স্বদেশ ডেস্ক:
ভয়ঙ্কর মাদক আইস (ক্রিস্টাল মেথ) ও ইয়াবাসহ রাজধানীতে ১০ ধনীর দুলালকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ঢাকা মেট্রো উত্তর বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫০০ গ্রাম আইস ও পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। জব্দকৃত আইসের বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকা। আর এই আইস থেকে কমপক্ষে এক লাখ পিস ইয়াবা তৈরি করা যেত বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ডিএনসি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই ধনীর দুলাল। কেউ কেউ নিজেই বড় ব্যবসায়ী। অনেকে সেবন করতে গিয়ে আইস কারবারে জড়িয়ে পড়েন। অনেক প্রভাবশালীর সন্তানের নামও রয়েছে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে। তবে গ্রেপ্তার অভিযান চলমান থাকায় এখনই তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করতে চায় না ডিএনসি কর্তৃপক্ষ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেনÑ রুবায়াত, রোহিত হোসেন, মাসুম হান্নান, আমানুল্লাহ, মোহাইমিনুল ইসলাম ইভান, মুসা উইল বাবর, সৈয়দা আনিকা জামান ওরফে অর্পিতা জামান, লায়লা আফরোজ প্রিয়া, তানজিম আলী শাহ ও হাসিবুল ইসলাম।
বনানী, বারিধারা, বনশ্রী ও খিলগাঁও এলাকায় গত শুক্রবার বিকাল থেকে গতকাল শনিবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় আটটি মামলা করা হয়েছে। ডিএনসি বলছে, গ্রেপ্তারকৃত সবাই প্রথমে ইয়াবা ও আইসে আসক্ত ছিলেন। সেবনের পাশাপাশি তারা নিজেরাই জড়িয়ে পড়েন কারবারে। তাদের কেউ উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান, কেউ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী, কেউবা একাধিক আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের মালিক, কেউ আবার মালয়েশিয়া থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে এসেছেন।
রাজধানীর লাভ রোডে ডিএনসি ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ে গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা মাদক ব্যবসার একটি বড় সিন্ডিকেট। অভিজাত এলাকায় তাদের বিচরণ। প্রত্যেকেই উচ্চবিত্ত শ্রেণির সন্তান অথবা ব্যবসায়ী। এক মাস আগে একটি মোবাইল নম্বর নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এ সিন্ডিকেটের সন্ধান মেলে। তারা মিয়ানমার থেকে ঢাকায় আইস নিয়ে আসে। জব্দকৃত আইস দিয়ে এক লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট প্রস্তুত করা যেত।’ তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে কেউ কেউ কৌতূহল থেকে আইস নামের মাদক সেবন করতে গিয়ে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তারা এক গ্রাম আইস ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় কেনাবেচা করত। ইয়াবার চেয়ে ২০ গুণ বেশি শক্তিশালী ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। এটি মানব মস্তিষ্কের নিউরনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।’
ডিএনসির এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘ক্রিস্টাল মেথ বা আইস দেশে সর্বপ্রথম ধরা পড়ে ২০০৭ সালে। ১০ থেকে ১২ বছর এর অস্তিত্ব পাইনি। ২০১৯ সালে আবারও এ মাদকের আবির্ভাব ঘটে। সে বছর রাজধানীর ধানমন্ডিতে আইস তৈরির কারখানার সন্ধান মেলে। যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তিনি মালয়েশিয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনার সময়ই আইস তৈরির কারিগরি জ্ঞানার্জন করেন। পরে দেশে ফিরে আইস তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন। মাদক ব্যবসায়ীরা এখন ইয়াবার পরিবর্তে আইস নিয়ে আসছে। এটি বহন যেমন সহজ, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং পরিবারের সদস্যদের ফাঁকি দেওয়াও সম্ভব। এতে করে পরিবারের সদস্য বা অভিভাবকরাও সহজে বুঝতে পারেন না এই মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে।’
ডিএনসি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার রোহিত হোসেন মালয়েশিয়া থেকে পড়াশোনা করেছেন। সেখানেই তিনি আইসের নেশায় জড়িয়ে পড়েন। এর পর দেশে ফিরে জড়ান কারবারে। উত্তরায় তার বাবা মো. আলী হোসেনের একটি বড় মার্কেট রয়েছে। এর বাইরে গ্রেপ্তার প্রত্যেকেই মাদকসেবী। সেবন করতে করতে তারাও আইস কারবারে জড়িয়ে পড়েন। তাদের প্রত্যেকের আলাদা পেশা রয়েছে। সেসব পেশার আড়ালেই তারা আইসের কারবার করছেন। এদের মধ্যে দুজন নারীও রয়েছেন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান বলেন, প্রায় এক মাস চেষ্টার পর দলটি জালে ধরা দেয়। তাদের মধ্যে প্রথমে বনানী থেকে গ্রেপ্তার হন রুবায়াত, রোহিত হোসেন ও বাবর। রোহিত মালয়েশিয়া থেকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা পড়ে দেশে ফিরেছেন। তার বাবার একটি মার্কেট রয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। তারা তিনজন বনানীতে মুসা উইল বাবরের ভাড়া ফ্ল্যাটে নিয়মিত মাদক সেবন ও কেনাবেচার কাজ করতেন।