মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪, ০৭:৩০ অপরাহ্ন

ডায়াবেটিস রোগীর জুতা

ডায়াবেটিস রোগীর জুতা

স্বদেশ ডেস্ক;

ধুলোবালি-ময়লা-কাদা থেকে পা দুটো রক্ষা করে জুতা। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে জুতা আরও গুরুত্বপূর্ণ। এ রোগের একটি জটিলতা হলো স্নায়ুর ব্যাধি বা নিউরোপ্যাথি। এমন হলে পায়ের অনুভূতি শক্তি লোপ পায়। ব্যথা-বেদনা, গরম-ঠা-া কিংবা স্পন্দন অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায়। এছাড়া অনেক সময় তাদের পায়ের মাংসপেশির শক্তি এবং ভারসাম্য কমে যায়। ফলে তারা ছোটখাটো খুঁতের শিকার হন। খুঁত থেকে হয় ক্ষত বা ঘা। এসব ঘা সহজে শুকাতে চায় না। কারণ ডায়াবেটিসের জটিলতায় রোগীর তখন রক্তনালি বলা যায় সরু হয়ে গেছে। রক্ত চলাচল কমে গেছে পায়ে। চিনির মাত্রা বেশি থাকায় জীবাণুরও পোয়াবারো। ফলে এক সময় এটি আরও জটিল হয়ে ওঠে। রূপ নেয় গ্যাংগ্রিনে। পচন ধরে পায়ের মাংসপেশিতে, এমনকি হাড়ে। কখনো এ কারণে পা কেটে ফেলতে হয়। মারাত্মক এ পরিণতি থেকে রক্ষা পেতে পায়ের যত্ন করা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য জরুরি। এ ক্ষেত্রে জুতা নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়াবেটিস রোগীর জুতা হবে আরামদায়ক। বেশি আঁটোসাঁটো বা ঢিলে জুতা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর। জুতা কিনতে হবে বিকালে। সকালে হাঁটুন- বিকালে জুতা কিনুন। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের পা বিকালে সামান্য বড় হয়। এ জন্য বিকালের মাপে জুতা কিনতে হয়। জুতার ভেতর দিয়ে বাতাস ঢুকতে পারে- এমন জুতা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ভালো। এজন্য চামড়া কিংবা ক্যানভাস কাপড়ের জুতা কিনতে হবে। কোনো কারণে পা ফুলে গেলেও এসব জুতা পায়ের ক্ষতি করবে না। প্লাস্টিকের জুতা এসব রোগীর জন্য ক্ষতিকর।

জুতার সামনের দিক যেন চাপা না হয়। বেশি চাপা হলে আঙুলের শীর্ষভাগে ক্ষত হতে পারে। সরুমুখী জুতা আঙুলে ব্যথা কিংবা কালশিটে দাগ সৃষ্টি করতে পারে। আঙুলে বিকৃতিও ঘটাতে পারে। সামনের দিকে খোলামেলা জুতাও আবার ঝুঁকিপূর্ণ। এতে আঙুলে আঘাত লাগতে পারে। হাইহিলও ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর।

জুতার সঙ্গে অবশ্যই মোজা পরতে হবে এবং তা হতে হবে সুতি কাপড়ের। মোজা বেশি টাইট হওয়া যাবে না। পরিচ্ছন্ন হতে হবে। এ জন্য প্রতিদিন ধুয়ে নিতে হবে।

জুতা পরার আগে ভালো করে দেখে নিতে হবে জুতার ভেতর ইটের টুকরা, আলপিন, পেরেক আছে কিনা। এমনকি বিষাক্ত পোকা-মাকড়ও থাকতে পারে। এ জন্য ডায়াবেটিস রোগীর জুতা পরার আগে অবশ্যই পরখ করে দেখতে হবে। পাঁচ-ছঘণ্টার বেশি সময় জুতা পরে থাকা উচিত নয়। খুব প্রয়োজন হলে বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করে নিতে হবে। খালি পায়েও হাঁটা যাবে না। ঘরেও না। খালি পায়ে হাঁটলে আলপিন, পেরেক কিংবা ধারাল কোনো দ্রব্য পায়ে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। যাদের পায়ে ইতোমধ্যে ক্ষত বা আলসার হয়ে গেছে, তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ ধরনের জুতা। যদি পায়ের পাতার সামনের দিকে বৃদ্ধাঙ্গুলের নিচে আলসার হয়ে থাকে, তবে এমন জুতা পরতে হবে যাতে ক্ষতে কোনো চাপ না পড়ে। জুতার ছোল হতে হবে ভিন্ন ধাঁচের। এখন ডায়াবেটিস রোগীর জন্য স্পেশাল জুতা বাজারে পাওয়া যায়। ক্ষত বা আলসারের অবস্থান অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন জুতা পাওয়া যায়।

ডায়াবেটিসের এমন এক জটিলতা হতে পারে, যখন পায়ের পাতার ছোট ছোট হাড় একেবারেই ধসে যায়। সব হাড্ডি ভেঙেচুরে ব্যাগে পরিণত হয়। এর নাম চারকোট জয়েন্ট। এ রকম রোগীর জন্য রয়েছে আরেক ধরনের বিশেষ জুতা। তাই ডায়াবেটিস রোগীকে জুতা নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে।

লেখক : ক্লাসিফাইড মেডিসিন স্পেশালিস্ট

ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877