সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৮ অপরাহ্ন

সরকারি প্রণোদনা কার্যকর হচ্ছে না

সরকারি প্রণোদনা কার্যকর হচ্ছে না

বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯-এর প্রভাবে দেশের অর্থনীতি যে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে তা খুব সহসাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে এমন নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়ে আর্থিক খাতের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু তার কার্যকারিতা সামান্যই। বিভিন্ন জরিপে এমনই তথ্য উঠে আসছে। জানা যায়, ব্যবসায়-প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই সরকারের দেয়া প্রণোদনার ঋণসুবিধা পায়নি। শিল্প খাতের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রণোদনার অর্থ পেয়েছে বেশি পরিমাণে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের এক যৌথ জরিপ থেকে জানা যায়, দেশের ৬৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা পায়নি। প্রণোদনার ঋণসুবিধা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মাত্র ২২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। এর অর্থ হলো, ৭৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ঋণ পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত। এমনকি ৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানেই না সরকার এমন কোনো সুবিধা তাদের জন্য দিচ্ছে। এর আগেও একাধিক জরিপে এমন তথ্য জানা গেছে। যেমনÑ কৃষি খাতে দেয়া প্রণোদনার অতি সামান্যই বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। সব মিলিয়ে দৃশ্যটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, প্রণোদনা কার্যক্রম দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে খুব বেশি ভূমিকা রাখছে না।
সানেম ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের জরিপে একটি তথ্য উঠে এসেছে যে, কণ্ঠস্বর অত্যন্ত জোরালো বলে অন্যদের তুলনায় প্রণোদনার অর্থ বেশি পায় তৈরী পোশাক শিল্প। আমরা দেখেছি, করোনা সংক্রমণের একেবারে শুরু থেকেই গার্মেন্ট খাতের শিল্পপতিরা সোচ্চার ছিলেন সরকারি সুবিধা আদায়ে। সেটি তারা পেয়েছেন। কিন্তু যেসব শর্তে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল তা তারা রক্ষা করেননি। শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না এবং তাদের বেতন-ভাতা অব্যাহত রাখতে হবে এমন শর্ত মেনে অর্থ নিলেও তারা সে সব শর্ত লঙ্ঘন করেছেন এমন উদাহরণ প্রচুর। ফলত তারা কেবল প্রণোদনার অর্থ পেয়েই লাভবান হননি, একই সাথে শ্রমিক ছাঁটাই করে এবং তাদের মজুরি কমিয়ে দিয়েও বিপুল অর্থ সাশ্রয় করেছে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের শিল্পমালিকদের সঙ্কীর্ণ মনের চিত্রটি উন্মোচিত হয়েছে। চলমান দুঃসময়ে সামাজিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে তাদের উচিত ছিল গরিব শ্রমিক শ্রেণী এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখা। কিন্তু পরিবর্তে তারা কিভাবে আরো লাভবান হওয়া যায় সেই সুযোগ খুঁজছেন।
একই অবস্থা অন্য শিল্পপতিদেরও। দেশের বৃহত্তম রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ রাতারাতি করোনা চিকিৎসার হাসপাতাল বানিয়ে সারা বিশ্বের মিডিয়ার বাহবা কুড়িয়েছে। কিন্তু এর পেছনে সরকারি তথা জনগণের কি বিপুল পরিমাণ অর্থের সংশ্লিষ্টতা ছিল এবং তা থেকে বসুন্ধরা গ্রুপ কী পরিমাণ মুনাফা তুলে নিয়েছে সে তথ্য এখনো প্রকাশ পায়নি। হাসপাতালটি রাতারাতি গায়েবও হয়ে গেছে। করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ শুরু হলে গায়েব হয়ে যাওয়া সেই হাসপাতালের খবর ফলাও হয়।
এ দিকে ভারত থেকে করোনার টিকা এনে প্রতি টিকায় সব খরচ বাদ দিয়েও প্রায় ৭৭ টাকা মুনাফা করেছে দেশের আরেক বৃহৎ শিল্প গ্রুপের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। এ পর্যন্ত ৭০ লাখ টিকা আনতে পেরেছে কোম্পানিটি। আর তাতেই তাদের তিন মাসে লাভ হয়েছে ৩৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সরকার, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মার মধ্যে সম্পাদিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় তিন কোটি টিকা আমদানির এই চুক্তি নিয়ে অস্বচ্ছতা ছিল প্রথম থেকেই। চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশের দাবি ছিল বিভিন্ন মহল থেকে। সেটি করা হয়নি। পরে টিকা আসাই বন্ধ হয়ে যায়। ভারত টিকা রফতানি বন্ধ করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে অস্বচ্ছ ওই চুক্তির বিরুদ্ধে সমালোচনা তীব্র হয়।
কিন্তু দেখার বিষয় হলোÑ বাংলাদেশের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর অর্থলোভ ও অমানবিকতার বিষয়টি। করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্বের সব দেশে সমাজের ধনবান অংশ যখন সরকারি ফান্ডে বিপুল অর্থ সহায়তা দিচ্ছে তখন বাংলাদেশের ধনিক শ্রেণী এই মহামারীকে মুনাফা বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা ভুলে গিয়ে এরা অমানবিক আচরণ করছে। এই প্রবণতা একটি সমাজের জন্য শুধু বিপজ্জনক নয় রীতিমতো ধ্বংসাত্মক।
এসব বিবেকহীন বিত্তবান মানুষ আদৌ কখনো মানবিক হবে কি?

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877