বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৬:৩৯ অপরাহ্ন

এই দুরবস্থা বিশৃঙ্খলা বাড়াবে

এই দুরবস্থা বিশৃঙ্খলা বাড়াবে

প্রযুক্তির উন্নয়ন অপরাধের তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা সহজ করে দিয়েছে। আগে চাঞ্চল্যকর অপরাধ মামলা উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে নিষ্পত্তি করা কঠিন হতো। অপরাধীকে শত ভাগ নিশ্চিত করে শনাক্ত করা যেত না। বিচার ও শাস্তি নিয়ে নানা দ্বিধা তাই সবার মধ্যে কাজ করত। এখন গোপন ক্যামেরা এবং মানুষের সাথে থাকা মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে বেশির ভাগ অপরাধের ভিডিওচিত্র ধারণ করা যাচ্ছে। সেটি আবার একাধিক কপি করে নিশ্চিতভাবে সংগ্রহ করা যায়। বিচারের সময় তা আদালতে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এমনকি কখনো সেটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে প্রকৃত অপরাধ উদঘাটন করা যাচ্ছে। এ কারণে একটি অপরাধ করে সে অপরাধের দায় আগের মতো অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া যাচ্ছে না। দুঃখজনক হচ্ছে, অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনার ভিডিওচিত্র ভাইরাল হওয়ার পরও সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমন প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে দেখা যাচ্ছে।
সামাজিক মাধ্যমে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা সদর বসুরহাটে দুই অস্ত্রধারী প্রকাশ্যে অস্ত্র চালানোর ছবি দেখা গেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে লক্ষ করে তাদের সশস্ত্র আক্রমণের ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দুই ব্যক্তি গুলি চালিয়ে ধাওয়া করছে অন্যদের। তারা এভাবে অস্ত্র চালাতে কোনো ধরনের রাখঢাক করছে না। একজন পরে তার হাতের অস্ত্র লুকালেও অন্যজন বেশ কিছুক্ষণ তার কাছে থাকা অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে সন্ত্রাস করেছে। এরা দু’জন বসুরহাট পৌরসভার মেয়রের ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগী’ বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ করা হয়েছে। মেয়র বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই। ঘটনাটি ঘটেছে ১৩ মে। ওই দুইজনের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কয়েক গণ্ডা করে মামলা রয়েছে। তবে প্রকাশ্যে অপরাধ করার পরও এদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ নেই।
গত রোববার রাজধানীর পল্লবীতে কয়েকজন সন্ত্রাসী প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংস কায়দায় খুন করেছে একজনকে। এই হত্যাকাণ্ডের ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় এক বাহিনীর দু’সদস্য রামদা দিয়ে অন্য একজনকে কোপাচ্ছে। আশপাশের মানুষ চিৎকার কান্নাকাটি করছে। খুনিরা তার সারা শরীর কুপিয়ে ছিন্ন ভিন্ন করেছে শিশুসন্তানের সামনেই। শেষ পর্যন্ত খুনিরা দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে সেখান থেকে চলে যায়। এ ঘটনায় ওদের চিনতে কোনো অসুবিধা নেই। খুন হওয়া ব্যক্তির মা ঘটনার পাঁচ দিন আগে থানায় জিডি করেছিলেন জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে। এর পরও স্থানীয় খুনি গ্যাংয়ের হাত থেকে তার ছেলেকে রক্ষা করা গেল না। এ নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে। মূল আসামিরা রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। অপরাধ সংঘটনের স্পষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকার পরও তাই বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা, যেখানে মূল আসামি গ্রেফতার হয়নি। এ ধরনের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় অপরাধীকে বিচার করার দীর্ঘসূত্রতা মানা যায় না।
এর আগে গত বছরের আগস্টে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ক্ষমতাসীন দলের শাখা সভাপতি মীরানুল ইসলাম এক নারী ও তরুণী মেয়েকে বেদম মারধর করে রশি দিয়ে বেঁধে রাস্তায় ঘুরিয়েছেন। বর্বর এই কর্মকাণ্ডের কর্তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির থাকলেও বিচারের চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয় প্রাধান্য পেয়েছে। দেশে প্রায় প্রতিদিন নানা ধরনের অপরাধ কার্যক্রমের এ ধরনের ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে যেখানে অপরাধীদের শনাক্ত করতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। অর্থাৎ গুরুতর এসব অপরাধ যারা সংঘটিত করছে, তাদের অপরাধ সংঘটনের ব্যাপারে কারো কোনো সন্দেহ নেই। তার পরও তাদের বিরুদ্ধে আইনের স্বাভাবিক গতি দেখা যায় না। নোয়াখালীতে শাসক দলের দুই নেতার উত্তেজনার মধ্যে সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষের লাশ পড়ছে। কিন্তু অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দৃশ্যমান নয়। একই অবস্থা সারা দেশে বিরাজ করছে। অপরাধী যখন চিহ্নিত, আইন যখন প্রস্তুত; সেখানে বিচারের বাণী এভাবে নিভৃতে কাঁদলে নিঃসন্দেহে সামাজিক বিশৃঙ্খলা বাড়বে এবং মানুষের মধ্যে খুনখারাবিসহ অন্যায় অনাচার করার প্রবণতা আরো ঊর্ধ্বমুখী হবে এতে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877