স্বদেশ ডেস্ক:
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণার চিত্র বেরিয়ে আসছে একে একে। গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে কয়েক মাসের ব্যবধানেই একাধিক মামলা হয়েছে ই-অরেঞ্জ, সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম, নিরাপদ ডটকম, ইভ্যালির মতো নামিদামি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধার কেউ আছেন রিমান্ডে; আদালতের নির্দেশে কেউ আবার কারাগারে। সর্র্বশেষ প্রতারণায় দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের হেড অব সেলস (কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) হুমায়ুন কবির নিরব ওরফে আরজে নিরব। প্রতিষ্ঠানটির সিইও মো. রিপন মিয়াও হয়েছেন কারান্তরীণ।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একদিনের পুলিশি রিমান্ডে প্রতারণার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন তারকাখ্যাতি থাকা আরজে নিরব। জানিয়েছেন মূলত তার কাজ ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে মানুষকে কিউকমের প্রতি আকৃষ্ট করা। পরিচিত মুখ হওয়ায় ফেসবুকে রয়েছে তার বিশাল ফ্যান-ফলোয়ার। তাদের টার্গেট করেই কিউকমের বিভিন্ন অফার ও স্কিমের বিষয়ে প্রচারণা চালাতেন। তাতে সাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকার পণ্য অর্ডার দিতেন গ্রাহকরা। পরে আরজে নিরবের পরামর্শেই প্রতিষ্ঠানের সিইও মো. রিপন মিয়া পণ্য না দিয়ে গ্রাহকদের ২৫০ কোটি টাকা আটকে রাখেন।
জানা যায়, নিজের ফেসবুক ব্যবহার করে কিউকমের প্রচারণা চালানো আরজে নিরব গত ২৪ আগস্ট একটি পোস্টে লেখেন, ‘পুরো দেশ আর সারা দুনিয়াজুড়ে কিউকম ছড়াতে চাই, ইনশাআল্লাহ।’ দেশের আট বিভাগে কিউকম নিজস্ব ডেলিভারি পয়েন্ট, ওয়ারহাউস, কাস্টমার কেয়ার চালু করবে বলেও জানান সেই পোস্টে। তবে গ্রাহকদের সঙ্গে কিউকমের প্রতারণার বিষয়টি সামনে এলে নিরব ২২ সেপ্টেম্বর পোস্টে লেখেনÑ ‘মনে হয় এই শিল্পটা বন্ধ না করে কেউ থামবে না।’ মালিকের পাশে থেকে গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও উল্লেখ করেন নিরব। তবে পোস্টে কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি জানান, অনেকে তার পেছনে লেগেছেন। তিনি চাকরি না ছাড়া পর্যন্ত সেটি চলতে থাকবে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এডিসি হাফিজ আল ফারুক বলেন, ‘কিউকমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরজে নিরব রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। জানিয়েছেন প্রতারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের নাম। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে নিরব যাদের নাম বলেছেন, তাদের বিষয়েও তদন্ত চলছে।’ তবে তদন্তের স্বার্থে এর বেশি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারির ২৫০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কিউকম। যদিও এস্ক্রো সিস্টেমের মাধ্যমে গেটওয়ে পেমেন্ট হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ করা তৃতীয় পক্ষ প্রতিষ্ঠান ফস্টারের কাছে কিউকমের গ্রাহকদের ৩৯৭ কোটি টাকা আটকে রয়েছে।’
এর আগে গত ৪ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন থানায় কিউকমের সিইও মো. রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী এক গ্রাহক। ওই মামলায় রিপনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশের মতিঝিল বিভাগ। পরে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় প্রতিষ্ঠানটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তা আরজে নিরবের বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রতারিত এক ভুক্তভোগী। ওই মামলায় গত শুক্রবার নিরবকে আদাবর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।