদ্ধি না করে তবে আফগানিস্তানে গত ২০ বছরের যুদ্ধের চেয়েও ক্ষুধা ও অনাহারে বেশি মানুষ মারা যেতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দুই দশকে বোমা ও বুলেটে যত মানুষ মারা গেছে, তালেবানের আফগানিস্তান দখলের পর ক্ষুধা ও চরম দারিদ্র্যে তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যেতে পারে বলে মনে হচ্ছে।’
আইসিজির প্রতিবেদনে বলা হয়, আধুনিক অর্থনীতি চালাতে তালেবানের অক্ষমতা এবং বিদেশি দাতাদের জরুরি সাহায্য ছাড়া সব বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আফগানিস্তানে অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটের প্রধান কারণ। ২০০১ সাল থেকে আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে দাতানির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দায়ী করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আজ দাতারা মানবিক সহায়তা প্রদান করছে, কিন্তু এই সীমিত ধরনের জরুরি সহায়তা ক্রমবর্ধমান মানবিক ও অর্থনৈতিক সংকটকে আটকানোর জন্য অপর্যাপ্ত। মানুষের খরচ ইতিমধ্যে ব্যাপক বেড়েছে। শীতের মাসগুলোতে কয়েক হাজার বা তারও বেশি মৃত্যু এবং বঞ্চনা তৈরি হতে পারে।
সংস্থাটির মতে, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, পশ্চিমা দেশগুলো তালেবানকে পর্যদুস্ত করতে চায়। সাহায্য বন্ধ করে অনাহারের মাধ্যমে ‘প্যারিয়াহ রাষ্ট্রে’ পরিণত করার মাধ্যমে তালেবানের দখলদারিত্বের শাস্তি দিতে চায়। তবে আফগানিস্তানের জনগণ প্রকৃত মূল্য দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে ব্যর্থতা, মেয়েদের শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা, নারীদের কাজের ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্যও ইসলামী আমিরাতের সমালোচনা করা হয়েছে আইসিজির প্রতিবেদনে। এতে আরও বলা হয়, ‘আফগানিস্তানে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতার জন্য ব্যাপকভাবে তালেবান দায়ী।’
আইসিজি বলেছে, ইসলামিক আমিরাতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে আফগানিস্তানের জনগণ এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক প্রভাব পড়বে। যদিও তালেবান রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর এবং বিপজ্জনক কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। আফগানিস্তানের পরিণতি ইতোমধ্যে দৃশ্যমান যেমন- দুর্ভিক্ষের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি, ক্রমবর্ধমান অভিবাসন, সন্ত্রাসবাদের ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং মাদকের ক্রমবর্ধমান সরবরাহ রয়েছে।
আইসিজি আফগান রাষ্ট্রযন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইসলামিক আমিরাতের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের সরকারের মধ্যম পদমর্যাদার অনেক কর্মকর্তা তাদের পদে বহাল রয়েছেন এবং তারা দাতাদের সহায়তায় আবার কাজ শুরু করতে পারবেন।
আইসিজি বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে আফগানিস্তানে তহবিল পাঠানোর জন্য ইসলামিক আমিরাতের সঙ্গে যুক্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের নিষেধাজ্ঞাগুলো সংশোধন করারও আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া আফগান মুদ্রা বাজারে তারল্য প্রবেশেও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আহ্বান জানিয়েছে। সূত্র : টোলোনিউজ