স্বদেশে ডেস্ক:
মাদারীপুরে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ১০তলাবিশিষ্ট সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন। ভবনটিতে ৪০টি সরকারি অফিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফলে এখান থেকেই অনেকগুলো সরকারি সেবা নিতে পারবেন জেলাবাসী। আর এর মধ্য দিয়ে জেলার উন্নয়ন কর্মকা-ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির আরও এক ধাপ পূরণ হলো।
মাদারীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র শকুনী লেকের পাড়ে এক একর জায়গার ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। ভবনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় চলতি বছরের জুন মাসে। গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবনটির উদ্বোধন করেন। ভবনে একত্রে ৪০টি সরকারি অফিসের বরাদ্দ রয়েছে। কিছু কাজ এখনো বাকি থাকায় বরাদ্দকৃত অফিসগুলো নতুন ভবনে উঠতে একটু সময় লাগতে পারে। আগামী মাসে নতুন ভবনে অফিসগুলো উঠতে পারবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান বলেন, ২০১২ সালে আমি যখন মন্ত্রী ছিলাম তখন জেলায় একটি সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রস্তাবনা দেই। প্রধানমন্ত্রী আমার প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। ২০১৬ সালের মার্চে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী ভবনটির অনুমোদন দেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবনটি উদ্বোধন করেন। ১০তলা ভবনটি বাংলাদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম মাদারীপুরেই নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে একই ভবনে এক সঙ্গে অনেকগুলো সরকারি অফিসের সেবা নিতে পারবে জেলাবাসী।
মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরে অনেকগুলো ছোট-বড় সরকারি অফিস রয়েছে, যাদের নিজস্ব কোনো ভবন নেই। শহরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভাড়া বাসায় রয়েছে এ সরকারি অফিসগুলো। ফলে সাধারণ মানুষ সরকারি অফিসের সেবা নিতে বিড়ম্বনায় পড়ছে। নবনির্মিত ভবনটিতে ৪০টি সরকারি অফিসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভবনে চারটি লিফট, পাঁচশ কেভিএ জেনারেটর, বারশ পঞ্চাশ কেভিএ বিদ্যুতের সাবস্টেশন, বিভিন্ন ফ্লোরে এবং বাইরে সিসিটিভি স্থাপন, পার্কিংয়ে থাকা গাড়ির জন্য পিএ সিস্টেম, অফিস প্রধানদের রুম ও মাল্টিপারপাস হলরুমে এয়ার কন্ডিশন সরবরাহ এবং স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। ফলে ভবনের ভেতরে ব্যবহৃত অপরিশোধিত বর্জ্য বাইরের নর্দমায় আসবে না। ফায়ার হাইড্রেন্ড, ফায়ার প্রোটেকশন ও ডিটেকশন সিস্টেম ও ফায়ার ডোর স্থাপন করা হয়েছে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং স্থাপন, ৩৫ কিলোওয়াট অনগ্রিড সোলার প্যানেল, সুপরিসর ক্যান্টিন, ডে কেয়ার সেন্টার, ব্যাংক এর শাখা, আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম ও স্টেজ সমৃদ্ধ তিন হাজার দুইশ বর্গফুট মাল্টিপারপাস হলরুম, প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষের জন্য হুইলচেয়ার এক্সেসিবল টয়লেট, ইন্টারনেট, পিএবিএক্স টেলিফোন লাইন স্থাপন করা হয়েছে।
মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম খান বলেন, দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম মাদারীপুরে সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়। সরকারি সব নির্দেশনা ও বিল্ডিং কোড মেনে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে ভবনটিতে। ইতোমধ্যে ভবনে ১৮টি সরকারি অফিস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মাদারীপুরকে অনুসরণ করে গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একই মডেলের ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। একই ভবনে এক সঙ্গে অনেকগুলো সরকারি অফিস থাকায় সরকারের অনেক টাকা সাশ্রয় হয়েছে। পাশাপাশি সেবা নিতে আসা জেলার সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অনেক কমে যাবে।
জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, শহরের শকুনী লেকের পাড়ে ১০ তলাবিশিষ্ট একটি দৃষ্টিনন্দন সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মিত হওয়ায় জেলাবাসী একই ভবনে পাবে সরকারি সকল দপ্তরের সেবা। এত দিন অনেক সরকারি অফিস ভাড়া ভবনে কাজকর্ম করত। এখন সেই সব অফিস এই ১০ তলা ভবনে চলে আসবে।