শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
আজ কবিগুরুর ১৬০তম জন্মবার্ষিকী

আজ কবিগুরুর ১৬০তম জন্মবার্ষিকী

স্বদেশ ডেস্ক:

‘উদয়-দিগন্তে ঐ শুভ্র শঙ্খ বাজে/মোর চিত্ত-মাঝে/চির-নূতনেরে দিল ডাক/পঁচিশে বৈশাখ।’ নিজের পূরবী কাব্যগ্রন্থে এভাবেই বাঙালির জীবনে বৈশাখের অবিস্মরণীয় দিনটির কথা বলেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সময়ের পথপরিক্রমায় আবারও ফিরে এসেছে সেই পঁচিশে বৈশাখ। আজ কবিগুরুর ১৬০তম জন্মবার্ষিকী।

রবীন্দ্রনাথ ছিলেন উদার বিশ্ববোধের কবি, বাঙালির গৌরবের প্রতিষ্ঠান, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষের অন্যতম শীর্ষ রূপকার। তিনি তার কবিতা ও গানে আজীবন প্রেম, প্রকৃতি, মানবতার বন্দনা করেছেন। সব জরাজীর্ণতাকে ধুয়ে-মুছে তারুণ্য ও নতুনের জয়গান গাইতেন তিনি। ১৮৬১ সালের (১২৬৮ বঙ্গাব্দ) আজকের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদাসুন্দরী দেবী। তিনি ছিলেন পিতা-মাতার চতুর্দশ সন্তান।

দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বিশ্বকবির ১৬০তম জন্মবার্ষিকীতে তার অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, জগৎ-সংসারকে গভীরভাবে জানতে তরুণ প্রজন্ম রবীন্দ্রসাহিত্যে অবগাহন করবে, রবীন্দ্রচর্চায় থাকবে ব্যাপৃত- যা কেবল আচারসর্বস্ব নয়, জীবনসর্বস্ব।

প্রধানমন্ত্রীও কবির স্মৃতির উদ্দেশে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে কালোত্তীর্ণ কবির সৃষ্টিকে প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। রবিঠাকুরের অমর সৃষ্টি ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।” প্রধানমন্ত্রী কবিগুরুর ১৬০তম জন্মবার্ষিকীর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে রবীন্দ্রনাথের রয়েছে অসামান্য অবদান। নিজের গল্প, কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প ও অসংখ্য গানের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে পরিপূর্ণতা দান করেছেন তিনি। বিশ্বের দরবারে বাঙালিদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতেও শিখিয়েছেন কবিগুরু। গল্পে, উপন্যাসে, কবিতায়, সুরে ও বিচিত্র গানের বাণীতে, অসাধারণ সব দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ প্রবন্ধে, সমাজ ও রাষ্ট্রনীতিসংলগ্ন গভীর জীবনবাদী চিন্তাজাগানিয়া লেখায়, এমনকি চিত্রকলায়ও রবীন্দ্রনাথ চির নবীন।

তিনি ছিলেন একাধারে কবি, নাট্যকার, কথাশিল্পী, চিত্রশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, ছোটগল্পকার ও ভাষাবিদ। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি চিত্রকর হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। তার ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ এবং অন্যান্য গদ্যসংকলন জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশ হয়। কবিগুরুর সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প এবং ১ হাজার ৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা প্রকাশ হয়েছে ৩২ খন্ডে রবীন্দ্র রচনাবলি নামে। যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খ-ে প্রকাশ হয়েছে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে।

এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়ও অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তার কাছ থেকেই আমাদের জাতীয় সংগীত ও ‘বাংলাদেশ’ নামের বানানটি নেওয়া হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান বাঙালি তথা বাংলাদেশিদের যাপিতজীবনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে।

১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে যান বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে। ১৯০২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ৩০ বছর বয়সে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী মারা যান। এরপর ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মেয়ে রেণুকা, ১৯০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর মারা যান ছোট ছেলে শমীন্দ্রনাথ। দীর্ঘ রোগভোগের পর বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শ্রাবণ (ইংরেজি ১৯৪১ সালের ৬ আগস্ট) কলকাতার পৈতৃক বাসভবনেই ইহলোক ত্যাগ করেন বাঙালির এই মহান কবি। ৮০ বছরের জীবনে রবীন্দ্রনাথ তার জন্ম এবং মৃত্যুকে একাকার করে তুলেছেন অজস্র অমরতার শাশ্বত বার্তায়।

প্রতিবছর নানা সংগঠন বিভিন্ন আয়োজনে পঁচিশে বৈশাখ উদযাপন করে। কিন্তু এবার করোনা মহামারীর কারণে কবির জন্মদিনে থাকছে না কোনো আয়োজন। তবে ভার্চুয়ালি গান, কথা, আবৃত্তি, নৃত্যের মধ্য দিয়ে দুই বাংলায় কবিকে স্মরণ করবেন তার সুহৃদ ও শুভাকাক্সক্ষীরা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877