স্বদেশ ডেস্ক:
বিশ্বে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ কোটি ৫৯ লাখ ৬২ হাজার ছাড়িয়েছে, মোট মারা গেছে ৩২ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে এখনো আক্রান্তের দিক থেকে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। বিশেষ করে গত মার্চ-এপ্রিল থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর ভারতে বিপর্যয়কর অবস্থা চলছে।
প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। আগের দিন সকাল থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে বিশ্বরেকর্ড মোট ৪ লাখ ১২ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। যা এর আগের সর্বোচ্চ রেকর্ডের চেয়ে অন্তত ১০ হাজার বেশি। এ ছাড়া মারা গেছেন প্রায় চার হাজার রোগী।
ভারতের এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তানের মতো জনবহুল প্রতিবেশী দেশগুলো। গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও)। গত বুধবার চলমান মহামারী নিয়ে এক রিপোর্টে ডব্লিউএইচও বলেছে, গত সপ্তাহে বিশ্বের মোট করোনা আক্রান্তের ৪৬ শতাংশই ও মোট মৃত্যুর ২৫ শতাংশই হয়েছে ভারতে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী শনাক্তের পরও আশঙ্কার কথা হচ্ছে, ভারতে বেশ কয়েক দিন ধরে পরীক্ষার সংখ্যা কমছে। দেশটিতে গত ৩০ এপ্রিল রেকর্ড রোগী শনাক্তের দিন সর্বোচ্চ ১৯ লাখ ৪০ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল। কিন্তু গত সোমবার এর পরিমাণ প্রায় তিন লাখ কমে দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৬০ হাজারে। আর গত মঙ্গলবার তা কমে হয়েছে ১৫ লাখ ৪০ হাজার। ফলে তিন দিনে টেস্টে পজিটিভ শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪.৪ শতাংশ, যা গত সপ্তাহের একই তিন দিনের তুলনায় অন্তত দুই শতাংশ পয়েন্ট বেশি।
এর মধ্যে এত মৃত্যু ও বিপর্যয়কর অবস্থার পর অবশেষে দেশজুড়ে লকডাউন আরোপের চিন্তা করছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। দিল্লির সরকারি মহলের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, লকডাউনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শক সংস্থা নীতি আয়োগের সদস্য জাতীয় কোভিড টাস্কফোর্সের প্রধান ভি কে পল বৃহস্পতিবার বলেছেন, লকডাউনের বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। সংক্রমণে রাস টানার সরকারি পদক্ষেপ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রয়োজনে পরিস্থিতি বুঝে এলাকায় এলাকায় নৈশ কারফিউ জারি, কিছু কিছু এলাকায় কড়া বিধিনিষেধ আরোপ ও জেলাগুলোর সঙ্গে শহর ও মফস্বলের নিয়মিত যোগাযোগের ওপর কড়া নজর রাখতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যগুলোকে।
তিনি বলেন, এটা করতে হয়েছে কারণ পরীক্ষায় কোভিড পজিটিভ হওয়ার হার ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে। আর দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর আইসিইউ শয্যার ৬০ শতাংশই ভরে গেছে। তবে যদি আরও বেশি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয় তা হলে কী কী করণীয় সেগুলো নিয়েও কথাবার্তা চলছে।
এদিকে ভারতের বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশজুড়ে যে বিপর্যয়কর অবস্থা তৈরি হয়েছে তার পেছনে দায়ী করোনা ডাবল মিউট্যান্ট ভেরিয়েন্ট। ভাইরাসের এ ধরনটির উপস্থিতির কারণেই পরিস্থিতি এত প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। বি.১.৬১৭ ভেরিয়েন্ট নামে পরিচিত করোনার এ ধরন ভারতের কয়েকটি রাজ্যে অনেক বেশি সংখ্যায় পাওয়া গেছে। দেশটির ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের এক কর্মকর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, ডাবল মিউট্যান্টের সঙ্গে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সম্পর্ক পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা হয়নি।
আবার এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারত সরকারের শীর্ষ বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টাদের আরেকটি দল বলেছেন, করোনার নতুন ধরন দেশে যেভাবে ছড়িয়েছে তাতে করোনার তৃতীয় ঢেউ থামানো অসম্ভব। ফলে এখন থেকেই সরকারের উচিত টিকার শক্তি জোরদার ও টিকাদান কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো। যদিও কখন এই তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানতে শুরু করবে সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নন তারা।
গত বুধবার ভারতের শীর্ষ চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানী কে বিজয়রাঘবন এ সংক্রান্ত একটি সরকারি বিবৃতিতে বলেন, এ মুহূর্তে ভাইরাস যে হারে ছড়াচ্ছে, তাতে স্পষ্ট সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আসতে আর বেশি দেরি নেই। তবে কবে এবং কীভাবে এ ঢেউ আছড়ে পড়বে তা এখনো স্পষ্ট নয়। ভাইরাসের যে নতুন ধরন দ্রুত সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাকে আটকাতে টিকা আরও উন্নত করতে হবে। যদিও তাতে তৃতীয় ঢেউ ঠেকানো যাবে কিনা সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন।