শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ অপরাহ্ন

স্মরণে গল্পের জাদুকর

স্বদেশ ডেস্ক:

আজ থেকে ঠিক ৭৫ বছর আগে জন্মেছিলেন গল্পের জাদুকর, নিজের সৃষ্টি দিয়ে যিনি ছুঁয়ে গেছেন বহু মানুষের জীবন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে গড়েছিলেন একান্তই স্বকীয় ঘরানা। ‘বইবিমুখ’ জাতির মধ্যে পাঠের অভ্যাস বাড়ানোরও বড় কৃতিত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। সেই জনপ্রিয়, আলোচিত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন তাই সব বিবেচনায়ই উদযাপনের বিষয়।
বেঁচে থাকলে হুমায়ূন আহমেদের ৭৫তম জন্মদিন কিভাবে উদযাপিত হতো তা অনুমান করা কিছুটা কঠিন। তবে হিমু ও মিসির আলীর স্রষ্টাকে নিয়ে এই দিনে যে বেশ মাতামাতি হতো তা জোর দিয়েই বলা যায়। দুই বাংলার সব সাহিত্যিক মিলিয়ে যাঁর জনপ্রিয়তা ছিল ঈর্ষণীয়, তাঁর ক্ষেত্রে তো এমনটাই হওয়ার কথা।

হুমায়ূন আহমেদ যেখানেই হাত দিয়েছেন, সেখানেই সোনা ফলেছে।

গল্প, উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্র, গান লেখা ও তাতে সুর দেওয়া সব জায়গায়ই ছিল তাঁর স্বচ্ছন্দ পদচারণ। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের মাধ্যমে তাঁর আত্মপ্রকাশ। নিম্নমধ্যবিত্ত এক পরিবারের আনন্দ-বেদনা এই উপন্যাসের উপজীব্য। হুমায়ূন আহমেদের পরের বেশির ভাগ উপন্যাসই নগরজীবনের পটভূমিতে রচিত।

তবে গ্রামীণ জীবনের চিত্র অঙ্কনেও সমান পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ বারবার তাঁর লেখায় উঠে এসেছে। ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, রূপকথা, শিশুতোষ, কল্পবিজ্ঞান, আত্মজৈবনিক, কলামসহ সাহিত্যের বহু শাখায় ছিল তাঁর বিচরণ ও সিদ্ধি।স্বজন ও কাছ থেকে দেখা লোকেরা বলেছেন, মানুষ হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন সাধারণ, সম্মোহক ও কৌতুকপ্রবণ। মজা করে কাউকে কাল্পনিক গল্প বলে অপ্রস্তুত করতে কিংবা হাসির খোরাক করতে ভালোবাসতেন।

গাছপালা, পশু-পাখি, ফুল-ফলের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ ভালোবাসা। কিছুদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ের পর সব মায়া কাটিয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই পৃথিবী ছেড়ে যান হুমায়ূন আহমেদ। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনায় তাঁর জন্ম।

প্রয়াণের এক দশক পরও পাঠকনন্দিত হুমায়ূন। এখনো একুশে বইমেলায় তাঁর বইয়ের ব্যাপক বিক্রি হয়। আড্ডায় অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে তর্কবিতর্ক জমে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তাঁর শিল্পভুবন নিয়ে হচ্ছে উচ্চতর গবেষণা।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মন্তব্যটি স্মরণীয়। হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণের পর তাঁর ৬৪তম জন্মদিন উদযাপনের অংশ হিসেবে বের হয় ‘হুমায়ূন আহমেদ স্মারকগ্রন্থ’। স্মারকগ্রন্থের সম্পাদনা পরিষদের সভাপতি আনিসুজ্জামান এর মুখবন্ধে  লেখেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ যে কালজয়ী হবে, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ আমাদের নেই। এর কারণ নিজের কালকে সে প্রবলভাবে আলোড়িত করতে সমর্থ হয়েছিল।’

হুমায়ূন আহমেদের বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, মা আয়েশা ফয়েজ গৃহিণী। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব লব্ধপ্রতিষ্ঠ কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক। পেশাজীবনে হুমায়ূন আহমেদ শিক্ষকতায় ছিলেন দীর্ঘদিন। সাহিত্যে অবদানের জন্য হুমায়ূন আহমেদ একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদকসহ বহু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন।

আজ সোমবার গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে হুমায়ূন আহমেদের ৭৫তম জন্মদিন। নুহাশপল্লীর তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল ইসলাম বুলবুল কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, মোমবাতি প্রজ্বালন, সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও কেক কাটার মধ্য দিয়ে লেখককে স্মরণ করবে পরিবার, স্বজন ও ভক্ত পাঠকরা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877