স্বদেশ ডেস্ক:
২০১৮ সালের মে মাসে মিয়ানমারের রাখাইনে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ওপর অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ভয়াবহ নির্যাতনের কথা তুলে ধরে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। মানবাধিকার সংগঠনটির প্রকাশিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য এবং স্থিরচিত্রসহ এর পক্ষে প্রমাণ তুলে ধরা হয়। সেখানে জানানো হয়, আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি-আরসা সংখ্যালঘু হিন্দু ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ হামলা চালাচ্ছে। আরসার বিরুদ্ধে প্রায় একশ হিন্দুকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে অনেক শিশু ও নারী ছিলেন। এ ছাড়া অসংখ্য গ্রামে ডাকাতির অভিযোগও রয়েছে এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।
গত ১৮ মাস ধরে আবারও আরসার বিরুদ্ধে নতুন করে পশ্চিমা গণমাধ্যমের নজর এসেছে। অভিযোগ উঠেছে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টালিজেন্স ও তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সম্পৃক্ততা রয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্টে আরসা মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর এক হামলা চালানোর পর থেকেই সেখানে সেনা অভিযান শুরু হয়। যার কারণে পরবর্তীতে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ সময় নোবেল বিজয়ী অং সান সুচির নেতৃত্বে সেখানে গণহত্যা চালানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ তোলা হয়।
সম্প্রতি জার্মানির ডয়েচেভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কিছুদিন ধরেই আরসা বাংলাদেশের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে চরমপন্থী মনোভাব তৈরির চেষ্টা করছে। এর আগে, ২০১৯ সালের অক্টোবরে মিয়ানমার অভিযোগ তোলে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী শিবির থেকে ঘরে ফিরে যেতে বাধা দিচ্ছে আরসা। তবে সে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে বাংলাদেশ সরকার। এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসাদের কোনো কার্যক্রম চলার নজির নেই।
আরসার ব্যাপারে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো- গোষ্ঠীর নেতা আতা উল্লাহ আবু আম্মার জুনজুনি পাকিস্তানের করাচিতে জন্মগ্রহণ করেছিঁলেন এবং পরে তার বাবা-মা রাখাইনের বাসিন্দা হন। সে সময় আতা উল্লাহ সৌদি আরবে গিয়ে কেরানির কাজ শুরু করেন।
ব্রাসেলসের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে দাবি করা হয়, সৌদি আরবে বসবাসরত রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর নেতৃত্বে আরসা পরিচালিত হয় এবং এর সদস্যরা আধুনিক গেরিলা যুদ্ধ কৌশলে পারদর্শী।
তবে পাকিস্তানের মিলিটারি পোর্টাল ডিফেন্স ডট পিকে-তে জানানো হয়, যদিও এখন পর্যন্ত কেউ বলছে না আরসার লড়াইয়ে কোনো ধর্মীয় উদ্দেশ্য রয়েছে, কিন্তু ইসলামিক স্টেট বা আল কায়েদার মতো পোশাক পরতে দেখা যায় তাদের। এখনই বলা যাচ্ছে না আরসাও ভবিষ্যতে চরমপন্থী হয়ে উঠবে কিনা।