বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন

এমডির একক স্বাক্ষরেই দেওয়া হয় ৭০০ কোটি

এমডির একক স্বাক্ষরেই দেওয়া হয় ৭০০ কোটি

স্বদেশ ডেস্ক:

বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ঋণের নামে আত্মসাৎ করা হয় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল শাহরিয়ারের একক স্বাক্ষরেই দেওয়া হয় ৭০০ কোটি টাকা। সেখানে প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) সিন্ডিকেটের মূলহোতা ছিলেন উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সিদ্দিক ও জাহাঙ্গীর। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার জেরার মুখে এমন তথ্যই দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি পিকে হালদার। এসব প্রতিষ্ঠানের একটি এফএএস ফাইন্যান্স। জালিয়াতির মাধ্যমে সেখান থেকে ২০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠান দিয়ে বিভিন্ন সময় ১ হাজার ৩০০ কোটি আত্মসাৎ করেন পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা। আর এই অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, এমডি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সহযোগিতা ছিল বলে জানা যায়। এফএএস ফাইন্যান্স থেকে কীভাবে অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়, সেই অর্থ কোথায় কীভাবে বিনিয়োগ হয়েছে, দেশের বাইরে পাচার হয়েছে কিনা- কর্মকর্তাদের ডেকে এনে এসব বিষয়ই মূলত জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত ১৬ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত এফএএস ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল শাহরিয়ারসহ ২২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদকালে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ পরিচালকরা ঋণ অনুমোদনে তাদের অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন। ঋণের সেই টাকা পুনরুদ্ধারের জন্য তারা সময় প্রার্থনা করেছেন। তারা জানান, পিকে হালদার প্রায় সময়ই এমডি রাসেল শাহরিয়ারের রুমে আসতেন এবং প্রায় বোর্ড মিটিংয়েই উপস্থিত থাকতেন। যদিও পিকে হালদার প্রতিষ্ঠানের কেউ ছিলেন না। তবে এমডি রাসেল শাহরিয়ার প্রথম দিকে নিজের দোষ স্বীকার না করলেও জেরার মুখে সব জানিয়ে ক্ষমা চান। ভুল শোধরাতে ও ঋণের অর্থ আদায়ে কিছুদিন সময় চান তিনি।

ফাস ফাইন্যান্স লুটের বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। আর এই লুটের মূলহোতা উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সিদ্দিক ও জাহাঙ্গীরসহ পিকে হালদার সিন্ডিকেট। ২০১৪ সালের শেষদিকে ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের শেয়ার কিনে এর পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন তারা। এর পর কৌশলে পুরাতন কর্মচারীদের ছাঁটাই করে বসানো হয় তাদের পছন্দের লোকদের। প্রতিষ্ঠানটিতে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় রাসেল শাহরিয়ারকে, যিনি ছিলেন পিকে হালদারের পূর্বপরিচিত এবং ২০০৭ সালে তারা একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছিলেন। আর উজ্জ্বল কুমার নন্দী তার পছন্দমতো পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক নিয়োগ দেন। সিদ্দিকুর রহমান এবং জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন পিকে হালদারের বন্ধু এবং ব্যবসায়িক পার্টনার। সে হিসেবে ফাস ফাইন্যান্সের দায়িত্ব পড়ে সিদ্দিক ও জাহাঙ্গীরের হাতে।

অস্তিত্বহীন কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে হবে-সেই সিদ্ধান্ত আগেই পিকে হালদার দিয়ে দিতেন। লোক দেখানো বোর্ড মিটিং হতো এবং সেখানে এমডিকে ডেকে দ্রুত ঋণের ব্যবস্থা করতে বলে দেওয়া হতো। রাসেল শাহরিয়ার প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব যাচাই ছাড়াই এবং কোনো মর্টগেজ না নিয়ে তার একক স্বাক্ষরেই ক্রেডিট মেমো প্রস্তুত করে ঋণ অনুমোদন করে দিতেন। পরে পিকে হালদারের নির্দেশে ঋণের টাকা পাঠিয়ে দিতেন সেই সিন্ডিকেটের হিসাবে। টেকওভার করা ঋণের অর্থও টেকওভারকৃত প্রতিষ্ঠানের হিসাবে না দিয়ে পিকে সিন্ডিকেটের ব্যক্তিগত এবং বিভিন্ন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এ কায়দায় ২০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়, যার কোনো অর্থ ওই প্রতিষ্ঠানের হিসাবে যায়নি।

যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণের নামে টাকা আত্মসাৎ করেছে তার মধ্যে রয়েছে- এসএ এন্টারপ্রাইজ, মুন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, সুখাদা প্রপার্টিজ লিমিটেড, ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ, আরবি এন্টারপ্রাইজ, দিয়া শিপিং লিমিটেড, নিউটেক এন্টারপ্রাইজ, নিউট্রিক্যাল লিমিটেড, মেসার্স বর্ন, কনিকা এন্টারপ্রাইজ, দ্রিনান এ্যাপারেলস, এন্ডবি এন্টারপ্রাইজ, এমার এন্টারপ্রাইজ, জিএন্ডজি এন্টারপ্রাইজ, তামিম এন্ড তালহা, হাল ইন্টারন্যাশনাল, মেরিন ট্রাস্ট লিমিটেড, আর্থস্কোপ, এমটিবি মেরিন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877