স্বদেশ ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়েল রিসোর্টে হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধারের পর উপজেলার মোগরাপাড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তার অনুসারীরা।
আজ শনিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হেফাজতের কর্মীরা জড়ো হয়ে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে আধাঘণ্টা বিক্ষোভ করে চলে যান। এ সময় মহাসড়কে যান দেড় ঘণ্টা চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে এক নারীকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন মামুনুল হক। খবর পেয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রিসোর্টের নিচে অবস্থান নেন।
বিষয়টি জানতে পেরে সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম মোস্তাফা, থানার উপপরিদর্শক (তদন্ত) তবিদুর রহমানসহ একদল পুলিশ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে রিসোর্টের পঞ্চম তলায় তার কক্ষের সামনে যায়। মামুনুল হকের কক্ষের ভেতরে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা প্রবেশ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মামুনুল হকের কক্ষে প্রবেশ করার পর ওই নারী বাথরুমে প্রবেশ করে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। এ সময় পুলিশের সামনে মামুনুল হক গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আমার সঙ্গে অবস্থান করছিলেন আমার দ্বিতীয় স্ত্রী আমেনা তৈয়বা।’
পরে ওই কক্ষে প্রবেশ করেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোশারফ হোসেন। তিনি মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় খবর পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক ও হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা রয়েল রিসোর্টের ফটকের বাইরে অবস্থান নেয়। ‘মামুনুল হকের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, এ ধরনের নানা স্লোগান দেন মামুনুল হকের অনুসারীরা। হেফাজত নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা রিসোর্টের দ্বিতীয় ফটক দিয়ে চলে যান।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে হেফাজত কর্মীরা স্থানীয় বিভিন্ন সড়ক দিয়ে লাঠি হাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা রির্সোটের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে রিসোর্টের নিচ তলাসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর শুরু করেন। পরে পুলিশ মামুনুল হককে রিসোর্টের অভ্যর্থনা কক্ষে নিয়ে আসে।
ওই সময় হেফাজত কর্মীরা মামুনুল হককে পুলিশের কাছ থেকে ‘ছিনিয়ে’ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে করতে স্থানীয় মোগরাপাড়া চৌরাস্তার পাশে হাবিবপুর ঈদগাহ ও মসজিদে নিয়ে যান। ঈদগাহে মাঠে মামুনুল হক হেফাজত কর্মীদের সামনে বক্তব্য দেন।
মামুনুল হক বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে নিয়ে সোনারগাঁয়ে বেড়াতে এসেছিলাম। মানুষের ভিড় এড়াতে স্থানীয় কোনো নেতাকর্মীকে বিষয়টি অবগত করিনি। আমার সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে খারাপ আচরণ করেছে। সরকারের গভীর ষড়যন্ত্রের এটি একটি অংশ। এসব ষড়যন্ত্র করে কেউ আমাদের আন্দোলন দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, মামুনুল হক ওই নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করায় এবং ওই নারী মামুনুল হককে স্বামী দাবি করায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ভাঙচুরের সঙ্গে যারা জড়িত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।