স্বদেশ ডেস্ক:
সরকারবিরোধী আন্দোলনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বিস্ফোরণ ও হত্যাকা-ের অভিযোগে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলার বিচারকাজে গতি বেড়েছে। ২০১৩ ও ২০১৫ সালে দায়ের করা মামলার মধ্যে অন্তত ৪০টির বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। কয়েক মাসের মধ্যে সাক্ষ্য শুনানি শেষে পর্যায়ক্রমে মামলাগুলোর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ হতে পারে। একটি মামলার রায় চলতি মাসেই ঘোষণা হতে পারে বলেও আভাস পাওয়া গেছে। বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট কিছু মামলায় প্রতি মাসে দুই থেকে তিনটি তারিখ ধার্য করে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হচ্ছে। যদিও অন্য মামলায় এক মাস এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন মাসেও তারিখ পাওয়া যাচ্ছে না। মামলাগুলোর বিচার দ্রুত শেষ করার মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করেন ওই আইনজীবীরা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ‘প্রতিহত’ এবং ২০১৫ সালে ওই সরকারের বছরপূর্তিতে বিএনপি লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। ওই সময়ের মামলাগুলোয় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ,বিস্ফোরণ ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় বিএনপি তখন বিশ্বব্যাপী ব্যাপক নিন্দিত হয়। যদিও বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, এসব ঘৃণ্য ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নয়, সরকার এসব ঘটনায় হয়রানির উদ্দেশ্যে তাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা অভিযোগ করে বলছেন, সামনে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমাতে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের নেতাদের অযোগ্য করতে নেতাকর্মীদের সাজা দিতে চায়। এ উদ্দেশ্যে নির্বাচনের দুই বছর আগে থেকেই প্রসিকিউশন সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
অবশ্য রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) বলছে, মামলাগুলোর বিচার দ্রুত নিষ্পত্তিতে তাদের কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নেই। আসামিদের হয়রানি কমাতে দ্রুত বিচার শেষ করার চেষ্টা করছেন। এতে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি নেই।
উল্লেখযোগ্য যেসব নেতার মামলার শুনানি দ্রুত হবে বলে জানা গেছে সেখানে খালেদা জিয়ার নামও রয়েছে। যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাসে পেট্রল দিয়ে অগ্নিকা- ও মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি তিনি। এ ছাড়া আরও যাদের মামলার শুনানি দ্রুত এগুতে পারে তারা হলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, বরকতউল্লাহ বুলু, আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শিমুল বিশ্বাস, সালাহউদ্দিন আহম্মেদ, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ বেশ কয়েকজন।
দ্রুত নিষ্পত্তির মামলাগুলোর তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, যে মামলাগুলোর বিচার শেষ করতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি মামলার আসামি জোটভুক্ত জামায়াত নেতাকর্মীরাও রয়েছেন। বিএনপির সিনিয়র ও মধ্য সারি এবং থানা ও ওয়ার্ড পর্যন্ত নেতাকর্মীরা রয়েছেন। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নেতা এসব মামলার আসামি।
বিএনপির দুজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপকালে তারা আমাদের সময়কে বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে খুব শিগগিরই আন্দোলনে নামবে বিএনপি। এ জন্য সংগঠন পুনর্গঠন করা হচ্ছে, যেন দলকে আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য ‘উপযুক্ত’ করে গড়ে তোলা যায়। বিএনপির নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতি সম্পর্কে সরকারও ওয়াকিবহাল। তাই আন্দোলন যাতে দানা বাঁধতে না পারে সে জন্য সরকার আগেই নেতাকর্মীদের মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে চাচ্ছে বলে ধারণা করছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এর মাধ্যমে বিএনপিকে চাপে রাখা যাবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমাদের সময়কে বলেন, সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বাচনে অযোগ্য করতে চায়। সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ গড়ে উঠতে দিতে চায় না। তাই ভিন্নমতকে দমন করতে তাদের সাজা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় এগোতে পারে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলার সবই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কোনো ঘটনাই ঘটেনি এমন মামলাও হয়েছে। অর্থাৎ তাদের উদ্দেশ্য বিএনপি দমন করা- সেটা যে উপায়ে হোক। এসব করে তারা দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। বিএনপির ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে এক লক্ষাধিক মামলা করা হয়েছে। ৩৫ লাখের বেশি মানুষ আসামি, অনেকে মামলার জালে জড়িয়ে বাড়িঘর ছাড়া।
জানা গেছে, যেসব মামলার বিচারকাজে গতি বেড়েছে; সেসব মামলার রায়ে দুই বছর কিংবা তার অধিক সময়ের জন্য কেউ দ-িত হলে নির্বাচন করতে পারবেন না। অর্থাৎ দুই বছরের সাজার কারণে তারা নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়বেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্যতার বিষয়ে সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যূন দুই বৎসরের কারাদ-ে দ-িত হন এবং তাহার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে।’
ওয়ান-ইলেভেনের পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে দ-িত হওয়ায় অনেক রাজনীতিক নির্বাচন করতে পারেননি। কেউ কেউ আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে জোট সরকারের আমলের মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে ৩২ জনকে নিম্ন আদালতে সাজা দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের সাজা হয়েছিল ৬ জনের। তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ উচ্চ আদালতের অনুমতি নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। ওই ফখরুদ্দীন সরকারের সময় বিএনপির ৯২ জন সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে অথচ আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ছিল ২১। এ ছাড়া বিএনপি নেতাদের পরিবারের সদস্য, অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা এবং জেলা পর্যায়ের আরও অন্তত ২০ জন নেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে দ- দিয়েছিলেন নিম্ন আদালত। আওয়ামী লীগের ৮ জন সাবেক মন্ত্রী-এমপির সাজা হয়েছিল।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আমাদের সময়কে বলেন, দমন-পীড়নের মাধ্যমে টিকে থাকতে চাইছে সরকার। এ কারণেই হয়তো বিরোধী নেতাকর্মীদের মামলায় সাজা দিতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি চাই, যে কোনো মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু মিথ্যা মামলায় কাউকে হয়রানি করা যাবে না। কাউকে সাজা দেওয়ার উদ্দেশ্যে মামলা দ্রুত শেষ করতে চাইলে তার ফল ভালো হয় না।’
গতি পেয়েছে যেসব মামলা : রমনা মডেল থানার মামলা নং ১৬ (০৩) ১৩, রূপনগর থানা ১৭ (১১) ১৩, শাহবাগ থানা ০৫ (০৪) ১৩, ভাসানটেক থানা ০৮ (১১) ১৩, সবুজবাগ থানার পৃথক ধারার দুটি মামলা ১৩ (১১) ১৩, খিলগাঁও থানার পৃথক ধারা দুটি মামলা ২৯ (১১) ১৩, মুগদা থানা ১৭ (০৩) ১৩, যাত্রাাড়ী থানা ৫৮ (০১) ১৫, সবুজবাগ থানা ০৩ (১২) ১৩ পৃথক ধারা দুই মামলা, ডেমরা থানা ০৫ (১২) ১৩ পৃথক ধারার দুটি মামলা, যাত্রাবাড়ী থানা পৃথক দুই ধারার দুই মামলা নং ১০ (১২) ১৩, যাত্রাবাড়ী থানা ৫৮ (০১) ১৫, মুগদা থানা ১৭ (০৩) ১৩, মিরপুর মডেল থানার পৃথক দুই ধারার দুই মামলা নং ৭৫ (০২) ১৩, মতিঝিল থানা মামলার পৃথক দুই ধারার দুই মামলা নং ৫৩ (০১) ১৩, পল্টন থানার পৃথক ধারার দুই মামলার নং ১২ (০৩) ১৩, ভাটারা থানার পৃথক দুই মামলা নং ০৮ (০১) ১৫, গুলশান থানার পৃথক দুই মামলা নং ১৮ (০১) ১৫, রমনা মডেল থানা মামলা নং ১৬ (০৩) ১৩, রমনা থানা মামলা নং ৫ (৩) ১৩, বাড্ডা থানার পৃথক দুই মামলা নং ২৬ (১০) ১৩। এ ছাড়া উত্তরা পশ্চিম ও পূর্ব, শাহআলী, বাড্ডা, বংশাল, ভাটারা থানার একাধিক মামলাও আছে।
কয়েকটি মামলার বিচারকাজ : ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা নং- ২৩২/২০১৬ (রমনা ৫ (৩) ২০১৩ হতে উদ্ভূত)। রমনা থানায় মামলাটি ২০১৩ সালের ১২ মার্চ দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল ২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। আসামিদের মধ্যে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা রয়েছেন।
মামলাটি বিচারের জন্য ২০১৬ সালে ৫ অক্টোবর ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আসে। মামলায় আদালত ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট অভিযোগ গঠন করেন। সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম ধার্য তারিখ ছিল প্রায় ৫ মাস পর ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি। পরবর্তী সময়ে ৪ থেকে ৫ মাস পরপর সাক্ষীর ৫টি তারিখ ধার্য হয়। ওই সময়ের মধ্যে কোনো সাক্ষী হাজির ছিল না। চলতি বছর ২৭ জুন রাষ্ট্রপক্ষ ৩ জন সাক্ষী হাজির করে। ওইদিন একজন আসামি অন্য মামলায় কারাগারে থাকায় সেদিন সাক্ষ্য নিতে পারেননি আদালত। এরপর আদালত ২ দিন পর ৩০ জুন তারিখ ধার্য করেন। সেদিন লকডাউন থাকায় আসামিরা না আসতে পারায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। এরপর আদালত ৭ দিন পর ৮ জুন দিন ধার্য করেন। কিন্তু ওইদিন করোনা সংক্রমণের জন্য আদালত বন্ধ থাকায় আদালতের কার্যক্রম হয়নি। পরে গত মাসে দেশে লকডাউন তুলে নেওয়ার পর ২৩ আগস্ট আদালতে ২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। এরপর ৩১ আগস্ট ধার্য তারিখে ১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। মামলাটিতে ১৩ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হলেও তা হয়নি। কারণ এ মামলার কার্যক্রম খারিজ চেয়ে হাইকোর্টে ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৬১ ধারামতে আবেদন করেন আসামিপক্ষ। আগামী ১২ অক্টোবর হাইকোর্টে এর শুনানি হবে। সে পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ থাকবে।
ওই আদালতে গত ৩১ আগস্টের কার্যতালিকায় দেখা গেছে, বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য হয়েছে। অথচ একই ধরনের অন্য মামলার সাক্ষীর জন্য থাকা মামলা ৬১৬/২০১০ নম্বর মামলার তারিখ রাখা হয়েছে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি এবং ৪৫৮/২০১৭ নম্বর মামলা রাখা হয়েছে ২৩ জানুয়ারি।
ঢাকার ১৪ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা নং- ৫২৯/২০১৫ (ভাটারা ৬ (১) ২০১৫ হতে উদ্ভূত)। ভাটারা থানায় ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি মামলাটি রুজু হয়। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১২ মে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান এবং সহ-দপ্তর সম্পাদক ডা. বেলাল আহমেদসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
মামলাটি বিচারের জন্য ২০১৫ সালে ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকার ১৪ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য আসে। এ মামলায় প্রায় ৩ বছরে ১৪টি ধার্য তারিখের পর আদালত ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এরপর সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম তারিখ ছিল প্রায় ৩ মাস পর ২০১৮ সালের ৯ জুলাই। পরবর্তীতে মামলাটি ৪ থেকে ৫ মাস পরপর সাক্ষীর ৯টি ধার্য তারিখ ধার্য হয়। ওই সময়ের মধ্যে কোনো সাক্ষী হাজির ছিল না আদালতে। চলতি বছর ৩ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ একজন সাক্ষী হাজির করে। এরপর আদালত ১২ মে পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।
কিন্তু ওইদিন করোনা সংক্রমণের জন্য আদালত বন্ধ থাকায় আদালতের কার্যক্রম হয়নি। পরে গত মাসের লকডাউন তুলে নেওয়ার পর গত ১২ আগস্ট ৫ জন এবং গত ২৪ আগস্ট একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। মামলাটিতে আজ ১৫ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য আছে। এ নিয়ে এক মাসের মধ্যে তিন দিন সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
২০১৩ সালের ২ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় ঘটনাস্থলে ৪ জন গ্রেপ্তার হয়। মামলাটি তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
মামলাটি বিচারের জন্য ২০১৫ সালে ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আসে। পরে মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হলেও দীর্ঘদিন রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষী হাজির করেনি। অবশ্য বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের এ মামলাটিতে একদিনেই (গত ২৬ আগস্ট) ৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। মামলায় গত ৫ সেপ্টেম্বরও সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য ছিল। ১৬ সেপ্টেম্বর আবার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ আছে। অর্থাৎ ২০ দিনের ব্যবধানে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য তিনটি তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন দায়রা মামলা নং- ৭০৫৪/২০২১ (খিলগাঁও ২৯ (১১) ২০১৩ হতে উদ্ভূত)। ধারা- ১৪৩/১৪৭/৩২৩/৩২৬/৩০৭/৩০২)। মামলাটি ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় দায়ের করা হয়। তদন্ত শেষে এক বছর পর ২০১৪ সালের ২৫ মে আদালতে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
২০১৪ সালে মামলায় চার্জশিট হলেও ৫ বছর সিএমএম আদালতেই পড়ে ছিল পলাতক আসামিদের পরোয়ানা, ক্রোক আদেশ ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির জন্য। মামলাটি এ বছর ২৩ মার্চ বিচারের জন্য ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে এবং এ আদালত থেকে প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে বদলির আদেশ হয়। প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত গত ১২ আগস্ট মামলাটি গ্রহণ করে ৩১ আগস্ট চার্জগঠনের দিন ধার্য করেন এবং ওইদিন চার্জগঠন করেন। মামলাটিতে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য আছে।
বিএনপি নেতাদের মামলা চাঙ্গা হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু আমাদের সময়কে বলেন, বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে দ্রুত নিষ্পত্তি করা হচ্ছে না। মামলাগুলো দীর্ঘদিন চলছে, এতে আসামিরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাই আসামিদের সুবিধার জন্য দ্রুত বিচার শেষ করার চেষ্টা করছি। আদালত মামলার গুরুত্ব অনুসারে কোনো মামলার বিচার দ্রুত করতেই পারেন। এতে অন্যায় কিছু নেই।
বিএনপি সমর্থক আইনজীবী এবং ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, একটি আদালতের কাছে সব মামলাই সমান। একটি মামলা সাক্ষীর জন্য ৭ দিন পর তারিখ পড়বে, আবার অন্য মামলা চার মাস পর পর তারিখ পড়বে; এটা হতে পারে না। আমরা বরাবরই বলে আসছি, সরকার নিম্ন আদালতের ওপর সব সময় এ ধরনের প্রভাব বিস্তার করে; এই ঘটনা তারই প্রমাণ।
বিএনপি নেতাকর্মীদের আইনজীবী ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ২৩২/২০১৬ নম্বর মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী ইলতুৎমিশ এ্যানি বলেন, একই ধরনের মামলা কোনোটির তারিখ পড়ছে ৭ থেকে ১৫ দিন পরপর। আবার কোনোটির ২০২২ সালের জানুয়ারিতে। তার মামলার তারিখ ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পড়ছে। তারিখ দ্রুত পড়ার বিষয়ে আদালত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মামলাগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিশেষ উদ্দেশ্যে মামলাগুলোর দ্রুত বিচারকাজ করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।